ছ’মাস বন্ধ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি
কেউ বলছেন, ঐতিহাসিক চুক্তি। কেউ বলছেন, ঐতিহাসিক ভুল। বিতর্ক যা-ই হোক, একটি বিষয়ে কিন্তু সকলেই একমত। পরমাণু কর্মসূচি আপাতত ছ’মাস স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রবিবার ইরান যে চুক্তি করল, তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। শনিবারই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা নিয়ে আলোচনায় যোগ দিতে জেনিভা এসেছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। ছিলেন চিন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির বিদেশসচিবরাও। রবিবার সকালে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলির সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছয় ইরান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতির প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন সে কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন। বলা হয়, ছ’মাসের জন্য পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত রাখবে ইরান। যার পরিবর্তে অন্তত সাতশো কোটি ডলার (প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা) সাহায্য পাবে তারা। চুক্তি অনুযায়ী, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খোঁজখবর করতে আসা তদন্তকারীদের আরও সুবিধা দেবে ইরান সরকার। এবং কিছু ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও স্থগিত রাখবে।
চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে ছ’মাসের এই চুক্তির ফলে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না।” যা ওবামার মতে, এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এ নিয়ে সাফল্যের কৃতিত্ব দাবি করে তিনি বলেন, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আমাদের যে উদ্বেগ রয়েছে, তার সামগ্রিক সমাধান খুঁজতে প্রায় এক দশকের মধ্যে এই প্রথম একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল আমেরিকা এবং তার মিত্রদেশগুলি। আমি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পরে এটা চোখে পড়ার মতো একটা পদক্ষেপ।”
ওবামা জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান কতটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে, সে বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে সে দেশে ইতিমধ্যেই যে পরিমাণ ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে, তা নিয়ে কী করা হবে, তা-ও দেখা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, “নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কূটনীতির একটা নতুন পথ খুলে গেল। এমন একটা সময়ের দিকে আমরা এগোব যেখানে দেখা যাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ পথে চালিত হচ্ছে। এবং তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না।”
চুক্তি সইয়ের পরে এ বার ইরানের পালা কিছু করে দেখানোর। অন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমেরিকার বক্তব্যও তাই। ওবামার কথায়, “তাদের পরমাণু কর্মসূচি যে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ কাজের জন্যই, গোটা বিশ্বের কাছে সেটা প্রমাণ করতে হবে ইরানকে। এই সুযোগটা যদি তারা কাজে লাগায়, তা হলে সে দেশের মানুষ ফের আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে একাত্ম হতে পারবে।” কিন্তু এর অন্যথা হলে? ওবামার হুঁশিয়ারি, “ফের চাপের মুখে পড়বে ইরান এবং গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই থাকতে হবে তাদের।” ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানিও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। চুক্তিকে প্রথম পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়ে ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফ অবশ্য এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান কিন্তু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার এখনও হারায়নি।
মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির মতে, এই চুক্তির ফলে আমেরিকার মিত্র দেশ ইজরায়েল আরও নিরাপদ বোধ করবে। কিন্তু ইরানের ‘শত্রু’ দেশ ইজরায়েলের মতে, এই চুক্তি ‘ঐতিহাসিক ভুল’ ছাড়া আর কিছুই নয়। ইজরালের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জেরুজালেমে চুক্তির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, জেনিভায় যা হয়েছে সেটা ঐতিহাসিক চুক্তি নয়, ঐতিহাসিক ভুল। তাঁর কথায়, “পৃথিবীটা আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় পরিণত হবে। কারণ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি পরমাণু বোমার মতো সাংঘাতিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করল!” তাঁর বক্তব্য, এই চুক্তি ইজরায়েলের জন্য আশঙ্কার। তাই তারা এই চুক্তি মানতে বাধ্য নয়। নেতানিয়াহুর সাফ কথা, “ইজরায়েলের ধ্বংস ছাড়া আর কিছু চায় না ইরান। তবে স্বদেশকে রক্ষার অধিকার আমাদেরও রয়েছে।” পাকিস্তান, রাশিয়া-সহ একাধিক দেশ অবশ্য এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে ভারতও। তবে এই চুক্তির পরেও ইরান থেকে তেল আমদানির পরিমাণ ক্রমশ কমাতে হবে নয়াদিল্লিকে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.