গ্রেফতারের আশঙ্কা কুণালের, আজ জানাবেন সব নাম
তাঁর আশঙ্কা আজ, শনিবারই সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার করা হতে পারে তাঁকে। রাজ্য ও জাতীয় মিডিয়াকে ডেকে এ কথা জানিয়ে শুক্রবার নিজের বাড়িতে ক্যামেরার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ।
গ্রেফতার হওয়ার আগে শনিবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সারদা-কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার আর্জি জানাতে চান তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ। সারদা-কাণ্ডে যে সব বড় বড় মাথা জড়িত বলে এত দিন তিনি অভিযোগ করে এসেছেন, গ্রেফতারের পরে তাঁদের সকলের নাম লিখিত ভাবে পুলিশকে জানাবেন। আর সেই সব নাম পৌঁছে দেবেন সংবাদমাধ্যমের কাছেও। আর যদি গ্রেফতার না হন? তা হলেও সেই সব নাম শনিবার তিনি প্রকাশ করে দেবেন বলে এ দিন জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে যাঁরা দিনের পর দিন সুবিধা ভোগ করেছেন, তাঁরা আজ “বাংলার ঘরে ঘরে ভগবান জ্ঞানে পূজিত!”
তাঁরা কারা?
বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে চাননি কুণাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে বলেছেন, “আমি তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চাই। আমাকে তো পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। মমতাদি, আপনি ভাল থাকবেন!” তবে পাশাপাশি তিনি এটাও দাবি করেছেন যে, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ছিলেন তৃণমূল নেত্রীরও ঘনিষ্ঠ। কুণালের বয়ান অনুযায়ী, “সারদার লক্ষ্য ছিল, যাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসেন মমতা। সুদীপ্ত বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম, দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে ভাবেই আমি চ্যানেল সাজাচ্ছি।’ সুদীপ্ত বাংলার আওয়াজ ভারতের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।”
সাংবাদিক বৈঠকে কেঁদে ফেললেন কুণাল ঘোষ। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
বস্তুত, ঢেউয়ের মতো এ দিন একের পর এক অভিযোগ তুলে এনেছেন কুণাল। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছেন বেশ কয়েক বার। কান্নায় ধরে-আসা গলাতেই বলেছেন, “মমতাদি, পুলিশ পাঠিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান! এতে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শুরু করে দুঃসময়ে নেত্রীর পাশে ছিলাম। আজ নতুন নতুন লোক আসছেন। আমরা পুরনো লোক, তাই প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাদের!”
প্রায় এক ঘন্টার সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন তাঁর অভিযোগের আঙুল উঠেছে মূলত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দিকে। বলেছেন, “কিছু লোককে আড়াল করতে, আমাদের মতো কিছু বেতনভুক কর্মচারীকে ফাঁসাতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। বিধাননগরের কমিশনার রাজীব কুমার মুকুল রায়ের কথায় ওঠবোস করছেন!” জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি কারও নাম করলেই রাজীব কুমার বা বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন! কুণালের দাবি, “আমার কাঁধে বন্দুক রেখে কেলেঙ্কারি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে!” তৃণমূলের কাছ থেকে তাঁর এটা ‘প্রাপ্য’ ছিল না বলে কেঁদেই ফেলেছেন রাজ্যসভার সাংসদ।
মুকুলবাবু অবশ্য কুণালের বিষয়ে পাল্টা মন্তব্য করতে চাননি। কুণালের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন মুকুলবাবু বলেন, “আমি দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য। সেই কমিটি যে সদস্যকে সাসপেন্ড করেছে, তাঁর কোনও মন্তব্যের উপরে আমি মন্তব্য করলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হবে।” সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের অনেক নেতা জড়িত বলে কুণাল বারবার যে দাবি করছেন, সে সম্পর্কেও মুকুলবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আইন আইনের পথে চলবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।” কুণালের বক্তব্য কি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে দল? মুকুলবাবুর জবাব, “দল যে কোনও ব্যাপারই গুরুত্ব দিয়ে দেখে।”
