|
|
|
|
শতাব্দী কি কোণঠাসা, প্রশ্ন দলেরই অন্দরে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রাজনীতিতে ভাল কাজ করেও দুর্নাম কুড়োতে হয়। শুক্রবার রামপুরহাটে একটি অনুষ্ঠানে এমনটাই আক্ষেপ করলেন বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।
বৃহস্পতিবারই তাঁকে এসএসডিএ চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে হয়েছে। মুখে তা না মানলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশেরই কিন্তু দাবি, দলীয় ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ করে তিনি স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোষের মুখে পড়েছেন। এ দিন রামপুরহাটে একটি অনুষ্ঠানে শতাব্দী সুর নরম করলেও ক্ষোভ ছিলই। আবেগতাড়িত শতাব্দী বলেন, “ভাল কাজ করতে গিয়ে যে বদনাম পাওয়া যায়, তা আমি রাজনীতি করতে এসে জানলাম। আমি অভিনয়ের জগত থেকে রাজনীতিতে এসেছি। তাই আমার আবেগ অনেক বেশি। ভুল করলে আমাকে অবশ্যই বলবেন। আর ঠিক করলে সমর্থন করবেন।” |
|
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কে-ই বা তাঁকে সমর্থন করবেন? একে একে তৃণমূলের বহু নেতাই শতাব্দীর পাশ থেকে সরে আসছেন বলে দলীয় সূত্রেই খবর। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট-উত্তর সময়ে তাঁদের সঙ্গে বরং দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরই ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। সেই অনুব্রত, যাঁর সঙ্গে সাংসদের বিরোধের কথা সর্বজন বিদিত। সাংসদ হওয়ার পরে গত চার বছরে নানা সময়ে নানা ঘটনাতেই সেই বিরোধিতার চিত্র প্রকট হয়েছে। যার ফলস্বরূপ কখনও তৃণমূলেরই লোকেরাই তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়েছেন। কখনও আবার বহু দিন ধরেই দুই নেতা দলীয় মঞ্চে একত্রে থাকেননি। অতীতে একাধিক বার জেলা নেতৃত্বের একটি বিশেষ অংশের প্রতি প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শতাব্দী। জেলার রাজনৈতিক মহলের দাবি, এ সবের জেরেই যত দিন এগিয়েছে শতাব্দী আর অনুব্রতর মধ্যে দূরত্ব তত বেড়েছে। দলের শীর্ষ নেত্বত্ব থেকে অবশ্য বারবারই দলের স্বার্থে দুই নেতার বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময় তার ফলও মিলেছিল। প্রচারে দুই নেতাকে ফের একমঞ্চে দেখা গিয়েছিল। লালমাটির বীরভূমের জেলা পরিষদে প্রথম ঘাসফুল ফুটেছিল খুব সহজেই। কিন্তু তবুও কি দুই নেতার ‘মতান্তর’ মিটছিল?
জেলা তৃণমূলেরই একটি সূত্র বলছে, জেলায় অনুব্রতর প্রভাব যত বেড়েছে শতাব্দী তত কোণঠাসা হয়েছেন। বীরভূমে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সাংসদের সরে যাওয়া অন্তত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। দু’টি পদেই দায়িত্ব পেয়েছেন অনুব্রতর একান্ত অনুগামী চন্দ্রনাথ সিংহ। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল যে শতাব্দীকে এতটা হঠতে হল? তৃণমূলের ওই সূত্রের দাবি, এ ক্ষেত্রে দু’টি ‘ফ্যাক্টর’ সাংসদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। প্রথমত, গত ২০ সেপ্টেম্বর কলকাতার সেই রক্তদান শিবিরে শতাব্দীর দলীয় নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করা। দ্বিতীয়ত, জেলার রাজনীতিতে বহু দিন ধরেই শতাব্দী কট্টর অনুব্রত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত। তাই শতাব্দীর প্রতি দলীয় নেত্ৃত্বের ক্ষুব্ধ হওয়াকে কাজে লাগিয়ে জেলায় নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বজায় রাখলেন স্বয়ং অনুব্রতই। বস্তুত, এসএসডিএ-র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদ অনুব্রত অনেক দিন ধরেই নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছিলেন বলে খবর। কারণ, এসএসডিএ বোলপুর ব্লকের ৪৪টি মৌজায় নানা উন্নয়নমূলক কমর্কাণ্ড দেখভাল করে। গোটা এলাকায় যে কোনও প্রকারের নির্মাণের ক্ষেত্রে এসএসডিএ-র অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই অনুমোদনের জন্য এসএসডিএ-কে নির্দিষ্ট টাকাও জমা দিতে হয়। তাই তৃণমূলের দখলে আসার পরে অনুব্রত এসএসডিএ-তে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করতে একে একে নিজের অনুগামীদের বিভিন্ন পদে নিয়ে এসেছেন বলে দাবি। পর্ষদের বর্তমান গভর্নিং বডির দুই প্রভাবশালী সদস্য দেবব্রত সরকার ও সুশান্ত ভকত (বোলপুর পুরসভার তৃণমূল চেয়াম্যান) অনুব্রতর খাস লোক বলেই পরিচিত।
