|
|
|
|
সৌরভকে দেখেই জার্সি ওড়ানোর
ইচ্ছেটা হয়েছিল, বলে দিলেন ডিকা
তানিয়া রায় • কলকাতা |
গোল করার পরেই জার্সি খুলে মাথার উপর ঘোরাতে ঘোরাতে দৌড় লাগালেন লাল-হলুদ গ্যালারির দিকে। ফিফা আইনে শাস্তির পরোয়া না করেই। খেলার মধ্যেই জার্সি খোলার জন্য হলুদ কার্ডও দেখলেন। তবু ভ্রুক্ষেপহীন!
ম্যাচের পর বলে দিলেন, “সৌরভও তো লর্ডসে জেতার পর এ ভাবেই জার্সি খুলে উড়িয়েছিল। তখন ওকে নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল। আর নিয়ম ভেঙে জার্সি খোলার জন্য আমি না হয় কার্ড দেখেছি।”
২০০২-এ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পর লর্ডসের ব্যালকনিতে ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জার্সি ওড়ানো আজও আলোচনার বিষয়। সে সময় লালরিন্দিকার বয়স মাত্র দশ। কিন্তু বাংলার ‘মহারাজ’-এর আবেগে সে দিন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মিজোরামের ‘কিং’। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, ফুটবলার হিসাবে কোনও দিন বড় সাফল্য পেলে এ ভাবেই জার্সি খুলে ওড়াবেন। “এই স্পেশ্যাল ম্যাচটায় প্রথম গোল করার আনন্দই আলাদা। গোলের পর জার্সি উড়িয়ে ছোটবেলার স্বপ্নপূরণও করে ফেললাম। কার্ড দেখতে হওয়ায় তাই কোনও আফসোস নেই। আমার গোলে দল জিতেছে এটাই আসল,” হাসতে হাসতে বলছিলেন লাল-হলুদের আদরের ডিকা।
সতীর্থ লালরিন্দিকার প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে করা বিশ্বমানের গোল দেখার পর ইস্টবেঙ্গলের এক নম্বর স্ট্রাইকার চিডি বলেই ফেললেন, “অসাধারণ গোল। অসম্ভব চাপের মধ্যে এ রকম বিশ্বমানের গোল করা আদৌ সহজ নয়। হ্যাটস অফ টু হিম।” |
|
ছবি শঙ্কর নাগ দাস। |
এর আগে যুবভারতীতে এএফসি কাপে টেম্পাইন রোভার্সের বিরুদ্ধে এ রকমই বাঁ পায়ে পঁচিশ গজের শটে গোল করেছিলেন লালরিন্দিকা। সে বারও তাঁর গোলেই জয় পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এএফসি সেমিফাইনালেও কুয়েত এসি-র বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচেও প্রায় অনুরূপ একটি গোল ছিল তাঁর। গতবার ফেড কাপ সেমিফাইনালেও চার্চিলের বিরুদ্ধে একই ভাবে গোল করে ফাইনালে তুলেছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। তবে রবিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে করা গোলকেই এগিয়ে রাখছেন মরসুমের প্রথম ডার্বির ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। “এখনও অবধি এটাই আমার জীবনের সেরা গোল।” যে গোল তিনি উৎসর্গ করছেন বান্ধবীকে। লাজুক মুখে বললেন, “ও আমার ভাল-খারাপ সব সময়ই উজ্জীবিত করে এসেছে। আমার পাশে থেকেছে। এই গোল আমার বান্ধবীকেই উৎসর্গ করলাম।”
লালরিন্দিকার বাবা শিক্ষক। দু’বোনের মাঝে তিনি একমাত্র ভাই। তাই বাড়িতে তাঁর আদরও একটু বেশি। কিন্তু পড়াশুনা বাদ দিয়ে ছেলে দিন-রাত ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছে এটা প্রথম দিকে মানতে পারেনি লালরিন্দিকার পরিবার। আবার আদরের ছেলের পা থেকে জোর করে বল কেড়ে নিতেও পারেননি ডিকার বাবা। এ দিন ড্রেসিংরুমে ফিরেই বাড়িতে ফোন করেছিলেন। উচ্ছ্বসিত লালরিন্দিকা বলেন, “বাড়ির সবাই খেলা দেখেছে। সবাই প্রচণ্ড খুশি।”
স্বভাবতই ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে ডিকাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলেন চিডি-সুয়োকা-খাবরারা। শ্যাম্পেন নেই। তাই বোতলের জলেই ভিজিয়ে দেওয়া হয় দিনের নায়ককে। অধিনায়ক মেহতাব বললেন, “ডিকার গোলের জন্যই তো ডার্বি জিতলাম। বিশ্বমানের গোল করেছে ও।” সুয়োকা আবার বলে গেলেন, “আজ ডিকারই দিন।” ম্যাচের অন্যতম সেরা অভিজিৎ মণ্ডলও বলেন, “এমন গোল খুব কম হয়। এককথায় দুরন্ত।” কোলাসো অবশ্য এমন দিনেও লালরিন্দিকাকে ডেকে সতর্ক করেছেন। যাতে একুশ বছরের তরুণের মধ্যে বিন্দুমাত্র আত্মতুষ্টি না আসে। লাল-হলুদের নতুন কোচ বলে দিয়েছেন, “ভাল গোল করেছ। তবে মাথায় রাখবে এটা সবে শুরু।”
কোলাসো যা-ই বলুন, মর্গ্যান থেকে ফালোপা হয়ে আর্মান্দো— সবার জমানাতেই ইস্টবেঙ্গলের ‘মুশকিল আসান’ লালরিন্দিকা। সমর্থকরা তো তাঁকে এখন ডাকবেনই‘ম্যান উইথ গোল্ডেন ফুট!’ |
|
|
|
|
|