রাজ্যের হস্তশিল্পকে বিশ্বের বাজারে তুলে ধরতে এ বার আগ্রাসী হয়ে বিপণনে নামছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দিল্লির প্রস্তাব প্রথম দফায় বাংলার নিশানা হোক চারটি দেশ। জাপান, অস্ট্রেলিয়া চিলি ও ব্রাজিল। এই প্রস্তাব পেয়ে খুশি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, “এই প্রস্তাব উৎসাহজনক। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। ওই চারটি দেশের আন্তর্জাতিক মেলাতে পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়ন থাকবে।”
রাজ্যের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পজাত সমস্ত পণ্যের বিপণনে জোর দিতে দু’মাস আগেই ‘বিশ্ব বাংলা’ নামের নতুন ব্র্যান্ড চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে এঁকে দিয়েছেন তার লোগো। সেই ব্র্যান্ডকে হাতিয়ার করেই এ বার বিশ্বের বাজার ধরতে চাইছে রাজ্য সরকার। জাতীয় বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা (আইটিপিও) দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ধাঁচেই বিশ্বের চারটি দেশে আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করবে আগামী বছর। বাণিজ্য মেলায় আইটিপিও-র প্রধান রীতা মেনন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। মেনন প্রস্তাব দেন, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, ব্রাজিল ও জাপানের বাণিজ্য মেলায় অন্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়নও থাকুক। বৈঠকেই তাতে সম্মতি জানান অমিতবাবু। |
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলার স্টল।—নিজস্ব চিত্র। |
নকশি কাঁথা, শান্তিনিকেতনের চর্মজাত পণ্য, বাঁকুড়ার বালুচরি, হুগলির ধনেখালি শাড়ি, নদিয়ার শান্তিপুরী শাড়ি এবং দার্জিলিঙের চা পশ্চিমবঙ্গের এই ছ’টি পণ্য ইতিমধ্যেই জিআই (জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন)-পণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যার ফলে অন্য কোথাও এর নকল করা সম্ভব নয়। মূলত এই ছ’টি পণ্যকে সামনে রেখেই ক্ষুদ্র-মাঝারি ও মাঝারি শিল্পজাত পণ্যের বিপণনে নামা হবে। অমিতবাবুর কথায়, “জিআই পণ্যের কথা সারা বিশ্ব জানে। আর কেউ অন্য কোথাও এই পণ্য তৈরি করে তাকে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি বলে দাবি করতে পারবে না।”
আজ দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ দিবস। সেখান থেকেই পশ্চিমবঙ্গের হস্তশিল্পের বিপণনের কাজটা শুরু করে দেন অমিতবাবু। এর আগে দিল্লিতে ফিকি-র পর্যটন সম্মেলনে হাজির হয়ে ঠিক একই ভাবে পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। সেই কারণেই মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ হস্তশিল্পী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার জনকে ইতিমধ্যেই সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও আগামী মাসের মধ্যেই দেওয়া হয়ে যাবে। তাঁরা যাতে আরও বেশি ঋণ, সরকারি সুযোগ-সবিধা পান, সেই চেষ্টা হচ্ছে। ব্যবসায়িক ও বিপণনের কৌশল শেখাতে তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের পণ্যগুলিকে একসঙ্গে ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ডের আওতায় নিয়ে এসে বিপণন করা হবে।
দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি পুস্তক বিপণি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গেও রাজ্যের আমলাদের কথা হয়েছে। গোটা দেশে ওই সংস্থার ৩৫টি বিপণি ছড়িয়ে রয়েছে। তাঁরা রাজ্যের জিআই পণ্য-সহ কিছু বাছাই করা হস্তশিল্প নিজেদের বিপণিতে রাখতে আগ্রহী। অমিতবাবু বলেন, “এ বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথার্বাতা চলছে।
এত দিন তন্তুজ, তন্তুশ্রী ও মঞ্জুষা-র দোকান থেকে রাজ্যের হস্তশিল্প বিক্রি হত। এখন এই তিনটি সংস্থাকে ‘বিশ্ব বাংলা নিগম’ নামের নতুন সংস্থা গড়ে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। এই সংস্থাই পুরো বিপণনের কাজটি দেখাশোনা করবে। সমস্ত পণ্যই ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হবে। ওই তিনটি সংস্থার ১৭১টি দোকান রয়েছে। সেগুলি সবই ‘বিশ্ব বাংলা’য় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়নেও এ বার ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ডকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যাভিলিয়ন উদ্বোধনের দিন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গের হস্তশিল্পীদের সৃষ্টিকে তুলে ধরা। সেই কারণেই বিশ্ব বাংলার ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন।” |