‘টার্গেট’ ধরে কাজ। ঠিক যেন সেলসম্যান।
বাংলাদেশ থেকে আসত রফতানির ‘অর্ডার’। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যেত টার্গেট। দিনে অন্তত ৩-৪টে মোটরবাইক চাই-ই চাই। না হলে জোগানে কম পড়বে। আর সেই টার্গেট পূরণের তাগিদেই গত ক’মাস ধরে এ শহরের অলিগলি থেকে ‘ভ্যানিশ’ হচ্ছিল একের পর এক মোটরবাইক।
মোটরবাইক চুরি চক্রের পাণ্ডা-সহ কয়েক জন দুষ্কৃতীকে শুক্রবার রাতে ধরে টার্গেট-ভিত্তিক এমনই রফতানি-আমদানির কাহিনি জানল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে হরিশ মুখার্জি রোড থেকে একটি মোটরবাইক চুরি যায়। কালীঘাট থানায় ওই বাইক চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে খড়দহের একটি সার্ভিস সেন্টারে ‘লক’ ভাঙা একটি মোটরবাইক সারানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ অবশ্য ওই সর্ভিস সেন্টারে গিয়ে বাইকটির হদিস পায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইক সংস্থাকে পুরো ঘটনাই জানানো হয়েছিল। শুক্রবার সকালে পুলিশের কাছে খবর আসে ওই সংস্থার সোদপুর সার্ভিস সেন্টারে ফের লক ভাঙা একটি বাইক সারাতে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতেই কালীঘাট থানার সাব ইনস্পেক্টর অনির্বাণ হালদার সেখানে গিয়ে ওত পাতেন। এক ব্যক্তি ওই সার্ভিস সেন্টার থেকে বাইকটি নিয়ে যেতে এলে তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, দীপক মোহান্তি নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সে ২০ হাজার টাকায় ওই বাইকটি কিনেছেন।
এর পরেই তল্লাশি চালিয়ে মোটরবাইক পাচারকারী চক্রের চাঁই দীপককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, ব্যারাকপুরে একটি গ্যারাজ রয়েছে তার। সেখানে হানা দিয়েই আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্তদের বাকিদের নাম সমর রাজবংশী, নীলাদ্রি চক্রবর্তী এবং গৌতম ঠাকুর। দীপকের বাড়ি বেহালার পর্ণশ্রীতে। বাকিরা খড়দহের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, ওই গ্যারাজ থেকে দু’টি বাইক আটক করা হয়েছে। ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, বাইক নিয়ে যাতায়াতের সময়ে দীপককে সঙ্গে দিত সমর। নীলাদ্রি থাকত গ্যারাজের দায়িত্বে। নম্বর প্লেট বদল ও জাল নথি তৈরির দায়িত্ব ছিল গৌতমের উপরে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই বাইক পাচারকারীরা প্রধানত বাংলাদেশ থেকে চোরাই মোটরবাইক রফতানি করার ‘অর্ডার’ পেত। সে চাহিদা পূরণ করতে টার্গেট ধরে কাজ এগোতে হত তাদের। সময় ধরে করতে হত কাজ।
মোটরবাইক পাচারকারী এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত বলে অনুমান পুলিশের। বাকিদের খোঁজে শনিবার রাতেও বিভিন্ন এলাকায় চলে পুলিশি তল্লাশি। পুলিশ জানায়, এর আগে বাইকের ইঞ্জিন চুরি করে ভুটভুটিতে লাগানো হত। মোটরবাইক পাচারকারী এই চক্রের ধরার পড়ায় পুলিশ জানাচ্ছে, এখন আর যন্ত্রাংশ নয়, পুরো বাইকটিই চুরি করে পাচারের কারবারে লেগেছে তারা। ধৃতদের শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। |