শর্ট স্ট্রিটের ৯এ নম্বর বাড়িতে ১১ নভেম্বরের হামলায় পরাগ মজমুদারই মূল চক্রী বলে পুলিশের সন্দেহ। এ বার ওই বাড়িতে ১৫ সেপ্টেম্বরের হামলাতেও জমি-বাড়ির ব্যবসায়ী পরাগের নাম জড়িয়ে গেল। পুলিশের অভিযোগ, ওই হামলাতেও পরাগের সঙ্গে ছিলেন পিনাকেশ দত্ত ও রাজেশ দামানি। তিন জনই গ্রেফতার হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ১৫ সেপ্টেম্বর ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে হামলা এবং ভাঙচুর চালিয়ে একটি বন্দুক ছিনতাই করে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী। ১১ নভেম্বরের হামলার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, আগের হানাদারির পিছনেও মূল চক্রান্তকারী ছিলেন পরাগ-পিনাকেশ-রাজেশ তিন মূর্তি। লালবাজারের কর্তারা জানান, হামলা চালিয়ে বন্দুক ছিনতাইয়ের ঘটনায় পৃথক তদন্ত করছে গুন্ডা দমন শাখা।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের হামলার পরে পরাগদের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি শেক্সপিয়র সরণি থানা। পরে
অবশ্য কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মার হস্তক্ষেপে পরাগ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই বাড়ির এক নিরাপত্তারক্ষী। লালবাজার সূত্রের খবর, অভিযোগ দায়ের করার পরেও শেক্সপিয়র সরণি থানার তৎকালীন ওসি ও তদন্তকারী অফিসার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।
তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িতে হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পরাগ, পিনাকেশ ও রাজেশ। শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে শেষতম হামলার ঘটনায় পরাগ-পিনাকেশকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজেশকে গ্রেফতার করা হয় বৃহস্পতিবার। শুক্রবার
তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। আদালতে পুলিশ জানায়, পরাগের ভুয়ো সংস্থা (মুম্বইয়ের হার্টলাইন)-র ডিরেক্টর ছিলেন রাজেশ। এই পদ নেওয়ার জন্য পরাগের কাছ থেকে পৌনে দু’লক্ষ টাকাও নেন তিনি। ১১ নভেম্বর ভোরে ওই বাড়িতে হাঙ্গামার পরেই গা-ঢাকা দেন রাজেশ।
সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস এ দিন আদালতে জানান, ১১ নভেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশি জেরার মুখে পিনাকেশ যা বলেছেন, গ্রেফতার হওয়ার পরে তদন্তকারীদের কাছে রাজেশ একই কথা বলেছেন। তিনি পরাগ ও পিনাকেশের মধ্যে মূল যোগসূত্র তো বটেই, ওই হামলার অন্যতম চক্রান্তকারীও। তবে রাজেশের আইনজীবীর দাবি, ১১ নভেম্বর হামলার সময় তাঁর মক্কেল ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এফআইআরেও রাজেশের নাম নেই। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পরে রাজেশকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠ।
লালবাজার সূত্রের খবর, পরাগের নির্দেশেই তিনি ‘হার্টলাইন’ নামে ওই ভুয়ো সংস্থার ডিরেক্টর-পদ নিয়েছিলেন বলে রাজেশের দাবি। তিনি ছাড়া আরও এক জন ওই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। তদন্তকারীরা জানান, ১১ নভেম্বর কখন কী ভাবে হামলা চালানো হবে, ঘটনার কয়েক দিন আগে পরাগের একটি অফিসে বসে তার ছক চূড়ান্ত করেন পরাগ-রাজেশ-পিনাকেশ। সেখানেই ঠিক হয়, পিনাকেশ ঘটনাস্থলে গেলেও রাজেশ ও পরাগ যাবেন না।
শুধু এ-সবই নয়, জেরার মুখে আগের বেশ কিছু জমি দখলের কথাও রাজেশ ও পিনাকেশ স্বীকার করেছেন বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি। তাঁরা জানান, পরাগ এবং অন্য এক সম্পত্তির কারবারির নির্দেশেই ওই সব জমি দখল করা হত বলে কবুল করেছেন পিনাকেশ-রাজেশ। ওই সব জমি দখলের পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “ধৃতদের জেরা করে জমি দখলের সব ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। গোয়েন্দারা সেগুলি খতিয়ে দেখছেন। ওই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”
|