বড় ম্যাচটা দেখার পর খুব আফসোস হচ্ছিল। ওয়ার্ড্রোবে আমার একটাও জার্সি না থাকার জন্য!
সেই কবে খেলা ছেড়েছি। একুশ-বাইশ বছর হয়ে গেল। সত্যি বলতে, জার্সি আর থাকবেই বা কী করে? তবে এক পিস-ও থাকলে সেটাই সকাল হলে অভিজিৎকে উপহার পাঠাতাম। লালরিন্দিকার খুব ভাল একটা গোলে ইস্টবেঙ্গল জেতায় ওকেই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ দেওয়া হল বটে। কিন্তু আমার বিচারে ম্যাচের সেরা অভিজিৎ মণ্ডল। ইস্টবেঙ্গলের জয়ের পিছনে পঁচাত্তর ভাগ অবদান ওদের গোলকিপারের। ঠিক আছে, আমার জার্সি দিতে পারলাম না। কিন্তু ভাল একটা গোলকিপিং গ্লাভস কিনে সোমবারই উপহার দেব অভিজিৎকে।
‘অভিজিৎ দেওয়ালে’ এই ভাবেই আটকে গেল বাগানের আক্রমণ।
আমার মতে রবিবারের বড় ম্যাচটা আসলে দু’দলের দুই গোলকিপারের মধ্যে হল। শিল্টন পালকেও মোহনবাগান গোলপোস্টের নীচে দারুণ লাগল। ইস্টবেঙ্গল জিতলেও পজিটিভ গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছে কিন্তু মোহনবাগান। আর সেখানে অভিজিৎ অন্তত তিনটে অবধারিত গোল সেভ করেছে। যার মধ্যে প্রথমেই রাখব, একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় এরিকের থেকে সেভটা। গোলকিপারের একেবারে আদর্শ আউটিং। এর পর কাতসুমি যে বলটা মাইনাস করবে বলে গোললাইন অবধি পৌঁছে গিয়েও শট নিয়েছিল! অভিজিতের এই সেভটার মূল্য অনেকে না-ও বুঝতে পারে। কিন্তু নিজে একটুআধটু গোলকিপিং করেছি বলে জানি, গোললাইন থেকে ও রকম সুইং করে আসা আচমকা বল বাঁচানো ঠিক কতটা কঠিন। আর অভিজিতের তিন নম্বর সেভ ওডাফার বিপজ্জনক হেড।
সেই তুলনায় শিল্টন আমার চোখে সিওর গোল সেভ করেছে সুয়োকাকে একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় রুখে দিয়ে। সত্যি বলতে ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচে মাঝমাঠ শাসন করলেও পজিটিভ গোলের সুযোগ বলতে ওই একবারই পেয়েছিল। আর শিল্টন যে গোলটা খেয়েছে সেটা ও বাঁচাতে পারলে সেই সেভকে চোখ বুজে অকল্পনীয় বলতাম। লালরিন্দিকা ছেলেটা পঁচিশ-তিরিশ গজের ও রকম শট নিয়ে থাকে। কিন্তু সেটা জানা থাকলেও বেশির ভাগ শটের ডিরেকশন গোলের এমন দুরূহ কোণে থাকে, কিপারের পক্ষে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। এ দিনও দ্বিতীয় পোস্টের কোণ দিয়ে চোখের পলকে বল জালে! এক বন্ধু সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করল, ভাস্কর গাঙ্গুলি থাকলে কি গোলটা হত? আমার উত্তর সেই একই যে গোলকিপারই এটা সেভ করতে পারবে সেটা অকল্পনীয় সেভ তকমা পাবে।
হতাশ শিল্টন।
দু’জনের গোলকিপিংই এ দিন আমার মন ছুঁয়ে গেলেও এগিয়ে রাখব অভিজিৎকেই। অনেকটা। বহু দিন ধরে ওকে চিনি। সেই বালুরঘাট থেকে কলকাতায় এসে সল্টলেকে সুশীল ভট্টাচার্যের কাছে অভিজিতের ট্রেনিং নেওয়া থেকেই। ছেলেটার দুর্ভাগ্য, ইন্ডিয়া খেলতে পারেনি। কিন্তু দেশের কোনও গোলকিপারের চেয়ে এতটুকু কমতি নয় ও। বোধহয় বছর ছত্রিশ বয়স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাহসী মানসিকতা, ডেডিকেশন আর একশোভাগ ফিটনেসের জোরে এখনও দাপটে চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ফুটবলেও বয়স্ক গোলকিপারদের ভাল খেলার যেটা রেসিপি। সেই দিনো জফের জমানা থেকে হালে বুফোঁ পর্যন্ত। অভিজিৎ সবচেয়ে ভাল গোললাইন কিপিংয়ে। আউটিংও এখন দারুণ করছে। এএফসি সেমিফাইনাল থেকে এ দিন এরিকের বিরুদ্ধে ওয়ান-টু-ওয়ান, সবই তো অভিজিতের আউটিং-ম্যাজিকে রক্ষা পেল ইস্টবেঙ্গল গোল!
ধুস, কেন যে আমার একটাও জার্সি আর নেই!
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.