পদ ছাড়লেন শতাব্দী, কড়া বার্তার জল্পনা
শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের (এসএসডিএ) চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে গেলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তৃণমূলের অন্দরে যে ঘটনাকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া শৃঙ্খলারক্ষার কড়া বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শতাব্দী নিজে অবশ্য দাবি করছেন, ব্যস্ততার কারণে নিজেই ওই পদ থেকে সরে গিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল সূত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। তাঁদের বক্তব্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের এলাকায় এক রক্তদান শিবিরে যাঁরা প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করেছিলেন, তাঁদের সকলকেই কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। সে দিনের ঘটনার জেরে এক মেয়র পারিষদকে সরানোর পাশাপাশি শো-কজ করা হয়েছিল তিন সাংসদ কুণাল ঘোষ, তাপস পাল এবং শতাব্দীকে। এর পর কুণালকে সাসপেন্ড করা হলেও দলের কাছে ভুল স্বীকার করে নেওয়ায় ছাড় দেওয়া হয় তাপস-শতাব্দীকে। কিন্তু তাঁদের আচরণকে যে কোনও অবস্থাতেই হাল্কা করে দেখা হচ্ছে না, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শতাব্দীকে এসএসডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো সেই বার্তারই অঙ্গ বলে দাবি করছে দলের এই অংশটি।
শতাব্দী অবশ্য বৃহস্পতিবার বলেন, “এখন যাত্রাপালার মরসুম। সেখানে ব্যস্ত থাকার কারণে আমার পক্ষে ওই পদের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তা ছাড়া, আর কয়েক মাস পরেই লোকসভা ভোট। সেখানে লড়তে হলে ওই দু’টি পদ থেকে আমাকে ইস্তফা দিতেই হতো। বিষয়টি আমি মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেই জানিয়েছিলাম।”
বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তৃণমূল নেতারা কিন্তু দাবি করছেন, দলীয় নেতৃত্বের মনোভাবের আঁচ পেয়ে শতাব্দী সম্মানজনক ভাবে ওই পদ থেকে সরে গিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, লোকসভা নির্বাচন এখনও কয়েক মাস দূরে। এর আগে ওই পদে থাকা সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রতিবার ভোটের এক মাস আগে ইস্তফা দিতেন। ফলে শতাব্দীর এত আগে বিদায় নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। বীরভূমের সাংসদ যে মাসখানেক আগে জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
শৃঙ্খলা ভাঙা নেতাদের প্রতি কড়া বার্তার আরও উদাহরণ তুলে তৃণমূলের ওই সূত্র বলছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিল সাংসদদের একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। সেখানে তাপস পালের যাওয়ার কথা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরে তাঁর নাম ছেঁটে পাঠানো হয় আর এক সাংসদ নাদিমুল হককে।
সারদা-কাণ্ডে নাম উঠে আসা কুণালের বিরুদ্ধে তো দল ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে। রাজ্যসভায় তাঁর আসন অন্য তৃণমূল সাংসদদের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের সিডি দেখে সোমেনবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কিছু না-পাওয়ায় তখন তাঁকে ছাড় দেওয়া হলেও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। দল ছাড়ার সম্ভাবনার কথা আকারে ইঙ্গিতে একাধিক বার বলেছেন সোমেনবাবু। ইদানীং কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ওঠাবসা বেড়েছে। এই অবস্থায় আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের বিষয় নিয়ে নবান্নে যে বৈঠক ডেকেছেন মমতা, সেখানে সোমেনবাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।
দলের ওই কড়া অবস্থান সম্পর্কে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “রক্তদান শিবিরে ওই তিন সাংসদ যে ভাবে দলবিরোধী বক্তব্য পেশ করেছিলেন, তা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ তো বটেই, এক অর্থে বিদ্রোহেরও সামিল! দলে বিদ্রোহ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া তাই জরুরি ছিল।” বস্তুত, ওই ঘটনার পরে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বলেছিলেন, “তৃণমূল এখন যে শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তিভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কড়া পদক্ষেপ করতেই হবে। কোনও অবস্থাতেই শিথিলতা দেখালে চলবে না!”
শতাব্দীর জায়গায় এসএসডিএ-র চেয়ারম্যান করা হয়েছে বোলপুরের বিধায়ক, রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে। এই প্রথম কোনও বিধায়ক এসএসডিএ-র দায়িত্ব পেলেন। জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি পদেরও দায়িত্ব পেয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী চন্দ্রনাথ।
যে ঘটনা তৃণমূলের জেলা রাজনীতির সমীকরণের নিরিখেও তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল সূত্র বলছে, বীরভূমের অনেক নেতাই এখন আর অনুব্রতর কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত শতাব্দীর পাশে নেই। তাঁর যোগ দিচ্ছেন অনুব্রত শিবিরে। শতাব্দীর ইস্তফা প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেন, “আমাদের দলের অধিকাংশ কর্মী যা চাইছেন, সেটাই হয়েছে। যা হচ্ছে, পুরোটাই দিদির (মমতার) অনুমতি নিয়ে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।”
এই অবস্থায় লোকসভা ভোটে শতাব্দী টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। অনুব্রত বলেন, “এ ব্যাপারে দিদি যা বলবেন, তাই হবে।” শতাব্দী অবশ্য দাবি করছেন, “আমি ফের বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছি। দলের জেলা সভাপতি আমাকে সাহায্য করবেন বলেই আমার বিশ্বাস!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.