|
|
|
|
কাটোয়া বিদ্যুতে জমি দিতে সম্মতি প্রায় সব মালিকেরই
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
প্রকল্প রূপায়ণের জন্য দরকার ছিল আরও দেড়শো একর জমি। প্রকল্প নির্মাতাকে তা কিনে নিতে হবে। জমি বিক্রির ব্যাপারে প্রায় সমস্ত মালিক লিখিত ভাবে সম্মতিও জানিয়েছেন। আগামী মাসে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের হাতে সেই সব ‘সম্মতিপত্র’ তুলে দেবেন নির্মাণকারী এনটিপিসি’র কর্তৃপক্ষ।
ফলে কাটোয়ায় এনটিপিসি’র ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলতে জটিলতা থাকার কথা নয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় সংস্থাটির কর্তারা। তাঁদের মতে, যদি এ বার ওই জমি নির্মাতাকে হস্তান্তরের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ করে, তা হলে সমস্যার দ্রুত সুরাহা হতে পারে।
১৬০০ মেগাওয়াটের তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য বাম আমলে কাটোয়ায় ১০৭১ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। পূর্বতন সরকার তার ৫৬৫ একর অধিগ্রহণ করে এনটিপিসি-র হাতে তুলে দেয়। কিন্তু আড়াই বছর আগে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে জানায়, রাজ্য আর জমি অধিগ্রহণ করবে না। প্রকল্পের নির্মাণকারীকেই প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করতে হবে। ফলে কাটোয়া প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ঘিরে শুরু হয় সরকার সঙ্গে এনটিপিসি’র টানাপোড়েন। শেষমেশ জটিলতা কাটাতে এগিয়ে এসেছে নির্মাতা সংস্থাই। কী রকম?
জমি-সঙ্কট মোকাবিলায় প্রস্তাবিত তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ও আয়তন ছাঁটাই করা হয়েছে। এনটিপিসি’র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী কিছু দিন আগে কলকাতায় এসে জানিয়ে গিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পনা মতো ১৬০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প কাটোয়ায় করা যাবে না। পরিবর্তে তাঁরা তুলনায় কম জমিতে ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাবেন। এবং সে জন্য আরও যে দেড়শো একর প্রয়োজন, তার মালিকদের ৯৭% জমি বিক্রির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন বলে এনটিপিসি’র দাবি। স্থানীয় প্রশাসন-সূত্রের খবর, দেড়শোর মধ্যে ১৪৮ একরের মালিকদের সম্মতিপত্র হাতে পেয়েছে এনটিপিসি । বাকি দু’একরের মালিকের খোঁজ মিলছে না। এনটিপিসি-সূত্রের খবর: তাদের হাতে আসা সব সম্মতিপত্র বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে দেখানো হয়েছে।
সংস্থা এ বার সেগুলো রাজ্যের হাতে তুলে দিয়ে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা হস্তান্তরে প্রশাসনের সাহায্য চাইবে। “জমি হাতে পেতে সরকার সাহায্য করলে কাটোয়া প্রকল্পের যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।” বলছেন এনটিপিসি-র এক কর্তা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই দেড়শো একর হাতে না-এলে প্রকল্পের নক্শা কিংবা অন্যান্য পরিকল্পনা রচনা করা যাবে না। চেয়ারম্যানের মন্তব্য, “আমাদের পছন্দের প্রকল্প-তালিকায় সবার আগে রয়েছে কাটোয়া তাপ-বিদ্যুৎ। আমরা সেটি গড়তে চাই।”
রাজ্যের কী বক্তব্য?
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্তের জবাব, “আমাদের তরফে গোড়া থেকেই ওদের বলা হয়েছে জমি কিনে নিতে।” অন্য দিকে এনটিপিসি’রও আশা, মালিকদের অনুমতিপত্র হাতে আসায় জমি কেনার বিষয়ে প্রশাসন এখন সহযোগিতা করবে। এনটিপিসি’র পূর্বাঞ্চলীয় একিজিকিউটিভ ডিরেক্টর সপ্তর্ষি রায়ের কথায়, “তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কাটোয়ার মানুষ স্বেচ্ছায় জমি দিতে চান। ওঁদের ইচ্ছে, প্রকল্পটি কাটোয়ায় হোক।”
এ দিকে কিছু জমি-মালিকের আপত্তিতে রঘুনাথপুরে ডিভিসি’র বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এগোতে পারছে না। অথচ কাটোয়ার জমিদাতারা সেই বিদ্যুৎ প্রকল্পেই জমি দিতে তৈরি! কেন?
কাটোয়ায় প্রস্তাবিত প্রকল্প-এলাকার মধ্যে চুড়পনি, রাজুয়া, দেবকুণ্ডু গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা উজ্জ্বল গুপ্ত, অশোক ঘোষ, মুজুবর রহমান, সুশান্ত ঘোষেদের কেউ কেউ তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্পে আগেই জমি দিয়েছেন, কেউ জমি দেওয়ার সম্মতিপত্র পাঠিয়েছেন। এবং তাঁরা বলছেন, “প্রকল্প হলে তো আমাদেরই লাভ! এলাকার চেহারা বদলে যাবে।”
কিন্তু মোট ৭১৫ একরে (৫৬৫+১৫০) কি ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্পও ঠিকঠাক নির্মাণ করা সম্ভব? এনটিপিসি’র বক্তব্য, ওই জমিতে শুধুমাত্র তাপ-বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রই হবে। কিন্তু তাকে ঘিরে কোনও সামাজিক পরিকাঠামো (কর্মী-আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি) করা যাবে না। সে সব তৈরি হবে দূরে কোথাও।
|
সহ প্রতিবেদন: সৌমেন দত্ত। |
পুরনো খবর: উৎপাদন ছাঁটাই, কাটোয়া ঘিরে তবু সংশয় |
|
|
|
|
|