চুরি গিয়েছিল একটি মোটরবাইক। তদন্তে নেমে এমনই আরও ত্রিশটি মোটরবাইক চুরির সন্ধান পেল পুলিশ। শুধু তাই নয়, শহর থেকে মোটরবাইক চুরির আন্তর্জাতিক চক্রেরও হদিস মিলেছে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানান, ইতিমধ্যেই চুরিচক্রের চাঁই-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বর মাসে কালীঘাট থানায় একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ জমা পড়ে। ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক মাসে দক্ষিণ শহরতলি-সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে একই কায়দায় একটি নির্দিষ্ট সংস্থার আরও কয়েকটি মোটরবাইক চুরি গিয়েছে। এর পরেই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতার কর্তারা।
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, চুরি যাওয়া মোটরবাইকগুলি খড়দহের ওই সংস্থার একটি সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সারানো হত। এর পরেই পুলিশ ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “চোরাই মোটরবাইকগুলির ইঞ্জিনের নম্বর দেওয়া হয় সংস্থাকে। বলা হয়, সার্ভিস সেন্টারে এই নম্বরের মোটরবাইক এলে খবর দিতে।” সেই মতো, শুক্রবার সংস্থার কাছ থেকে খবর পেয়ে খড়দহের ওই সার্ভিস সেন্টারে যান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে চুরিচক্রের পাণ্ডা চন্দন মোহান্তি ওরফে দীপক-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও এক জনকে। |
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যে পাঁচ জনকে এই চুরির ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বাইক চুরির যে পাণ্ডা, সেই দীপক মোহান্তির আসল নাম চন্দন মহান্তি। আদতে সে পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য সে নিজের নাম ভাঁড়িয়ে বাইক চুরি করত।
পুলিশের জেরায় চন্দন ওরফে দীপক জানিয়েছে, কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় তারা ঘুরে বেড়াত আর সঙ্গে থাকত দু’টি ‘মাস্টার- কি’ বা চাবি। এই চাবি দু’টি দিয়ে যে কোনও মোটরবাইকেরই লক খোলা যায় বলেও পুলিশকে সে জানিয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, তারা বাইক চুরির জন্য ফাঁকা জায়গা বেছে নিত। একটু নিরিবিলি এলাকায় কোনও মোটরবাইক দেখতে পেলেই তারা ওই দু’টি চাবি দিয়ে তার লক ভেঙে ফেলত। আর তার পরই সেই লক ভাঙা বাইক নিয়ে চম্পট দিত। সেগুলি নিয়ে যাওয়া হত ব্যারাকপুর, খড়দহ, সোদপুর এলাকার বিভিন্ন সার্ভিস সেন্টার বা গ্যারাজে। সেখানে বাইকগুলি সারানোর পাশাপাশি নতুন নম্বর প্লেট লাগিয়ে সেগুলিকে পাচার করা হত বাংলাদেশে।
মোটরবাইক চুরির তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চক্রটি সব থেকে বেশি বাইক চুরি করেচে পর্ণশ্রী থানা এলাকা থেকে। সেখান থেকে প্রায় ১২টির মতো মোটরবাইক তারা চুরি করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়াও হরিদেবপুর, তারাতলা, কালীঘাট এবং ভবানীপুর থেকেও অনেকগুলি বাইক চুরি করেছে বলে পুলিশকে অভিযুক্তরা জানিয়েছে।
বাইক এই চুরির ঘটনায় গত শুক্রবার রাতেই পুলিশ চক্রের পাণ্ডা দীপক ওরফে চন্দন মোহান্তি এবং আরও তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রবিবার ভোররাতে খড়দহ থেকে ওই চক্রের আরেক সদস্য সুদাম রবিদাসকে (৪৫) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, পুলিশ তা-ও তদন্ত করে দেখছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই পাচারকারীরা প্রধানত বাংলাদেশ থেকে চোরাই মোটরবাইক রফতানি করার ‘অর্ডার’ পেত এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাইক পাচারের ‘টার্গেট’ পূরণ করতে হত তাদের। |