একটা গোল আর পাঁচটা সেভ ছাড়া কিছু পাইনি

ইস্টবেঙ্গল-১ (লালরিন্দিকা)
মোহনবাগান-০
কী ভাবলাম আর কী দেখলাম!
প্রচুর হাইপ ওঠা ডার্বিতে দর্শনীয় ফুটবলের আশা করেছিলাম। কিন্তু তিরানব্বই মিনিটে পাঁচটা সেভ আর একটা গোল ছাড়া কিছুই অসাধারণ দেখতে পেলাম না। বরং যা খেলা হল, তাতে হতাশা আরও বেড়ে গেল।
আসলে ভারতীয় ফুটবলের এই স্পেশ্যাল ম্যাচটার আকাশছোঁয়া চাপ কাটিয়ে উঠতে পারল না দু’দলের ফুটবলাররাই। এখনও মনে আছে, আমাদের সময় হাবিবদা, আকবরদা, গৌতম, পিন্টুরা কী ভাবে মাঠের বাইরে উদ্বুদ্ধ করত। আমি, প্রসূন, অজিত চক্রবর্তী, দিলীপ পালিত, কেষ্ট মিত্ররা তখন মোহনবাগানে সবে এসেছি। হাবিবদা বলতেন, “মাঠে যখন একবার নেমে পড়বে, তখন উল্টো দিকে কে খেলছে ভাববেই না। শুধু ভাববে তুমি ফুটবলার, বিপক্ষে যে, সে-ও ফুটবলার।” যে কোনও দলের মনোবল বাড়াতে হলে দলের সিনিয়র ফুটবলারদের আরও তৎপর হতে হয়। ওডাফা-ডেনসনরা এতটা তৎপর বলে মনে হল না!
তবে শুধু সিনিয়র ফুটবলারদের দোষ দিলে বোধহয় অবিচার করা হবে। বড় ম্যাচে ফুটবলারদের উত্তেজনা কমানোর আসল টোটকা তো কোচের জানা থাকা উচিত। অরুণ ঘোষ তো টিমমিটিংয়েই আমাদের তাতিয়ে দিতেন। করিম ওডাফাদের কী বলেন আমার জানা নেই। করিম তিন মাস সময় পেয়েও একটা টিমকে দাঁড় করাতে পারল না। পিঠ বাঁচাতে মুখোশের আড়ালে একটা কথা আওড়ে যাচ্ছে, ‘মোহনবাগানের তরুণ দল। কী করব!’ কী করবেন মানে? আমি তো মণীশ মৈথানি, মণীশ ভার্গব, ধনরাজনদের নিয়ে দু’বার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিলাম। মর্গ্যানের সেই দলের সঙ্গে আর্মান্দোর এই দলের খুব একটা পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। বরং সেই দলে পেনের মতো ফুটবলার ছিল। সেরা ফর্মের টোলগে ছিল। তুলনা টানলে এই ইস্টবেঙ্গল হয়তো একটু দুর্বলই। তার উপর ডার্বির আগেই কোচ বদল হয়েছে। নতুন কোচ-ফুটবলারদের মধ্যে পুরো বোঝাপড়া তৈরি হওয়া মুশকিল। তবু যে ফুটবলটা মেহতাবরা খেলল, তাতে আগামী দিনে উন্নতির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আর্মান্দোর মধ্যে সেই ক্ষমতাও আছে।

