কোনও চক্রে পাঁচ বছর তো কোথাও সাত বছর ধরে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক নেই। ফলে কোথাও একজনকে এসআইকে দু’টি চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে, আবার কোথাও সরকারি সুযোগ সুবিধে থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠছে।
বর্ধমান জেলা শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ৪৯টি চক্র রয়েছে। প্রতিটি চক্রে একজন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের থাকার কথা। অথচ আসানসোল, গলসি, বুদবুদ, গলসি (পশ্চিম), দুর্গাপুর ১, হিরাপুর, কাঁকসা ১, কাটোয়া পূর্ব, কেতুগ্রাম, খণ্ডঘোষ ১, মঙ্গলকোট ১, মন্তেশ্বর ৩, পাণ্ডবেশ্বর, পূর্বস্থলী (উত্তর), রায়না ১, রায়না ২, বর্ধমান সদর উত্তর ও পশ্চিম- এই ১৮টি চক্রে কোনও এসআই নেই। ফলে এক জন এসআইকে কার্যত দু’টি চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এর উপর এসআই দফতরগুলিও কর্মী সঙ্কটে ধুঁকছে বলে অভিযোগ। ফলে বেশিরভাগ দফতরে ‘শিক্ষা বন্ধু’রাই কর্মীরা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
কী কাজ এই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের? পড়াশোনার মান বজায় রাখা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা দেখার জন্য মাঝ্যেমধ্যেই স্কুল পরিদর্শনে করতে হয় তাঁদের। কর্মরত শিক্ষকদের বেতনের বিল তৈরির পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনশনের কাগজপত্রও তৈরি করতে হয় এসআইদের। এছাড়া স্কুলগুলিতে পড়ুয়ারা নিয়ম করে মিড-ডে মাল পাচ্ছে কি না, তার মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করে বিডিও ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে পাঠানো, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কৃমি ও আইরনের ওষুধ দেওয়া, স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের সমন্বয় দেখা, সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকায় স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে তদারকি, স্কুলছুটদের হিসেব রাখার দায়িত্বও এসআইদের। |
এসআই না থাকায় এবং কর্মী সঙ্কট হওয়ায় স্কুলের একটা কাজ নিয়ে একাধিকবার এসআইয়ের দফতরে যেতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষকদের মধ্যেও। শিক্ষকদের অভিযোগ, এসআই না থাকায় স্কুলের সমস্যার কথা জানানো যাচ্ছে না। একই কাজে বারবার এসআইয়ের দফতরের যেতে হওয়ায় স্কুলের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রাথমিক জেলা স্কুল পরিদর্শক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দিনই এসআইদের সঙ্গে শিক্ষকদের ঝামেলা হচ্ছে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগ করছেন। প্রাথমিক জেলা স্কুল পরিদর্শক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছে শিক্ষা সংসদের এক কর্তা জানিয়েছেন, যে সব জায়গায় এসআই নেই, সেখানকার শিক্ষকদের সঙ্গেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআইদের গোলমাল হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি দেবাশিষ নাগও বলেন, “এসআই কম থাকায় আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিদর্শক দফতর (ডি আই) সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সব চক্রে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বেশ কিছু চক্রের পড়ুয়ারা এখনও পোশাকের ৪০০ টাকা পায়নি বলেও অভিযোগ।
তবে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিদর্শক মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “কিছুদিন আগে সাত জন এসআই নিয়োগ করা হয়েছে। বাকি শূন্যস্থানও ধীরে ধীরে পূরণ করে ফেলা হবে।” |