রাজারহাট পুর-নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত অশান্তি
বুথে এলেন ৩৩৪, ভোট পড়ল ৫৩০
দুপুর ১টা বেজে ১০ মিনিট। জ্যাংড়া আদর্শ বিদ্যামন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক জন পুলিশ। সকালে পুলিশকর্মীরা ভোটার কার্ড ছাড়া ভোটারদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। দুপুরে দেখা গেল, সেই সব পুলিশকর্মীদের সামনে দিয়েই যে কেউ ঢুকে যাচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে।
স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকে ভিতরে গিয়ে দেখা গেল, যে দুই ঘরে ভোট হচ্ছে, সেই ঘরেও বিনা বাধায় ঢুকে পড়েছেন কয়েক জন যুবক। ৬৪ নম্বর পার্টের দু’নম্বর ঘর থেকে এক ভোটার রেগেমেগে বেরিয়ে আসছেন। ওই ভোটারের অভিযোগ, তিনি যখন ইভিএমের সামনে দাঁড়িয়ে বোতাম টিপে ভোট দিচ্ছিলেন, তখন এক যুবক পাশ থেকে উঁকি মারছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, “আমি কাকে ভোট দিচ্ছি, তা অন্য কেউ কেন দেখবে?”
ওই ভোটার যখন রাগারাগি করছিলেন, তখনই পাশ থেকে এগিয়ে এলেন কিছু যুবক। তাঁদের এক জন হাত জোড় করে বললেন, “দাদা দয়া করে চলে যান। উনি এক জন অফিসার। মেশিনটা ঠিক আছে কি না, পরীক্ষা করছিলেন।”
গজগজ করতে করতে সেই ভোটার বেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখা গেল, ওই ‘অফিসার’ ফের চলে গেলেন ইভিএমের সামনে। তার পরে সেই ‘অফিসার’ একটানা ইভিএমের বোতাম টিপতেই থাকলেন। তাঁর আশপাশে তখন আরও কয়েক জন যুবক জড়ো হয়েছে।
দিনের শেষে এই বুথের ৬৪ নম্বর পার্টে ভোটের যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেল, তা কিন্তু বেশ বিস্ময়কর। বারাসতের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি রানো বলেন, “৬৪ নম্বর পার্টে ভোট দিতে এসেছেন ৩৩৪ জন। কিন্তু ওই বুথে ভোট পড়েছে ৫৩০টি। রাজারহাটের তিনটি বুথ নিয়েই এ রকম অভিযোগ এসেছে। অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরে সিদ্ধান্ত হবে পুনর্নির্বাচন হবে কি না।”
বুথে ভোটযন্ত্র ঘিরে এঁরা কারা? শুক্রবার রাজারহাটে। —নিজস্ব চিত্র।
মহকুমাশাসক যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা যে খুব একটা বিস্ময়কর নয়, তা ওই ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১টা ২০ থেকে তিনটে পর্যন্ত উপস্থিত থেকেই বোঝা গেল।
ওই ৬৪ নম্বর পার্টের দু’নম্বর ঘরের বাইরে বারান্দার কাছে দাঁড়ালেই টানা ইভিএমের আওয়াজ কানে আসছিল। মাঝেমধ্যেই ভোটকেন্দ্রের ঘরে বেজে উঠছিল মোবাইল। ভোটকেন্দ্রে বসেই মোবাইলে কথা বলে যাচ্ছেন কিছু যুবক। ঘরের ভেতরে বসে ছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার-সহ কয়েক জন এজেন্ট। ওই ঘরে ঢুকতে যেতেই এক জন বাধা দিলেন। ‘দাদা কোথা থেকে এসেছেন?’ মিডিয়া বলে পরিচয় দিতেই কয়েক জনের অনুরোধ, ‘কী দরকার ঘরে ঢোকার? দেখছেন তো, শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হচ্ছে।’ পাশ থেকে অন্য এক যুবক বলে উঠলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আবার গোপন ক্যামেরা-ট্যামেরা থাকে। এতে শান্তি নষ্ট হয়। এখান থেকে চলে যান।’’
ওই যুবকদের ‘শান্তি’ নষ্ট করলে যে ফল ভাল হবে না, তা অবশ্য হাবেভাবেই টের পাওয়া গেল। তাই ঘর থেকে বেরিয়ে সংলগ্ন বারান্দার কাছে এসে দাঁড়াতেই ফের দেখা গেল ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট শুরু। বাইরে থেকে তখন টুকরো টুকরো আওয়াজ কানে আসছে। যেমন, ‘তাড়াতাড়ি কর। দু’টোর মধ্যে শেষ করতে হবে।’
ওই ভোটকেন্দ্রের ঘরে পুলিশে দেখা না মিললেও বাইরে পুলিশের বেশ কয়েকটা জিপ ছিল। কয়েক জন পুলিশকর্মীকে স্কুল মাঠে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গিয়েছে। বাইরে ছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসি পদমর্যাদার এক অফিসার। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী ভাবে ভোট হচ্ছে দেখছেন?” তিনি শুধু বললেন, “এ সব নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করবেন না।”
এর মাঝেই আবার দেখা গেল বাইরে থেকেও ভোটারেরা ঢুকছেন। তবে যাঁরা ঢুকলেন, তাঁদের কাউকে ভোটার কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে দেখা গেল না। ২টো ২০ নাগাদ এলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর উপস্থিতিতে অবশ্য দেখা গেল ইভিএমের সামনে কোনও জটলা নেই। ঘরে কোনও ভোটারও নেই।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মিনিট পাঁচেক ঘুরে বেরিয়ে আসার পরে প্রশ্ন করলাম, “কেমন ভোট দেখলেন?” তিনি প্রথমে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে বললেন, “ভোট তো হচ্ছে দেখলাম।” ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বেরিয়ে যাওয়ার পরে ফের শোনা গেল ইভিএমের টানা আওয়াজ।
ভোট চলাকালীনই রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি ভোটকেন্দ্রের ভোট নিয়েই সরব ছিলেন চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ভোট লুঠ হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছি।”
এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের পূণের্র্ন্দু বসু অবশ্য বললেন, “ওই পার্টে কত জন ভোটার, আর কতগুলো ভোট পড়েছে, জানি না। আমি এ সবের মধ্যে ছিলাম না। বিধানসভায় ছিলাম। ভোট তো ঠিকঠাকই হয়েছে বলে শুনেছি।”
পৌনে তিনটে নাগাদ এলেন অবজার্ভার। কিন্তু তত ক্ষণে ইভিএমের টানা আওয়াজ বন্ধ। অবজার্ভার চলে যাওয়ার পরে অবশ্য আর ইভিএমের টানা আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়নি। তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় তিনটে ছুঁয়েছে। ভোটকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিরিয়ানি আর মাটন চাপের প্যাকেট পরিবেশন করা নিয়ে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.