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও কুণালের অভিযোগ সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না-করে বলেছেন, “এ বিষয়ে যা বলার ডিসি-ডিডি (অর্ণব ঘোষ) বলবেন।” অর্ণববাবুর বক্তব্য, “ওঁকে নিয়ম মেনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হবে, এমন কথা বলা হয়নি।”
কুণাল বোঝাতে চেয়েছেন, দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিষিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে তিনটি কারণ। এক, রায়গঞ্জে অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনার পরে সাংবাদিক হিসেবে তিনি সরকারি অবস্থানের সমালোচনা করেছিলেন। দুই, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সময়ে টাউন হলে তিনি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তিন, জানুয়ারি মাসের একটি ঘটনা, যা তিনি খোলসা করে বলতে চাননি। এরই পরিণাম হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ কুণালের।
আবেগমথিত গলায় কুণাল এ দিন অভিযোগ করেছেন, “আমাকে পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে!” কিন্তু কে মারল ছুরি? কুণালের উত্তর, “মুকুলদাকে ভালবাসি। উনি যা ঠিক মনে করেছেন, তা-ই করেছেন!” কিছু ক্ষণ পরে বলেন, “মুকুলদাকে অনুরোধ, আপনারা সবাই মিলে আমার ক্ষতি করেছেন। কিন্তু এ ভাবে দলের পুরনো লোকদের ক্ষতি করবেন না!” নাম করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থেরও। সাংসদের কথায়, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি নাকি নেতাজি ইন্ডোরে সারদা-র এজেন্ট মিটিং-এ বক্তৃতা করেছি। কিন্তু আমি ছিলাম না। ছিলেন সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। কেন তিনি একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ বৈঠকে গেলেন? কেন তিনি সুদীপ্তবাবুকে ‘ভালো উদ্যোগপতি’ বললেন? এ সব নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলছে না?” এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুরজিৎবাবু বলেছেন, “আমার সিনিয়র এক অফিসারের অনুরোধে নেতাজি ইন্ডোরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেটা পাবলিক ফাংশন ছিল। সে দিন কী বলেছি, এত দিন পরে আমার মনে নেই। তবে সুদীপ্তবাবুকে আমি কখনওই চিনতাম না।”
নাম না-করে কুণাল কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের এক মন্ত্রীকেও। বলেছেন, “তিনি (সেই মন্ত্রী) বলেছিলেন, আমি নাকি কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়ছি! আমি জানি এটা বিপজ্জনক। কিন্তু নিউ টাউনে রহস্যজনক ভাবে মৃত তরুণী আইনজীবীর ঘরে বসে ঢিল ছোড়া তো আরও বিপজ্জনক!”
কুণালের বয়ান অনুযায়ী, সারদার কর্ণধার সুদীপ্তের টাকা মিডিয়ার বাইরে আর কোথায় কোথায় আছে, তা শনিবারের মধ্যে না-জানালে তাঁকে গ্রেফতার করার কথা বলেছেন অর্ণববাবু। এই দাবি করেই কুণালের মন্তব্য, “স্বয়ং সুদীপ্ত সেনকে তো কত বার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি নিজেই জানাতে পারেননি, তো আমি কোথা থেকে জানাব? তাই শনিবার দুুপুরে গেলেই ওরা গ্রেফতার করবে।”
তিনি জানান, পুলিশ তাঁকে বলেছে, সারদা-কাণ্ডে ৫০০টি মামলা শুরু করেছে পুলিশ। প্রতিটি মামলায় ১০ দিন করে পুলিশ হাজতে থাকলে কমপক্ষে ৫০০০ দিন তাঁকে গারদে থাকতে হবে। তবে আগাম জামিনের জন্য তিনি আবেদন করতে নারাজ। তাঁর কথায়, “আমি তো কোনও পাপ, অন্যায় করিনি যে আগাম জামিন চাইব!” গ্রেফতারের পরে তাঁর সাংসদ পদে ইস্তফা দেবেন কি না, এখনই না ভাবলেও কুণালের বক্তব্য, “এখনও দলের দু’তিন জন নেতাকে শ্রদ্ধা করি। তার মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আজ ফোন করেছিলাম। মমতাদির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে নয়। বলেছি, কাল পুলিশ গ্রেফতার করবে। আপনারা ভাল থাকবেন।” পার্থবাবুও জানিয়েছেন, সৌজন্যের খাতিরে ফোন করে কুণাল কুশল কামনা করেছেন।
কেন সরাসরি যোগাযোগ করছেন না নেত্রীর সঙ্গে? কুণালের বক্তব্য, সারদা-কাণ্ডে তাঁর অবস্থান জানিয়ে ইতিমধ্যেই পার্থ, মুকুল ও দলনেত্রীকে তিনি চিঠি দিয়েছেন। জবাব পাননি। কুণালের কথায়, “আমার যা জানানোর, তা তো নেত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি। লোকদের ধরে দিদির কাছে গিয়ে দরবার করতে চাইনি। তিনি যদি কথা বলতে না চান, অপ্রিয় সত্য শুনতে না চান, আমার কী-ই বা করার থাকতে পারে?”
আর নাটকীয় এই ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ সোমেন মিত্রের প্রতিক্রিয়া— “দ্য বল হ্যাজ স্টার্টেড রোলিং!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.