|
|
|
|
ডিক্টাফোন বন্ধ করে
স্টোরির পিছনেও নানা রকম ঘটনা ঘটে।
কখনও তা হয় খুব দুঃখের। কখনও মজার লিখছেন ইন্দ্রনীল রায় |
|
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
হঠাৎ করে থান ইট নিয়ে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে ধেয়ে আসছে দু’টি ছেলে। কায়রোতে সবে সন্ধে হব হব। মিনি ভ্যানের সামনে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (উনি গাড়িতে বসলে ড্রাইভারের পাশের সিটেই বসেন।) পিছনে আমরা। ‘মিশর রহস্য’র শু্যটিং সেরে যাওয়া হচ্ছে কায়রোর ঐতিহাসিক তাহিরির স্কোয়্যারের দিকে। তার আগে সবাই পইপই করে বারণ করেছেন ও দিকে যেতে। কিন্তু বাঙালি জেদ যাবে কোথায়। ধীরে ধীরে গাড়ি পৌছোল তাহিরির স্কোয়্যার। আমরা কিছুই জানি না ভঙ্গিতেই নেমে চারিদিক দেখছি। আর
মোবাইল ক্যামেরাতে ‘কাকাবাবু’র ছবি তুলছি। এর মধ্যে দুটো ন’-দশ বছরের ছেলে এসে হাজির।
এসেই সাঙ্ঘাতিক চিৎকার। কেন আমরা ছবি তুলছি? এই ধস্তাধস্তির মধ্যে তারা হঠাৎ ইট তুলে গাড়ির কাচ ভাঙতে শুরু করল। দূরে মিশরের পুলিশ ততক্ষণে দূরবিন নামিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমাদের ড্রাইভার যতই বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ‘আমরা ট্যুরিস্ট’, ততই যেন ওদের রাগ বাড়ছে। পরে জেনেছিলাম ট্যুরিস্টরা ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে, সেই ছবি দেখে নাকি মিশরীয় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে। এই ভয়েই তাদের এই বিক্ষোভ। পরে হোটেলে ফিরে এসে বুঝতে পারলাম আপাতদৃষ্টিতে সব শান্ত থাকলেও, ইসলামিক রেভোলিউশনের ব্যাপ্তি কতটা!
আশাজি, আমি ভেরি ভেরি সরি
অঝোরধারায় কাঁদছেন আশা ভোঁসলে। ২৬ জানুয়ারি সকাল। অফিসের বন্ধুরা বারবার করে ফোন করছে পিকনিক স্পট থেকে। কিন্তু সে দিন তো অ্যাসাইনমেন্ট। আশা ভোঁসলের ইন্টারভিউ। গ্র্যান্ড হোটেলে পৌঁছালাম অ্যাপয়েন্টমেন্টের কুড়ি মিনিট আগে। আফটার অল আশা ভোঁসলে। নিজেকে থিতু করতে সময় লাগে। পুল সাইডে নিয়ে গেলেন হোটেলের এক কর্মী। ভাবলাম গিয়ে কিছু ক্ষণ বসব। ব্যাপারটা বুঝব। তার পর হবে ইন্টারভিউ। কিন্তু কোথায় কী? দেখলাম আশা ভোঁসলে বসে। শুরু হল ইন্টারভিউ। উনি আমার কাজটা সহজ করে দিলেন। |
|
একটার পর একটা কথা বলতে শুরু করলেন মেয়েকে নিয়ে। শীতকালের সকাল। নীল সুইমিং পুলের ধারে বসে কাঁদছেন আশা ভোঁসলে। ডিক্টাফোন বন্ধ করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু পারিনি। মনে হয়েছিল এটা সেনসেশনাল স্টাফ। পরে ভেবেছিলাম, নিজের মেয়ের মৃত্যু নিয়ে যখন কাঁদতে কাঁদতে কথা বলছেন একজন মা, তখন ডিক্টাফোনটা বন্ধ করা উচিত ছিল। আনন্দ প্লাসের অ্যানিভার্সারিতে তাই আশাজিকে একটাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে—ভেরি সরি আশাজি।
একটা আইডিয়া আছে...দেখি কী হয়...