যে গোলে ডার্বির ভাগ্য ঠিক হয়ে গেল। ছবি: উৎপল সরকার।
ম্যাচটায় ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের ফুটবলাররাই দু’দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল। সুয়োকা পেন না হলেও, ওর মধ্যে ভাল ফুটবল দেখতে পাচ্ছি। এক জন মিডফিল্ডারের যে ট্রেডমার্ক মুভগুলো থাকা উচিত যেমন অফ দ্য মার্ক গতি, ড্রিবল, বল কন্ট্রোল তিনটেই আছে। সেই তুলনায় কাতসুমিকে নিয়ে এত মাতামাতি হলেও ওর খেলায় অভিনব কিছু পেলাম না। বরং পরিকল্পনাহীন দৌড়াদৌড়ি করে গেল। করিম ওকে আর সাবিথকে উইং দিয়ে ব্যবহার করল। ‘ব্ল্যাঙ্কেট ডিফেন্ডার’ মানে সোজা কথায় ‘ব্লকার’ কিংশুক। এ সবের নিটফল, মোহনবাগানের উইং-প্লে বলে আর কিছু থাকল না। জায়গার ফুটবলার জায়গায় না খেললে যা হয় আর কী! সেখানে সুয়োকা-মেহতাব-খাবড়া-ডিকা নিজেদের মধ্যে অজস্র পাস খেলায় ইস্টবেঙ্গল অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। যার ফসল লালরিন্দিকার গোল। এএফসি কাপেও এ ধরনের দূরপাল্লার শটে গোল করেছে। বাঁ পা-টা ভাল। তবে ডান পা-টা সে ভাবে সচল নয়। দু’টো পা সমান তালে চলতে শুরু করলে, ভবিষ্যতে জাতীয় দলের বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে মিজোরামের ছেলেটা।
মোহনবাগান একটা গোল খেলেও ওদেরই রক্ষণ-সংগঠনে ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় এগিয়ে রাখব। চিডি-মোগার মতো বিদেশি স্ট্রাইকারদের যে দক্ষতায় জীবনের প্রথম ডার্বিতে নামা প্রীতম-শৌভিকরা আটকাল, তাতে এই দুই তরুণ বাঙালি ডিফেন্ডারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। গতি, কভারিং, তাড়া করা কিংবা ট্যাকল করার সময়জ্ঞান দেখে ভাল লাগল। সেখানে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে অনেক ফাঁকফোকর দেখা গিয়েছে। আর্মান্দোর সৌভাগ্য, ওডাফা এই ম্যাচে পুরো ফিট ছিল না! দু’দলের গোলকিপিংই খুব ভাল হয়েছে। অভিজিৎ আর শিল্টন, দু’জনেরই আউটিং খুব ভাল। প্রথম জন যদি তিনটে ভাল সেভ করে থাকে তো, অন্য জনও গোটাদুয়েক ভাল বাঁচিয়েছে।
সব মিলিয়ে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে মেরামতির প্রয়োজন আছে। আর মোহনবাগানে? অবিলম্বে ‘প্ল্যান এ’-টু-‘ই’ ভুলে করিমকে নজর দিতে হবে টিম কম্বিনেশনে।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, হরমনজ্যোৎ, মেহতাব (তুলুঙ্গা), কেভিন (মোগা), ডিকা, সুয়োকা (গুরবিন্দর), চিডি।

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, রোউইলসন (আদিল), আইবর, শৌভিক, কিংশুক, ডেনসন, কাতসুমি, সাবিথ (রাম), মুরান্ডা (শঙ্কর), ওডাফা।

জরিমানা হতে পারে মোহনবাগানের
ম্যাচ শুরুর আগে দু’দলের ফুটবলাররা বড় একটা ব্যানার তুলে ধরেছিলেন দর্শকদের উদ্দেশে। তাতে লেখা ছিল, ‘ফেয়ার প্লে। সে নো টু ভায়োলেন্স’। ম্যাচে দু’একবার ছাড়া ওডাফা-মেহতাবরা মাথা গরম করেননি। উপচে পড়া গ্যালারিও ছিল শান্ত। কিন্তু মোহনবাগান গ্যালারি থেকে গোলের আগে বেশ কিছু বাজি ফাটানো হয়। গোল হওয়ার পর বাজি ফাটে গ্যলারির লাল-হলুদ অংশ থেকে। ইস্টবেঙ্গল জেতার পরও লাল-হলুদ পতাকা লাগানো গ্যালারি থেকে প্রচুর বাজি এবং পটকা এসে পড়ে মাঠে। পুলিশ কিছু কৌটো বোমাও আটকও করে। আই লিগের নিয়মানুযায়ী এ জন্য সংগঠক মোহনবাগানকেই জরিমানা দিতে হবে। তবে সবটাই নির্ভর করছে ম্যাচ কমিশনার দিল্লির জে রবিশঙ্করের উপর। জানা গিয়েছে, ম্যাচ কমিশনার বাজির কথা রিপোর্টে লিখছেন। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর বললেন, “রিপোর্টে যদি বাজি ফাটানোর কথা লেখা থাকে তা হলে জরিমানা করা হবে সংগঠকদের। কারণ বাজি আটকানোর দায়িত্ব সংগঠকদেরই।” এ দিন যুবভারতীতে খেলা দেখতে আসার সময় বাগান সমর্থকদের একটি ম্যাটাডোর উল্টে যায়। আহত তিন সমর্থককে পাঠানো হয় হাসপাতালে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.