মিলছে না ক্রেডিট কার্ড‌, সহজ ঋণ অধরা হস্তশিল্পীদের
স্তশিল্পী হিসাবে কেন্দ্রীয় হস্তশিল্প ও বস্ত্র কমিশনারের কাছ থেকে বছর দুয়েক আগে ‘আর্টিজান কার্ড’ পেয়েছেন জরিশিল্পী শেখ নুরজামাল। তাঁর ইচ্ছা ব্যবসার করার। সেই লক্ষ্যে হাওড়ার পাঁচলা ব্লকের চড়া-পাঁচলার বাসিন্দা নুরজামাল চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ব্যাঙ্কে ‘আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড’-এর জন্য তদ্বির করছেন। কিন্তু, তাঁর ঘোরাই সার হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড হাতে পাননি।
ওই বিশেষ ‘ক্রেডিট কার্ড’ দিতে ব্যাঙ্কগুলির অনীহার চিত্র গোটা হাওড়া জেলাতেই। রাজ্যের অন্যত্রও ছবিটা আলাদা নয়। ২০০৯ থেকে কেন্দ্রীয় হস্তশিল্প ও বস্ত্র কমিশনার রাজ্যে হস্তশিল্পীদের আর্টিজান কার্ড দিচ্ছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই কার্ড দেওয়া হয়। গ্রাম পঞ্চায়েতে হস্তশিল্পীরা আবেদনপত্র জমা দেন। তারই ভিত্তিতে জেলা শিল্পকেন্দ্র থেকে হস্তশিল্পীদের আর্টিজান কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডটি পেলে হস্তশিল্পীদের যে সব সুযোগ-সুবিধা মেলার কথা, তার মধ্যে প্রধান ‘আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড।’ নিয়ম অনুযায়ী, যে সব হস্তশিল্পী আর্টিজান কার্ড পাবেন, তাঁরা ব্যবসা করতে আগ্রহী হলে জেলা শিল্পকেন্দ্রে নিজের প্রকল্প জমা দেবেন। সেই সব প্রকল্প খতিয়ে দেখে উপযুক্ত প্রকল্পগুলি জেলা শিল্পকেন্দ্র পাঠাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্ক ওই শিল্পীকে ‘আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড’ দেবে, যা হাতে থাকলে সংশ্লিষ্ট হস্তশিল্পী ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারবেন। কিন্তু, জেলা শিল্পকেন্দ্র থেকে প্রকল্প জমা পড়লেও ব্যাঙ্কগুলি ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে না বলে হস্তশিল্পীদের অভিযোগ।
জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রেই জানা যাচ্ছে, হাওড়ায় এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ হস্তশিল্পী আর্টিজান কার্ড পেয়েছেন। ক্রেডিট কার্ডের জন্য যে-সব হস্তশিল্পী আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকে বাছাই করে ৫০০ জনের নাম জেলা শিল্পকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পাঠানো হলেও তাঁরা কেউই ক্রেডিট কার্ড পাননি।
হস্তশিল্পীদের আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে যে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি, তা মেনে নিয়েছে হাওড়া জেলা লিড ব্যাঙ্ক। এর কারণ হিসাবে হস্তশিল্পীদের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন জেলা লিড ব্যাঙ্কের এক পদস্থ কর্তা। তাঁর বক্তব্য, “ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার আগে কোনও প্রকল্প লাভজনক কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্কগুলি। যে-সব প্রকল্প শিল্পকেন্দ্র থেকে ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো হয়, সেগুলি হয়তো লাভজনক নয়।”
এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ হস্তশিল্পীরা। শেখ নুরজামাল বলেন, “জেলা শিল্পকেন্দ্র থেকে আমার প্রকল্পটি দু’বার পাঠানো হয় স্থানীয় ব্যাঙ্কে। কিন্তু, ব্যাঙ্কের তরফে প্রকল্পটির বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমার কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। একবারের জন্যও ব্যাঙ্ক বলেনি, প্রকল্পটি লাভজনক নয়।” বারবার তাঁকে নানা অজুহাতে ফেরানো হচ্ছে বলে নুরজামালের অভিযোগ। তাঁর ক্ষোভ, “আর্টিজান কার্ড ছাড়াও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী হিসাবে আমি প্রায় ছ’মাস আগে জেলা শিল্পকেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করিয়েছি। ব্যাঙ্ক থেকে সাড়া পাইনি।” যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাঁচলা শাখায় নুরজামালের আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে, সেই শাখার তরফে বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্যই ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। পাঁচলারই বড় গাববেড়িয়ার গ্রামের শেখ ইসারক, উলুবেড়িয়ার তেহট্ট-কাঁটাবেড়িয়ার মোমিন মল্লিকের মতো জরিশিল্পীরাও বলেন, “আর্টিজান কার্ড ও ব্যবসার প্রকল্প নিয়ে ব্যাঙ্কে বারবার যাচ্ছি। ক্রেডিট কার্ড কিছুতেই পাচ্ছি না।”
সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবর মল্লিক বলেন, “ক্রেডিট কার্ড না পেলে শুধু আর্টিজান কার্ড নিয়ে হস্তশিল্পীরা কী করবেন? অথচ ক্রেডিট কার্ড পেলে জরিশিল্পীরা মহাজনের কবল থেকে বেরিয়ে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করতে পারতেন।” হাওড়ার জেলাশাসক তথা ক্ষুদ্র শিল্প সংক্রান্ত জেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি শুভাঞ্জন দাসও বলেন, “আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে তৎপর হতে নিয়মিত অনুরোধ করি।”
কিন্তু ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকা যে বিশেষ ইতিবাচক নয়, তা স্পষ্ট অন্য কিছু জেলার পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে যথাক্রমে ৪৫ হাজার এবং ৩৫ হাজার ‘আর্টিজান কার্ড’ বিলি হয়েছে। কার্যত কোনও হস্তশিল্পীই ‘আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড’ পাননি। এই দু’টি জেলায় আবার ব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য: ‘আর্টিজান কার্ড’ চালু হওয়ার আগেও হস্তশিল্পীরা নানা প্রকল্পে ঋণ নিয়েছেন। ঋণ শোধের হাল বেশ খারাপ। তারই প্রভাব পড়েছে ‘আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড’ দেওয়ার ক্ষেত্রে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.