রাস্তা জুড়ে শুধুই খানাখন্দ। তার উপর কখনও দুর্ঘটনা, কখনও গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ বিকল লেগেই রয়েছে। অথচ এই রাস্তাই ভরসা প্রায় ৫০টি গ্রামের। কালনার নিভুজি বাজার-হরিশঙ্করপুর রোডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহ, মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও এই রাস্তার দুর্ভোগ থেকে রেহাই মেলে না।
২০১০ সালে রাস্তাটি পিচ ঢেলে নতুন করে তৈরি ও চওড়া করার পরিকল্পনা করে পূর্ত দফতর। ১১ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের গাছ কেটে মাটিও ফেলা হয়। হরিশঙ্করপুরের দিকেও রাস্তাটি নতুন করে গড়তে পুরনো পাথর তুলে ফেলা হয়। কিন্তু রাস্তার কাজ কিছুটা এগোনোর পরেই কাজে বাধা দেন বাঘনাপাড়া, উপলতি, ভাটরা-সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তাটি চওড়া করার জন্য সরকারি ভাবে জমি অধিগ্রহণের সময় বহু পরিবারের জমি যায়। সরকারের তরফে কিছু চাষিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও অনেকেই সেই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যান। তাঁদের দাবি, ক্ষতিপূরণের টাকা চেয়ে বছরের পর বছর আবেদন করেও কোনও ফল মেলেনি। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক, পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা একাধিকবার চাষিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। টাকা ফেরত দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতিও দেয় প্রশাসন। কিন্তু চাষিরা লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করেন। তা না মেলায় মাঝপথেই থমকে যায় পাকা রাস্তা তৈরির কাজ।এ দিকে মাঝপথে কাজ থমকে যাওয়ায় কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থাও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। তারপর থেকে পঞ্চায়েত, মহকুমা থেকে জেলা স্তরে বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও রাস্তার কাজ আর শুরু হয়নি। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যে রাস্তাটির গর্তের হাল এতটাই খারাপ থাকে যে যানবাহন চলাচলের মতোও পরিস্থিতি থাকে না। গর্ত বোজাতে ঝামা ইট ফেলা হয়। কিন্তু তাতে গর্ত বুজলেও ইটের উপর দিয়ে যাওয়া-আসা করতে বাস বা লরির যে ঝাঁকুনি হয় তাতে গাড়ির নানা যন্ত্রাংশ ভেঙে যায় বলে অভিযোগ। আর মোটরবাইক বা ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে তো পরিস্থিতি আরও খারাপ। অনেকসময়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মনিরুল শেখের অভিযোগ, “এই রাস্তায় গাড়ি ভাঙে না এমন কোনও দিন নেই। অনেকেই গর্তের ঝাঁকুনিতে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যান।” ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ১০টি বেসরকারি বাসও চলে। বাসমালিকেরাও বাস চালাতে আতঙ্কে ভোগেন। এমনই এক বাসমালিক বাপন ঘোষের কথায়, “গাড়ি চালাতে চালাতেই ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি মাঝ রাস্তায় টায়ার ফেঁসে গেল।”
একসময় টাকা না পেলে রাস্তা করতে দেওয়া হবে না এই দাবিতে যাঁরা সরব হয়েছিলেন সেই চাষিদের অনেকেই এখন হতাশ। তাঁদের দাবি, তিন বছর ধরে টানাপোড়েন চলবে ভাবিনি। যদিও পূর্ত দফতরের কালনা শাখা জানিয়েছে, যে সমস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল তাঁদের একাংশকে ইতিমধ্যেই টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই টাকা বিলির শংসাপত্রও দফতরে চলে আসবে। এছাড়া যে সমস্ত চাষিরা এখনও টাকা পাননি তাঁদের টাকা মেটানোর ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে। পূর্ত দফতরের (সড়ক) কালনা শাখার সহ-বাস্তুকার সুনীতি বিশ্বাস বলেন, “চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি কবে নাগাদ মিটবে তা বলা সম্ভব নয়। আপাতত যানবাহন চলাচলের স্বার্থে ঝামা ফেলে গর্ত বোজানোর কাজ শুরু হয়েছে।” তবে পূর্ত দফতরের আরেক আধিকারিকের দাবি, চাষিদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা মিটলেও আগের বাজেটে ওই রাস্তা করা এখন আর সম্ভব নয়। কারণ মালপত্রের দাম তিন বছরে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ফলে নতুন বাজেট তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি কোন খাত থেকে সেই টাকা দেওয়া হবে তাও ঠিক করতে হবে। তারপর টেন্ডার ডাকা ও অন্যান্য কাজ সারতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
রাস্তা নিয়ে টানাপোড়েন থেকে এলাকাবাসী রেহাই পাবেন কবে, সেই প্রশ্ন আপাতত প্রশ্নই রয়ে গেল। |