‘বাপি বাড়ি যা’ ছবির প্রিমিয়ার শো সে দিন সাউথ সিটি আইনক্সয়ে। ধীরে ধীরে অডিটোরিয়ামে সব দর্শক ঢুকে গিয়েছেন। এর মাঝখানেই একটা এসএমএস এল, “ভিতরে বোসো না, বাইরে স্টোরি হবে একটু পরে। বেরিয়ে এসো।” সবাই চেনেন তাঁকে। কিন্তু কে পাঠিয়েছিলেন তা বলতে পারছি না কেন, বুঝতেই পারছেন। লবিতে এসে দেখলাম দু’জনে দু’কোণে দাঁড়িয়ে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণ ঘোষ। মাঝখানে দাঁড়িয়ে শ্রীকান্ত মোহতা। আজ নাকি ‘প্যাচ আপ’ হবেই! ধীরে ধীরে পপকর্ন, ভেলপুরি আর কোল্ডড্রিঙ্ক নিয়ে কথাবার্তা শুরু হল। তার পর হঠাৎ করে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরলেন ঋতুপর্ণ। সরে গেলেন বাকিরা। বহু দিনের বহু মতবিরোধ সে দিন ধুয়েমুছে দিল দুই পুরনো বন্ধুর ওই আলিঙ্গন। শ্রীকান্ত এসে বললেন, “ঋতুদা, এ বার তোমরা দু’জন মিলে একটা কিছু ভাবো।” প্রসেনজিৎ হাসলেন। ঋতুদা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “একটা আইডিয়া আছে। ওটা ডেভেলপ করছি। দেখি কী হয়...।” ৩০ মে সেই অভিশপ্ত সকালে, ইন্দ্রাণী পার্কের সাঙ্ঘাতিক ঠান্ডা ঘরে যখন খাট ধরে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় একদৃষ্টে দেখছিলেন ঋতুপর্ণকে, তখন সেই প্রিমিয়ারের দিনটার কথা খুব মনে পড়ছিল। আর মনে পড়ছিল ঋতুদার সেই কথাগুলো: ‘একটা আইডিয়া আছে। ওটা ডেভেলপ করছি। দেখি কী হয়...।’
এক টুকরো ইটের পাঁচালি
সুবীরবাবু দাঁড়ালেন ‘পথের পাঁচালী’র সেই বাড়িটার সামনে। কিছু ক্ষণ দেখলেন চারিদিক। তার পর ধীরে ধীরে বললেন, “চলুন আর বেশি ক্ষণ থাকলে কেঁদে ফেলব।” সুবীরবাবুর হাতে তখন সিগারেট আর রেফারেন্সের জন্য নিয়ে যাওয়া ‘পথের পাঁচালী’র সেই স্টিল। |
|
খবর পেয়েছিলাম কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পরের ছবিটা ভেবেছেন ‘পথের পাঁচালী’র অপুকে নিয়ে। তখনই ফোটোশু্যট অ্যারেঞ্জ করে এক রবিবার সকালে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যাওয়া হল সেই বাড়িতে। পরে অফিস ফিরে স্টোরির হেডিং হল ‘অপুর পাঁচালি।’ পরে আনন্দ প্লাসের এই হেডিংটাই ছবির টাইটেল হয়ে যায়। ও, বলতে ভুলে গেছি— সে দিন স্টোরি করে ফেরার সময় একটি ইটের টুকরো কাউকে না বলেই গাড়িতে তুলে নিয়েছিলাম। এক টুকরো ‘পথের পাঁচালী’, এক টুকরো ইতিহাস থেকে গেল আমার সঙ্গে।
গুলজারের বাড়িতে নায়িকার ছবিটা তুলতে পারিনি
হঠাৎ করে পাশের ঘরে ওই নায়িকার পোর্ট্রেট দেখে বুঝতেই পারছি না কী করব!
এপ্রিল মাসে মুম্বইয়ের দুপুরে কালো হন্ডা অ্যাকর্ড সবে গিয়ে দাঁড়িয়েছে গুলজারের পালি হিলের বাড়ি ‘বসকিয়ানা’তে। দিদিমা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে নাতনি রাইমার সঙ্গে আড্ডা দেবেন তিনি, থাকবে শুধু আনন্দ প্লাস— এটাই স্টোরি আইডিয়া। ৩০ মিনিটের আড্ডা কখন ১ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গিয়েছে! গুলজার সাবও তখন আবেগপ্রবণ। ‘আঁধি’র নস্টালজিয়া তখন দুরন্ত গতিতে ছুটছে। এর মধ্যেই মনে হল এ সুযোগ আর কোনও দিন পাব না। বাকি বাড়িটা যদি একটু ঘুরে দেখা যেত! সেই মতো গুটিগুটি পায়ে পাশের ঘরে গেলাম। নানা বই রয়েছে বাড়িতে। রবীন্দ্র রচনাবলীও দেখতে পেলাম। তার পর মাথা তুলে উপরে তাকাতেই চমকে গিয়েছিলাম একটা লাইফ-সাইজ পোর্ট্রেট দেখে। ছোটবেলায় ফিল্ম ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম, সেই নায়িকার মৃত্যুর কিছু বছর আগে তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন গুলজার। দু’জন একে অপরকে নাকি কবিতা পড়ে শোনাতেন!
জার্নালিস্টিক ইনস্টিঙ্কটে বের করেছিলাম মোবাইল ক্যামেরাটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ছবিটা তুলতে পারিনি। কেন জানি না মনে হয়েছিল, সেই প্রিভেসিটা একমাত্র সেই নায়িকা এবং গুলজার সাবের প্রাপ্য। ওটা তাঁদের জন্যই তোলা থাক।
ওই পোর্ট্রেটটা ছিল মীনাকুমারীর। |
|
|
|
|
|