হাওড়া সেতু ও স্ট্র্যান্ড রোডের উপরে গাড়ির চাপ কমাতে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে হাওড়া স্টেশনে যাওয়া-আসার জন্য দু’টি নয়া রাস্তা (র্যাম্প) বার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশদ নকশা তৈরি করেছে ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি)।
এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি নেওয়া হয়েছে। তবে মূল কাজ শুরু করার আগে সরকারি ভাবে অনুমতি নিতে হবে কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষের।”
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়া সেতু দিয়ে প্রতি দিন প্রায় তিন লক্ষ গাড়ি যাতায়াত করে। প্রস্তাবিত র্যাম্প দু’টি তৈরি হলে হাওড়া সেতুর চাপ যেমন কমবে, তেমনই কলকাতা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা হাওড়ায় যাওয়ার সময়ে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কলকাতায় যাওয়া-আসা করতে সুবিধা হবে হাওড়াবাসীরও।
কী ভাবে বিদ্যাসাগর সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী এই নয়া র্যাম্প তৈরি করা হবে? নকশা অনুযায়ী, কলকাতার দিক থেকে গঙ্গা পেরোনোর ঠিক পরেই দু’দিক থেকে দু’টি ‘লুপ’ নেমে যাবে। লুপ দু’টির দৈর্ঘ্য হবে ৯৮০ মিটারের মতো। চওড়া প্রায় ২৫ ফুট। |
সেতুর উপরে নয়া দু’টি রাস্তার একটি দিয়ে গাড়ি ফোরশোর রোডে নামবে। অন্যটি দিয়ে ওই রাস্তার গাড়ি সেতুতে উঠবে। নকশা তৈরি ও মঞ্জুরের আগে কয়েক দফা সমীক্ষা করেছে এইচআরবিসি। সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যাসাগর সেতু থেকে ফোরশোর রোড ধরে স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। বিদ্যাসাগর সেতু তৈরির এই রাস্তাটি প্রায় ২৫ ফুট চওড়া করা হয়েছিল। বছর ছয়েক আগে আবার চার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তাটি আরও ২৫ ফুট চওড়া করা হয়েছে। তাই গাড়ির চাপ বাড়লেও এই রাস্তায় যানজটের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।”
নতুন দু’টি র্যাম্প তৈরি করার খরচ কত?
এইচআরবিসি সূত্রের খবর, এই কাজে খরচ হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এইচআরবিসি-র এক কর্তা বলেন, “এর জন্য অর্থ দফতরের মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকলেও চলবে। বিদ্যাসাগর সেতুর টোল বাবদ আগে বছরে আমাদের ১৬ কোটি টাকা আয় হত। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নয়া হারে এই টাকা আসছে। বছরে এই খাতে পাব ৫২ কোটি টাকারও বেশি। এই টাকা থেকে র্যাম্প তৈরি করা যাবে।” নয়া এই সংযোগপথে যাতায়াতের জন্য এখনকার টোল-গেট পেরোতে হবে না। তাই নয়া রাস্তার মুখে একটি ছোট ‘টোল প্লাজা’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে এইচআরবিসি-র। সাধনবাবু বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ, পথ-নিরাপত্তা প্রভৃতির জন্য এই আয় জরুরি।”
প্রস্তাব রূপায়িত হলে বহু যাত্রীর, সেই সঙ্গে পুলিশের কিছুটা সুবিধে হবে। কলকাতা পুলিশের ওসি (হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ড) সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিকেল-সন্ধ্যায় সার্কুলার রেলের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। এর ফলে পোস্তার রেলগেট বারবার বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্ট্র্যান্ড রোডে যানজট বেড়ে গিয়েছে। র্যাম্পটি হলে এই রাস্তার উপরে চাপ অনেকটাই কমবে।”
প্রকল্পের নকশাটি বৃহস্পতিবার এইচআরবিসি পরিবহণ দফতরে পাঠিয়েছে। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গাড়ির সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে যত নতুন নতুন রাস্তা হয় ততই ভাল।” |