কাটোয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিকাংশ জমির মালিকদের সম্মতিপত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে এনটিপিসি। কিন্তু এনটিপিসি কর্তাদের বক্তব্য, চাষিরা যে অনিচ্ছুক নয়, কেবল এটুকু রাজ্যকে বোঝাতেই সম্মতিপত্রের প্রয়োজন। জমি কেনার জটিল প্রক্রিয়া এবং নানা আইনি সমস্যা সামাল দিতে এগিয়ে আসতে হবে রাজ্যকেই।
ঠিক কী ধরনের সমস্যা?
এনটিপিসি সূত্রের খবর: চাষিদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের থেকে নথিপত্র নিয়ে এবং স্থানীয়নের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গিয়েছে: • সিংহভাগ জমিমালিক লিখিত সম্মতি জানিয়েছেন সত্যি, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের জমির কাগজপত্র নিয়ে সংশয় রয়েছে। • দেড়শো একর জমি ছড়িয়ে রয়েছে দেবকুণ্ডু, চুড়পুনি ও শ্রীখণ্ড মৌজায়। তিন মৌজাতেই দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে জেলা বিচারকের অনুমতি লাগে। কিন্তু সেবাইতরা ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। • সরকারি নথি অনুযায়ী, দেড়শো একরে ১০১৪ জন মালিক আছেন। কিন্তু বেশির ভাগ জমিরই পরচা নেই, দলিলেও অজস্র ভুল।
গত দু’বছর ধরে খোঁজ নিয়ে এ রকম অন্তত সাত-আট রকম সমস্যার কথা জানা গিয়েছে। ফলে সম্মতিপত্র পাওয়া গেলেও জমির বৈধ মালিকের সংখ্যা ঠিক কত, তা নিয়েই এনটিপিসি অন্ধকারে। সংস্থার এক কর্তার কথায়, জমি কেনার সময় হয়তো একটি জমির জন্য অনেকে মালিকানা দাবি করে কোর্টে চলে যাবেন। তখন গোটা প্রকল্পই আটকে যেতে পারে।
এনটিপিসি সূত্রে খবর, ডিসেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যের হাতে জমিমালিকদের সম্মতিপত্র তুলে দিতে চাইছেন সংস্থার পূর্বাঞ্চলের কর্তারা। ওই সময়ে চাষিদের থেকে জমি কিনতে নেমেও কেন তাঁদের পিছিয়ে আসতে হতে পারে, তার ব্যাখ্যাও দেবেন তাঁরা। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “কী কারণে জমি কিনতে পারছি না তা যেমন বলব, চাষিরা জমি দিতে চাইছেন তা-ও জানাব।”
বর্ধমানের কাটোয়ায় ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল পূর্বতন বাম সরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অধিগ্রহণের নীতি থেকে সরে জানায়, শিল্প সংস্থাকে সরাসরি জমি কিনতে হবে। গোড়ায় আপত্তি থাকলেও এই শর্ত মেনে মাঠে নামে এনটিপিসি। প্রায় দু’বছর কাটোয়ায় ঘাঁটি গেড়ে থেকে প্রায় দেড়শো একর জমির ৯৮% মালিকের থেকে সম্মতিপত্র জোগাড় করেছেন সংস্থার অফিসারেরা। এর চেয়ে বেশি জমি কেনা অসম্ভব বুঝে প্রকল্পে কাটছাঁটও করা হয়েছে। ১৬০০ থেকে উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
সরাসরি জমি কিনতে হলেও যে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরি, তা গত এক বছরে বার বার জানিয়ে এসেছে এনটিপিসি। কয়েক মাস আগেও রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে কাটোয়ায় জমি অধিগ্রহণ করার আর্জি জানানো হয়েছিল। এনটিপিসি-র কর্তাদের বক্তব্য, অসংখ্য ছোট চাষির কাছ থেকে জমি কেনার আইনি ঝামেলা তো আছেই। সরাসরি জমি কেনার অভিজ্ঞতা তাঁদেরও নেই। সংস্থার পরিচালন পর্ষদের সদস্যেরাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রকল্পের জমি কিনতে হলে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নিয়েই এগোতে হবে।
এক সময়ে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের থেকে জোর করে জমি নেওয়ার বিরোধিতা করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁর সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না। কিন্তু সিংহভাগ জমিদাতার সম্মতিপত্র যেখানে এনটিপিসি-র হাতে, কাউকে জোর করার প্রশ্ন নেই ও সরকারেরও অস্বস্তিরও সম্ভাবনা নেই, চাষিদের সম্মতিপত্র দেখিয়ে সে বার্তাই দিতে চাইছে এনটিপিসি। রাজ্যের তরফে এ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চাননি। |