নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২০তম। শুক্রবার থেকে নতুন দাবা সম্রাটের নাম ম্যাগনাস কার্লসেন। ভারত থেকে থেকে ব্যাটনটা গেল নরওয়ের হাতে। সত্তরের দশকের পর থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চার জন দাবাড়ুই উঠে এসেছেন, যাঁরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নন। ফিশার, টোপালভ, বিশ্বনাথন আনন্দ আর এখন কার্লসেন। দাবার জন্য এটা খুব ভাল খবর। প্রত্যেক খেলাতেই এক জন আইকন-এর প্রয়োজন, খেলাটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কার্লসেনের হাত ধরে নরওয়ের দাবাও আগামী দশ-পনেরো বছরে অন্য পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। দিনটা ভারতের জন্য যদিও দুঃখের।
ভারতীয় দাবায় আনন্দের অবদানের বিকল্প হয় না। বিশ্বের দরবারে ভারতীয় দাবা যতটুকু এগিয়েছে, বিশ্বের প্রথম পাঁচটা শক্তিশালী দেশের মধ্যে উঠে এসেছে ভারত, সেটা আনন্দের জন্যই। আশির দশকের শেষ থেকে আনন্দের সাফল্যে এ দেশে দাবা আরও প্রচার পেয়েছে। ওকে দেখেই তরুণ প্রজন্ম আগ্রহ দেখিয়েছে চৌষট্টি খোপের জাদুতে। চেন্নাইয়ে এ বারই প্রথম দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসার পিছনেও তো আনন্দের ক্যারিশমা। এ দিন টিভিতে সাংবাদিক বৈঠকে দেখলাম, আনন্দ বলছে ও ফিরে আসবে। তার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছেলে অখিল আর স্ত্রী অরুণার সঙ্গে সময় কাটিয়ে এই মানসিক ধাক্কাটা থেকে ও বেরিয়ে আসবে। |
মুকুট হাতবদল। শুক্রবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই। |
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি ধুন্ধুমার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে নতুন নতুন মুভ, স্ট্র্যাটেজি, আইডিয়া দেখার জন্য। সে দিক থেকে কিন্তু এ বারের টুর্নামেন্টটা বেশ সাদামাঠা। দশম গেমও ড্র হল। তার পরও বলছি খেতাবি লড়াইয়ে এক জন দাবাড়ুর প্রাধান্য কোন পর্যায়ে থাকলে এমন দাপটে জেতা যায় দেখিয়ে দিল কার্লসেন। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে তো একটাও গেম জিততে দিলই না। উল্টে দুটো গেম বাকি থাকতেই বিশ্ব খেতাব পকেটে পুরে ফেলল। আনন্দ তিন আর ন’নম্বর গেমে পজিশন পেয়েছিল। কিন্তু সেটার সুবিধা নিতে পারেনি। পঞ্চম গেমে হারটাই ওর টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। তবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে যে ভাবে কার্লসেন গেম বার করে নিয়েছে সেটাও অতুলনীয়।
আনন্দ তো সাংবাদিক বৈঠকে বলেই ফেলল, ঠিক কোথায় ওর ভুল হয়েছে সেটা ধরতে পারছে না! আসলে কার্লসেনের মতো জিনিয়াসরা এ রকমই হয়। তারা ঝড়ের মতো এসে সব ওলোট-পালট করে দেয়। বিশ্ব দাবায় কার্লসেন জমানা শুরুর ঘোষণা গত কয়েক বছর ধরেই স্পষ্ট। শুক্রবার চেন্নাইয়ে সরকারি সিলমোহরটাই যা পড়ল! |