সম্পাদকীয় ১...
পূর্বের সূর্য
য়তনে বড় না হইলে সম্ভবত ভারতের মন উঠে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশালবপু ছিল, তাহার সহিত ভারতের সখ্যও ছিল প্রশ্নাতীত। একবিংশ শতকে বিশালবপু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিতও দোস্তি জমিয়াছে। চিনের সহিত সম্পর্কটি কোন দিকে বাঁকিবে, তাহা এখনও নিশ্চিত নহে বটে, কিন্তু এই ক্ষেত্রেও আয়তনটি লক্ষণীয়। সমস্যা হইল, আয়তনে ভারতের মনপসন্দ হইবার মতো দেশ দুনিয়ায় বেশি নাই, এবং ভারতের চোখে যে দেশগুলি দৈর্ঘ্য -প্রস্থে অকিঞ্চিত্কর, একুশ শতকের অর্থনীতিপ্রধান কূটনীতির সমীকরণে সেই দেশগুলি রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব এবং দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স হইতে দক্ষিণ কোরিয়া, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের ন্যায় দেশগুলির প্রতি ভারতের আচরণ ঐতিহাসিক ভাবে দুইটি ঘরানার হয় উদাসীন, নয় উদ্ধত। নরসিংহ রাও জমানায় পূর্বাস্য হইবার প্রক্রিয়া শুরু হইলেও যথেষ্ট অগ্রসর হয় নাই। তাহার কারণ, মানসিকতা বদলায় নাই। আশার কথা, অধুনা বদলাইতেছে। এশিয়া -প্যাসিফিক অঞ্চলে আপন গ্রহণযোগ্যতা বাড়াইতে ভারত উদ্যোগী। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ভারত সফরে আসিলেন। জাপানের সম্রাট আসিতেছেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রীও সম্ভবত অচিরেই আসিবেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টও আসিতে পারেন। পূর্ব এশিয়ায় ভারতের এই নূতন মনোযোগের প্রধান কারণ অবশ্যই চিন। নেপাল হইতে শ্রীলঙ্কা, চিন যে ভাবে ভারতের চারিপাশে নিজের উপস্থিতি বাড়াইয়াছে, তাহাতে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার সংকেত স্পষ্ট। স্বভাবতই ভারত উদ্বিগ্ন। পূর্ব এশিয়ায় উত্সাহের উত্ সেখানেই।
চিনের উপস্থিতি এবং তাহার ভবিষ্যত্পদক্ষেপ সম্বন্ধে অনিশ্চয়তা যে কেবল ভারতকেই উদ্বিগ্ন করিয়াছে, তাহা নহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এশিয়া -প্যাসিফিক অঞ্চলে আগ্রহী হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এশিয়ার এই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ককে কেবলমাত্র চিনের প্রেক্ষিতে দেখিলে তাহা সুযোগের অপব্যবহার হইবে। ভারতের নিকট ইহা বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াইবার সুবর্ণসুযোগ। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে, চিনকে বাদ রাখিলে, পারস্পরিক বাণিজ্য নামমাত্র পূর্ব এশিয়ার সহিত দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য আরও কম। অথচ, ভারতের ন্যায় উদীয়মান আর্থিক শক্তির নিকট এই বাজারে প্রবেশ করিতে পারিলে বড় লাভ। এই ক্ষেত্রে চিনের উপস্থিতি দুই ভাবে জরুরি এক, এই দেশগুলি চিনের দাপট কমাইতে এশিয়ার অন্য শক্তি ভারতকে আরও বেশি জায়গা করিয়া দিতে ইচ্ছুক; দুই, চিনের সহিত সহযোগিতায় বাংলাদেশ -মায়ানমার -ভারত -চিন বাণিজ্যপথ তৈরি হইলে তাহার বাণিজ্যিক সুফল সুদূরপ্রসারী। অতএব, এশিয়ার দেশগুলির সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করিবার এই সুযোগটিকে দুই হাতে আঁকড়াইয়া ধরাই বিধেয়।
ভারতীয় কূটনীতির পূর্বায়ণ অগ্রসর হইলে ভারতের একটি রাজ্য বিপুল লাভবান হইতে পারে। তাহার নাম পশ্চিমবঙ্গ। পূর্ব এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য বাড়িলে কলিকাতাই হইবে সেই বাণিজ্যের সিংহদুয়ার। এই শহরের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়িবে তো বটেই, বৈদেশিক বিনিয়োগের ঢল নামিতে পারে। চিনের গুয়াংদং প্রদেশটির দৃষ্টান্ত এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য। দেং জিয়াও পিং -এর অর্থনৈতিক সংস্কারের দৌলতে এই প্রদেশের দুইটি শহর, গুয়াংঝাও এবং শেনজেন, বিশ্বমানের হইয়া উঠিয়াছে। বন্দর শহর এবং বাণিজ্যিক পথের মুখ বলিয়াই। পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য কলিকাতা শহরটিকেও বদলাইয়া দিতে পারে। অবশ্য তাহার জন্য কলিকাতাকেও নিজেকে বদলাইতে হইবে। পরিকাঠামো চাই, কর্মসংস্কৃতি চাই, এবং সর্বাগ্রে চাই আধুনিক শহর হইয়া উঠিবার মানসিকতা। এক কথায়, চাই পরিবর্তন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.