প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি কী করণীয় এবং করণীয় নয় (‘ডু-জ অ্যান্ড ডোন্ট-স’), তার একটি তালিকা তৈরি করে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়, তবে জীবন হয়ে উঠতে পারে অনেক সুন্দর, সম্মানজনক এবং আনন্দের। বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলিও মানুষের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটির জন্য অবশ্য প্রয়োজন এমন একটি তালিকা।
এই তালিকা মেনে চললে সঠিক প্রকল্পে লগ্নি করা হয়। প্রয়োজনের সময়ে পরিকল্পনা মতো টাকা হাতে আসে, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আয় বাড়ানো এবং লোকসান কমানো সম্ভব হয়, প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে, সময়ের কাজ সময়ে করা হয়, আইনি ঝামেলা এবং জরিমানা/পেনাল্টি এড়ানো সম্ভব হয়। সবার সুবিধার জন্য আজ আমরা এমন একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করব।
করণীয়:
• সঞ্চয় শুরু করতে হবে ছোট বয়স থেকে। সঞ্চয় করতে হবে নিয়মিত এবং দীর্ঘ মেয়াদের জন্য।
• পরিবারের প্রত্যেকের জন্য একটি করে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ একটু বেড়ে উঠলেই তা সরিয়ে ফেলতে হবে বেশি আয়যুক্ত অন্য কোনও প্রকল্পে।
• বাজারে লগ্নি করার আগে মাপজোপ করে নিতে হবে নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার। ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য না-থাকলে সঞ্চিত অর্থ লগ্নি করতে হবে স্থির আয়যুক্ত সুরক্ষিত জায়গায়।
• যাঁদের কমবেশি ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা আছে, তাঁরা নিজের নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আগে থেকেই ঠিক করে নিন, মোট তহবিলের কত অংশ ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে এবং কতটা সুরক্ষিত জায়গায় লগ্নি করবেন।
• প্রতি ছ’মাস অন্তর দেখে নিতে হবে, যেখান থেকে যে-আয় আসার কথা, তা যথাসময়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে কি না। কোনও আয় না- এসে থাকলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে লিখুন।
• লগ্নির সময়ে কর এবং প্রকৃত আয়ের দিকটাও ভেবে নিন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, করযুক্ত বেশি আয়ের তুলনায় করমুক্ত প্রকৃত আয় বেশি লাভজনক হয়।
• কর সাশ্রয়ের জন্য সময় থাকতে উপযুক্ত প্রকল্পে লগ্নি করুন। সময় মতো কর জমা দিন এবং দাখিল করুন রিটার্ন।
• সময় মতো জমা দিন জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম।
• ভবিষ্যতে সোনার প্রয়োজন থাকলে মাসিক কিস্তিতে স্বর্ণ সঞ্চয় করতে পারেন, যাতে একবারে বড় চাপ না-আসে।
• ইক্যুইটিতে লগ্নির ইচ্ছে আছে, কিন্তু তেমন জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা নেই, এ ক্ষেত্রে লগ্নি করতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিন্যস্ত ইক্যুইটি প্রকল্পে।
• কোনও প্রকল্পে লগ্নি করার আগে জেনে নিন প্রয়োজনে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ কতটা সহজ।
• লগ্নি করুন নিজের সামর্থ্য এবং প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। শুধুমাত্র এজেন্ট বা ব্রোকারের কথায় নয়।
• লগ্নির দুনিয়া সম্পর্কে চোখ-কান খোলা রাখুন। রাজনীতি, খেলা, সিনেমা ইত্যাদির পাশাপাশি নিয়মিত চোখ রাখুন খবরের কাগজের ব্যবসা এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত পাতার উপরেও।
• হাতে বিক্রয়যোগ্য শেয়ার ‘সার্টিফিকেট’ হিসেবে ধরা থাকলে তা ডিম্যাট করিয়ে রাখা ভাল, যাতে সুযোগ মতো তা বাজারে বিক্রি করা যায়।
• সব লগ্নি সংক্রান্ত তথ্য একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে। সেভ করে রাখা যেতে পারে কম্পিউটারেও।
• দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ছকে নিয়মিত সঞ্চয় এবং লগ্নি করে যেতে হবে, যাতে প্রতিটি প্রয়োজনের সময়ে উপযুক্ত টাকা হাতে আসে।
করণীয় নয়:
• বাজারে প্রচলিত আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি আয়ের প্রতিশ্রুতি অথবা ৩/৪ বছরে দ্বিগুণ হবে, এমন সব প্রকল্পের হাতছানি এড়িয়ে চলুন।
• বাজারে যে-সব অনামী শেয়ারের কেনাবেচা খুব সামান্য, তাতে হাত না- দেওয়াই ভাল।
• অতি উঁচু বাজারে শেয়ার কেনার কথা না-ভাবাই ভাল। ভাল শেয়ার কিনতে হবে ঝুঁকে পড়া বাজারে, একটু বড় মেয়াদের জন্য।
• ভর্তি করা হয়নি এমন লগ্নি/বিমার আবেদনপত্রে সই করবেন না। অন্য কেউ ভর্তি করে দিলে তা ভাল করে পরীক্ষা করে তবেই সই করুন। কপি রেখে দিন নিজের ফাইলে।
• ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড অন্যের হাতে দেবেন না। এটিএম থেকে কার্ড ফেরত নিতে ভুলবেন না। ট্রানজাকশন স্লিপ ফেলে আসবেন না। পাসওয়ার্ড মোবাইলে সেভ করে না-রাখাই ভাল।
• অনামী ওয়েবসাইটে অন-লাইন কেনাকাটা না-করাই ভাল।
• নিজের সত্যিকারের প্রয়োজন না -থাকলে শুধুমাত্র আত্মীয়/বন্ধুর অনুরোধে কোনও প্রকল্পে লগ্নি অথবা বিমা ক্রয় এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল।
• শুধু মাত্র গুজবের উপর ভিত্তি করে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেবেন না। নিজে সব যাচাই করে তবে লগ্নি করুন।
• কাউকে বড় অঙ্ক দিতে হলে চেষ্টা করুন চেক/ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তা প্রদান করতে। বড় লেনদেন নগদে করার সমস্যা অনেক।
• সামর্থ্যের বাইরে বেরিয়ে ঋণ নেবেন না। যত্রতত্র ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত থাকুন। |