তৃণমূলের ওই নেতার আরও দাবি, শুধু এসএসডিএ-ই নয়, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা বজায় রাখতে বীরভূমের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নিজের অনুগামীদেরই বসিয়েছেন। দু’ বছর আগেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন অনুব্রতর ভাগ্নে রাজা ঘোষ। এত দিন বীরভূমে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি আবার এখন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। তাঁর জায়গায় এখন ওই পদে এসেছেন অনুব্রত-র আর এক অনুগামী নুরুল ইসলাম।
শতাব্দী প্রথম দিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্যা ছিলেন। ফলে বরাবর বিরোধী বলে পরিচিত হলেও মমতার কাছের লোক হওয়ার সুবাদে অনুব্রত সাংসদকে তেমন ঘাঁটাতেন না বলেই দলের নেতাদের দাবি। কিন্তু হিসেব উল্টে যায় কলকাতার ওই রক্তদান শিবিরের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছনোর পরেই। তৃণমূলের এক জেলা স্তরের এক নেতা বলছেন, “এই সুযোগটাকেই অনুব্রত কাজে লাগিয়েছেন। আসলে সরাসরি দলবিরোধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত হওয়ায় জেলায় এখন অনেক নেতাই শতাব্দীর পাশ থেকে সরছেন। নিজের ঘাড়ে খাঁড়া নামার ভয় তো রয়েইছে।”
তৃণমূলেরই অন্য একটি অংশ, যাঁদের এখনও শতাব্দীর উপরে যথেষ্টই ভরসা রয়েছে, তাঁদের কিন্তু উল্টো সুর। জেলা সভাপতি যে দাপটের সঙ্গে কংগ্রেস থেকে লোক ভাঙিয়ে বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠন বাড়াচ্ছেন, তাতে উল্টো স্রোতে গা ভাসাতে অনেকেই ভয় করছেন বলে তাঁদের দাবি। এক নেতার যুক্তি, “শতাব্দী সেদিন কলকাতায় যে ভুল কিছু একটা বলেননি, তা অনেকেই মানেন। উনি দলের ক্ষতি করার জন্য কোনও সমালোচনা করেননি, বরং দলের ভালর কথা ভেবেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন। দলের বহু নেতা কর্মীই তা বিশ্বাস করেন।” তাঁর অভিযোগ, কোপে পড়ার ভয়েই দলের বেশির ভাগ লোক এখন রাজ্য নেতৃত্বের স্নেহভাজন অনুব্রতর দিকে ঝুঁকছেন। এমন একটি পরিস্থিতিতে তিনিও মনে করছেন, শতাব্দীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারের জন্য টিকিট পাওয়া এখন আর আগের মতো সহজ নয়।
এ দিকে তৃণমূলেরই একটি অংশে এখনই পরবর্তী প্রার্থী হিসেবে নাম ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সুদীপ্ত ঘোষের। যদিও এ দিনও অনুব্রত জানিয়েছেন, বীরভূম কেন্দ্রে দলের প্রার্থী কে হবেন, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চূড়ান্ত করবেন। অন্য দিকে, দলে শতাব্দীর একঘরে হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট জবাব, “এ সবই ভুল কথা। আমাদের দলে এ রকম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শতাব্দী রায়কে নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা নেই।” আবার এ দিনও নিজের বক্তৃতায় বীরভূম কেন্দ্রে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে শতাব্দীকে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। রামপুরহাট থেকে ফেরার আগে বলে গেলেন, “আমি বীরভূমকে ভালবাসি। বীরভূমকে নিয়েই ভাল আছি। আমার সমালোচনা করা হলেও বীরভূমের জন্য একই রকম ভাল কাজ আমি ভবিষ্যতেও করব।”
|
উদ্বোধনে সাংসদ
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
|
রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
সাংসদ তবহিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকায় রামপুরহাট পুরসভাকে একটি ‘রোড সুইপিং মেশিন’, একটি ‘ড্রেন ক্লিনিং মেশিন’ এবং একটি ভ্রাম্যমান টয়লেট দিলেন বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। শুক্রবার স্থানীয় রক্তকরবী মঞ্চে শতাব্দী তার উদ্বোধন করেন। ছিলেন পুরপ্রধান অশ্বিনী তেওয়ারি-সহ বিশিষ্ট জনেরা। পুরপ্রধান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পুরসভা একটি ভ্রাম্যমান টয়লেট সুড়িচুড়ায় বায়ুসেনাকে ৪৩ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন মেলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়িতে তা ভাড়া দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
|
পুরনো খবর: পদ ছাড়লেন শতাব্দী, কড়া বার্তার জল্পনা |
|
|
|
|
|