ইংরেজ ব্যাটিংয়ের কলঙ্কের দিন কি আবার ফিরে আসছে? ফিরে আসছে আতঙ্কের সেই নব্বইয়ের দশক?
শুক্রবারের উলুনগাব্বায় মিচেল জনসন নামক পেস-দৈত্যের সামনে ব্রিটিশদের চুরমার হতে দেখে প্রশ্নটা উঠে পড়ল।
ব্রিসবেনে ব্যাটসম্যানদের মারণভূমিতে অস্ট্রেলীয় পেসার শুধু স্টুয়ার্ট ব্রডের খুনে পেসের পাল্টা জবাবই দিলেন না, অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে অতীতের মতোই একটা বড় কেলেঙ্কারির সামনে ফেলে দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে তোলা ২৯২ তাড়া করতে নেমে ৮২-২ থেকে ৯১-৮ হয়ে যায় অ্যালিস্টার কুকের দল! মাত্র ন’রানে উড়ে গেল ছ-ছ’টা উইকেট! ১৩৬ তুলতে না তুলতে ধ্বংস ইংরেজ ব্যাটিং। আর সেটাও কিনা অস্ট্রেলিয়ার দুই নিঃশব্দ ঘাতকের অতর্কিত আক্রমণে!
প্রথম জন— মিচেল জনসন। বোলিং হিসেব: ১৭-২-৬১-৪।
দ্বিতীয় জন— রায়ান হ্যারিস। বোলিং হিসেব: ১৫-৫-২৮-৩।
জনসনকে অ্যাশেজে নেওয়া হবে কি না, সেটা নিয়েই কিছু দিন আগে পর্যন্ত জল্পনা ছিল। সেই জনসন এ দিন গাব্বায় নব্বইয়ের দশকের গোড়ার স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন। যখন ভাল খেলতে খেলতে আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ত ইংল্যান্ড ব্যাটিং, ভুগত চরম ধারাবাহিকতার অভাবে। এবং শুক্রবারের বিপর্যয় দেখার পর অজি মিডিয়া প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, ইংল্যান্ডের বর্তমান ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম গুচও কি এ দিন কোথাও গিয়ে ’৯০-এর মেলবোর্নের খোঁজ পেলেন না? সে দিন তিনি যখন আউট হন, ইংল্যান্ড ১০৩-১। আর গুচ আউট হওয়ার কিছুক্ষণ পরে টিমটা শেষ হয়ে যায় দেড়শো রানে! সে দিন তিন রানে ইংরেজদের ছ’উইকেট উড়ে গিয়েছিল। এ দিনের হিসেবটা একটু ভাল, সেই ছ’টাই গেল কিন্তু ন’রানে! |
যার পরপরই দাঁত-নখ বার করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিংস্র আক্রমণে নেমে পড়েছে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া। ব্রডের সঙ্গে ঠোকাঠুকি চলছিল। এ বার সেটা পূর্ণাঙ্গ আকার নিল। এ বার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু শুধু ব্রড নন, গোটা ইংল্যান্ড টিম। ১৩৬ রানে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এ দিন প্রত্যেক ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার ধরন ও কারণ বিশদে ব্যাখ্যা করে পুরো টিমটাকেই এক সংবাদপত্রে বলে দেওয়া হল ‘ইউজলেস!’ অতীতের প্রখ্যাত ইংরেজ অধিনায়কেরাও চুপ নেই। নাসের হুসেন লিখে ফেলেছেন, ‘জনসন দুর্দান্ত। কিন্তু ইংল্যান্ডের এমন জঘন্য ব্যাটিংয়ের কী ব্যাখ্যা হয়?’
ম্যাচের নাটকীয় পট পরিবর্তন দেখলে যে মন্তব্য যুক্তিপূর্ণ শোনাবে। শুক্রবার ২৯৫-এ শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। ব্রড ছ’টা নিয়ে শেষ করেন। উত্তরে ইংল্যান্ড খারাপ এগোচ্ছিল না। কুক, ট্রট আউট হয়ে গেলেও টানছিলেন মাইকেল কারবেরি (৪০) এবং শততম টেস্ট খেলতে নামা পিটারসেন (১৮)। গণ্ডগোল বাঁধে কেপি আউট হওয়ার পর। পরের পর উইকেট পড়তে থাকে, আশঙ্কা উঠে পড়ে একশোরও কমে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার। শেষ পর্যন্ত সেটা যে হয়নি তার কারণ, ব্রডের লোয়ার অর্ডারে নেমে দাঁড়িয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া আপাতত ৬৫-০। ঘরের মাঠে দ্বিতীয় দিনের শেষেই ২২৪ রানে এগিয়ে।
কিন্তু কোন জাদুমন্ত্রে গাব্বায় এমন তাণ্ডব করে গেলেন জনসন-হ্যারিস? অস্ট্রেলীয় উইকেটকিপার ব্র্যাড হাডিন বলছেন, ‘ড্রেসিংরুম পেপ-টক’। যা দিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচ ক্রেগ ম্যাকডারমট। হাডিন বলছেন, “আমরা একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান ধরে এগোতে চাইছিলাম। কিন্তু বোলিংয়ে যে শুরুটা আমরা চাইছিলাম, সেটা হচ্ছিল না। ব্রেকে ড্রেসিংরুমে বিলি (ম্যাকডারমট) স্পষ্ট করে বলে দিল, ও কী চাইছে। আমরা নেমে তার পর শুধু লেংথটা ঠিক রেখে গিয়েছি।”
ব্রেকে জনসনদের ঠিক কী টোটকা দিয়েছিলেন ম্যাকডারমট, অস্ট্রেলীয় উইকেটকিপার বলেননি। কিন্তু নব্বইয়ের গোড়ায় কখনও আট, কখনও পাঁচ উইকেট নিয়ে ইংরেজ ব্যাটিংকে এক সময় কাঁদিয়ে ছাড়তেন ‘অ্যালান বর্ডারের বাঘ’, সেটা একটু পরিসংখ্যান দেখলেই জানা যাবে। ’৯০-এর পার্থে ১৯১-২ থেকে ইংল্যান্ডের ২৪৪-এ শেষ হয়ে যাওয়া কিংবা ’৯৪-র মেলবোর্নে ইংরেজদের ৯২ অল আউটের কুৎসিত কাহিনিসবের নেপথ্যেই ক্রেগ ম্যাকডারমট নামক এই ভদ্রলোকই ছিলেন! |