সল্টলেকের পুর-নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত অশান্তি |
সল্টলেকে তৃণমূলের আঙুল পুলিশের দিকে
কাজল গুপ্ত |
দুপুর দেড়টার পর থেকেই লোকজনের ভিড় বাড়ছিল এফসি কমিউনিটি হলের বুথের কাছে। দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ দেখা যায় একদল পুরুষ ও মহিলা পাঁচিল টপকে বুথের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছেন। যদিও সে সময় ঘটনাস্থলের কাছেই এক পুলিশকর্তা বাহিনী নিয়ে হাজির ছিলেন। পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে প্রশাসনের আধিকারিকরা ওই কমিউনিটি হলের শাটার ভিতর থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু বাইরে থেকে জোর করে অনেকে শাটার তুলে বুথে ঢুকে পড়ে।
সেই সময়ে বাহিনী নিয়ে হাজির হন বিধানগরের দুই পুলিশকর্তা। লাঠি চার্জ করে বুথের কাছে জড়ো হওয়া অসংখ্য ব্যক্তিকে এলাকা থেকে তাড়াতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। কয়েক জনকে মারতে মারতে গাড়িতেও তুলতে দেখা যায়। তার মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। এর জেরেই গোলমাল তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকর্তাদের গাড়ি ঘিরে শাসক দলের নেতাকর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ গাড়ি নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। পরে রিটার্নিং অফিসার-সহ বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। |
|
এফসি ব্লক কমিউনিটি হলের বুথে জোর করে ঢোকার চেষ্টা। |
এমন একটি নয়, ভোটপর্ব জুড়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটল সল্টলেকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। কখনও বিরোধীদের সঙ্গে, কখনও আবার পুলিশের সঙ্গে শাসক দলের কর্মীদের গোলমাল। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছে।
অথচ এই ওয়ার্ডেই সিপিএমের তাবড় নেতাদের বাস। এক সময়ের সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। রাজ্যের ক্ষমতা বদলের ধাক্কায় এই এলাকাতেও দুর্বল হয় সিপিএম। এক ধাক্কায় বিধানসভায় আটশোরও বেশি ভোটে পরাজয়ে আরও বিচ্ছিন্ন হয় সিপিএম।
সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায়, সল্টলেক পুরসভাতেও। তার পরেও কেন ওই ওয়ার্ডে দিনভর সংঘর্ষ ঘটল?
সকাল থেকে অশান্তির আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। করুণাময়ীর দিক থেকে ৫০-৬০ জনের মোটরবাইক বাহিনী আচমকা নির্বাচনী এলাকায় ঢুকে পড়ে। রাস্তায় টহলরত পুলিশ তাঁদের এফডি পার্কে আটকায়। এর মধ্যে এক জন স্থানীয় তৃণমূল অটো ইউনিয়নের নেতা। ১৫টি মোটরবাইক ও ১১ জনকে আটক করা হয়।
তৃণমূল প্রার্থী বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের একাংশ সকাল থেকে অভব্য আচরণ করছিলেন। ফলে কর্মীরা বিক্ষুব্ধ ছিলেন। দুপুরে এমনই একটি ঘটনার পরে কর্মীরা কিছু ক্ষণের জন্য মেজাজ হারান। তবে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু বিষয়টিকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।” |
|
পুলিশের জালে এক ভুয়ো ভোটার। শুক্রবার, সল্টলেকে। |
কিন্তু বিরোধীদের সঙ্গে গোলমাল হল কেন? বিরোধীদের অভিযোগ, সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও তাঁদের এজেন্টদের কিংবা কর্মীদের বুথ ও ক্যাম্প থেকে বার করা যাচ্ছে না দেখেই হামলা চালায় শাসক দল। জোর করে বুথ দখলের চেষ্টা করে। ঘটনায় সিপিএম ও কংগ্রেসের মোট ৯ জন আহত হয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। তাঁর মধ্যে দু’জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কংগ্রেস প্রার্থী প্রমিতা সাহার অভিযোগ, তাঁদের মুখ্য নির্বাচনী এজেন্টকেও মারধর করে বার করে দেওয়া হয়। তাঁকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেন, “পুলিশের সামনেই আমাদের কর্মীদের মেরে বুথ দখল করা হয়েছে। পুলিশ গোড়ায় একটু সক্রিয় থাকলেও পরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।” যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল প্রার্থীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট তথা বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার চেষ্টা করছে কংগ্রেস ও সিপিএম।”
|
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
পুরনো খবর: পুর-ভোটের নিরাপত্তায় তৎপরতা |
|