সম্পাদকীয় ২...
কালবৈশাখী
ক মহানায়ক স্বেচ্ছায় ময়দান ছাড়িয়া গিয়াছেন সপ্তাহখানেক পূর্বে। অন্য জন, দীর্ঘ যুদ্ধে পরাভূত হইয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারাইলেন। সত্য, এই দ্বিতীয় জনকে লইয়া ভারতবাসী কখনও তেমন মাথা ঘামায় নাই। যে দীর্ঘ সময় জুড়িয়া তিনি দাবা -বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট ছিলেন, তাহার মহিমাও নায়ক -কাঙাল ভারতীয় মনকে নাড়া দিতে পারে নাই। তিনি ভারতীয় না কি স্পেনের নাগরিক, এই প্রশ্নটিও উঠিয়াছে। তবু, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব বলিয়া কথা ! হাতছাড়া হইয়া যাওয়ায় দাবার সহিত সুদূরতম সম্পর্কহীন ভারতীয়রও হৃদয় ফুঁড়িয়া একটি দীর্ঘশ্বাস উঠিয়া আসিল বইকী। কিন্তু, মনখারাপের কোনও কারণ নাই। কালবৈশাখী আসিলে যাহা কিছু জীর্ণ, পুরাতন, তাহা উড়িয়া যায় প্রকৃতির তেমনই নিয়ম। রবীন্দ্রনাথ তাহা নির্মম প্রজ্ঞায় মনে করাইয়া দিয়াছিলেন। ম্যাগনাস কার্লসেন এক কালবৈশাখী। তরুণ, দীপ্ত, দাবা -দুনিয়ার ছকের বাহিরে থাকা এক জন। তিনি কালবৈশাখীর মতোই, যাঁহাকে সম্পূর্ণ বোঝা, অনুমান করিয়া ফেলা আধুনিকতম প্রযুক্তিরও সাধ্যাতীত থাকিয়া গিয়াছে। তিনি দাবা খেলেন, ফুটবলও। তিনি মডেলিং করেন, অভিনয় করেন। কারপভ -আনন্দের দুনিয়ায় তিনি বেমানান। আনন্দ বলিয়াছেন, তিনি হয়তো কার্লসেনকে বুঝিতে পারেন নাই, নিজেকেও নহে। উক্তিটি গভীর, কিন্তু এই না -বোঝা অস্বাভাবিক নহে। কার্লসেনের অস্তিত্ব জুড়িয়া একুশ শতক। শুধু চরিত্র নহে, তাঁহার খেলার ধরনও অচেনা। যে গতিতে তাঁহার উত্থান, দাবা -বিশ্ব শাসনের চূড়ান্ত রাজদণ্ড তাঁহার হাতে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা ছিল। আনন্দের সাম্রাজ্যের ভিত ২০০৮ হইতেই নড়িতেছিল। ২০১৩ নভেম্বরে চেন্নাই কেবল তাহার ভাঙিয়া পড়িবার সাক্ষী রহিল। আনন্দেরও দুঃখিত হইবার কারণ নাই। তিনি মধ্য -চল্লিশে পৌঁছাইয়াছেন। দীর্ঘ দিন সসম্মান খেলিয়াছেন। সময় আসিলে সকলকেই সরিয়া যাইতে হয়। তাঁহার সময় আসিয়াছে।
দাবা খেলায় বোর্ডে সম্ভাব্য পরিস্থিতির সংখ্যা প্রায় ১০১২০। সংখ্যাটি কত বড়, তাহা বুঝিতে তুলনা প্রয়োজন। বিগ ব্যাং -এর পর এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে অতিবাহিত ন্যানোসেকেন্ডের সংখ্যা ১০২৬। গোটা দুনিয়ায় পরমাণুর মোট সংখ্যা ১০৭৫। অর্থাত্ , এক অর্থে দাবা বোর্ডে সম্ভাব্য পরিস্থিতির সংখ্যা অসীম, যে কোনও মানুষের হিসাবের অতীত। কিন্তু মানুষ যাহা পারে নাই, মনুষ্যসৃষ্ট কম্পিউটার তাহা বহু দূর করিয়াছে। দাবা খেলার প্রস্তুতিতে কম্পিউটারের ব্যবহার এখন সর্বজনীন। কম্পিউটারের এই রমরমা এবং আনন্দের উত্থান সমসাময়িক। বস্তুত, যাহা আনন্দের সর্বোত্তম গুণ হিসাবে স্বীকৃত, অর্থাত্সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্বন্ধে আনন্দের নিখুঁত ধারণা এবং সেই পরিস্থিতিতে নিজের খেলাটি গুছাইয়া লওয়া, তাহাও বহু দূর এই কম্পিউটার প্রযুক্তির আশীর্বাদে। কম্পিউটার তাঁহাকে সম্ভাব্য পরিস্থিতির ছক দিয়াছে, তিনি আপন প্রতিভাবলে পরিস্থিতি সামলাইবার পথ খুঁজিয়াছেন। কিন্তু, কার্লসেন সেই ছকের বাহিরে। তাঁহার খেলায় মাঝেমধ্যেই ঝলসাইয়া উঠিয়াছে অচেনার দীপ্তি। তাঁহার খেলার ধরন বিশ্লেষণে ববি ফিশারের নাম যে বারে বারেই উঠিয়া আসিতেছে, তাহা অকারণ নহে। কার্লসেন সেই মহারথীর তুল্য কি না, তাহা ভবিষ্যত্বলিবে। তেইশ বছর বয়সি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সম্মুখে দীর্ঘ ভবিষ্যত্ কিন্তু, কম্পিউটার নামক অসীম ক্ষমতাধর কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট যন্ত্রের সহিত -যান্ত্রিক মানুষের লড়াই জারি থাকিল। মানুষ এখনই হারিতেছে না। কার্লসেন সেই লড়াইয়ের প্রতীক। এই লড়াইটিই হয়তো বিংশ শতকের সহিত একবিংশের ফারাক করিয়া দিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.