রাস্তায় সার দিয়ে চলছে বড়-বড় তেল ট্যাঙ্কার, গাড়ি। দু’ধারে একের পর এক কারখানা। তারই মধ্যে হাঁপাচ্ছে হলদিয়া শহরের শতাধিক বছরের প্রাচীন পরানচক শিক্ষানিকেতন। মূলত পরিবেশগত সমস্যার কথা ভেবেই বছর ছ’য়েক আগে স্কুলটিকে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য জমি ও টাকা দিয়েছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। কিন্তু সেই টাকা কম পড়ায় নতুন ভবন তৈরির কাজ আটকে মাঝপথে। স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া ও অভিভাবকরা।
পরানচকের বাসিন্দা অবিনাশচন্দ্র জানার পরিবারের দান করা ছ’বিঘা জমিতে ১৯০৭ সালে গড়ে উঠেছিল পরানচক শিক্ষানিকেতন। ওই জমির মধ্যেই স্কুল ভবন-সহ খেলার মাঠ, পুকুর, চাষের জমি ছিল। পরবর্তী কালে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল লিঙ্ক রোডের ধারে কল-কারখানার সারিতে বেমানান হয়ে পড়ে স্কুলটি। কল-কারখানার ধোঁয়া তো রয়েছেই। সামনের ব্যস্ততম রাস্তা পেরোতে গিয়ে বেশ কিছু পড়ুয়ার মৃত্যুও হয়েছে। অভিভাবক দেবব্রত জানা, দিলীপ প্রধান বলেন, “দু’লেনের ওই রাস্তা নিয়েই আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা। এত গাড়িঘোড়া চলে যে ছেলে-মেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি পাই না।” এ ছাড়াও স্কুলের একমাত্র নলকূপে মাঝে-মধ্যেই জল থাকে না বলে সমস্যা হয়। স্কুলের বর্তমান ভবনটিরও জীর্ণদশা। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক কমলেশ বেরা বলেন, “স্কুলে একাধিক সমস্যা থাকায় অভিভাবকরা আর ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে ভর্তি করতে চাইছেন না। ক্রমশ পড়ুয়া সংখ্যা কমছে।” স্কুলটিকে সরানোর ভাবনা-চিন্তা শুরু হয় বছর ছ’য়েক আগে। এইচডিএ-র সিইও পি উলগানাথন বলেন, “টাকা ও জমি দিয়ে স্কুলটি অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল এইচডিএ।” ২০০৭ সালে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ স্কুল ভবন-সহ ৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। তার পরিবর্তে বর্তমান স্কুল থেকে চার কিলোমিটার দূরে পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুর মৌজায় তিন একর জলা জমি ও ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে স্কুলের ভবন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর আরও টাকা দেয় এইচডিএ। এইচডিএ-র চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য এইচডিএ প্রায় এক কোটি টাকা এবং পর্যাপ্ত জমি দিয়েছে।”
এ ছাড়াও সর্বশিক্ষা মিশন থেকে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য ন’লক্ষ টাকা, রান্নাঘর তৈরির জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, স্কুলের শতবর্ষে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ও দু’টি শিল্প সংস্থার কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা মিলেছে। তবুও স্কুল তৈরির কাজ টাকার অভাবে আটকে মাঝপথে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপনারায়ণ জানার কথায়, “জলা জমি ভরাট করতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। নতুন দোতলা ভবনটির জন্য আড়াই কোটি টাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বাম প্রভাবিত স্কুল পরিচালন কমিটিকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, টাকার অভাব হবে না। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি বদলায়। ইমারতি সামগ্রীর দাম বাড়ায় প্রকল্পের খরচ তিন কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত এক কোটি ষাট লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে স্কুলবাড়ির। আরও দেড় কোটির মতো দরকার।” পুরনো ভবনের জায়গাও আর স্কুলের নয়। স্কুলের পাশে ধানসিঁড়ি পেট্রোকেমিক্যালসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) দেবাশিস সেন জানান, কিছুটা জমি তাদের। কারখানা সম্প্রসারণের জন্য তা প্রয়োজন। স্কুল পরিচালন সমিতির সহ-সভাপতি সুকুমার দোলই বলেন, “শিল্পসংস্থা স্কুলের এলাকা ছেড়ে দিতে বারবার তাগাদা দিয়েছে। ২০১৩-র মধ্যেই জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা। কী করব, কে জানে!” |