সন্ধে হলেই ভিড় জমে যাচ্ছে মেলায়। পাকা রাস্তার উপরে অসংখ্য মানুষ। হাসিমুখেই মেলার মাঠে গিয়ে তাঁদের সে হাসি উধাও হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন, ‘আজ পাঁচ দিন হল মেলার কিন্তু নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ, চিত্রাহার কোথায়’?
১৭ নভেম্বর কোচবিহার রাসমেলা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেলার পঞ্চম দিনে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু বলেন, “এক মেলা সেরে তার পরেই নাগরদোলা-সহ বেশ কিছু জিনিস নিয়ে তাঁরা রাসমেলায় হাজির হয়। আর দু’একদিনের মধ্যে সব চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি। তখন আর কাউকে নিরাশ হতে হবে না।”
কোচবিহার তো বটেই, উত্তরবঙ্গ, অসমের মানুষজনও রাসমেলার জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন। মেলা শুরুর দু’একদিনের মধ্যে থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে। এ বারেও মেলায় তার অন্যথা হয়নি। মেলা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে মেলায় সার্কাস দেখতে ভিড় জমতে শুরু করে দিয়েছে। দেশের নানা জায়গা থেকে দোকানিরা তাঁদের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায়। শীত পোশাক নিয়ে সিকিম, দার্জিলিং থেকেও দোকানিরা হাজির। বাংলাদেশ থেকে জামদানি শাড়ি, নোনা ইলিশ, কাপ-ডিশ নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকে। ভেটাগুড়ি ও বাবুরহাটের জিলিপির মধ্যে লড়াইও শুরু হয়েছে।
এর পাশাপাশি রাসমেলা মাঠে নানা অনুষ্ঠানের আসর বসছে, সেখানে স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও অসম, কলকাতা, দিল্লি থেকে শিল্পীরা তাঁদের গানের ডালি নিয়ে হাজির। রকমারি আলোয় সাজিয়ে তোলা মদনমোহন দেবের মন্দিরে প্রতি দিনই নিয়ম করে ধর্মীয় গানের আসর বসছে।
সবই ঠিক আছে, কিন্তু রাসমেলার মাঠের ভিতরে ঢুকে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে সকলের। মাঠের একটি পুরো অংশে বসে নাগরদোলার আসর। ছোট বড় মিলিয়ে নানা ধরনের নাগরদোলা হাজির হয় সেখানে। এ বারও এসেছে, এবং তাঁরা নাগরদোলা সাজানোর কাজ শুরু করেছে। কিন্তু যা অবস্থা তাতে তিন দিনের আগে সব কাজ শেষ করে নাগরদোলা শুরু করার কথা ভাবছেন না তাঁরা। একই অবস্থা মৃত্যুকূপ এবং চিত্রাহারের দলের। মৃত্যুকূপ তৈরির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। কর্মীরা জানালেন, হ্যামিলটনগঞ্জে কালীমেলায় গিয়েছিলেন তাঁরা। মেলা শেষ করে তাঁরা হাজির হয়েছেন রাসের মেলায়। তাঁরা বলেন, “প্রতিবার আমরা আসি। তবে এ বার খানিকটা দেরি হয়েছে।”
বুধবার রাতে মেলায় গিয়েছিলেন দিনহাটার বাসিন্দা অশোক মজুমদার। তিনি বলেছেন, “ছেলেমেয়েদের নিয়ে মেলায় এসেছি। সবই ঠিক আছে, কিন্তু নাগরদোলা না থাকায় মেয়ের খুব রাগ হয়েছে। তাই ওর জন্য আবার মেলায় আসব।” বৃহস্পতিবার মেলায় যান কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি, পূর্ত দফতরের সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ দেখতে ছোটরা পছন্দ করে। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের খারাপ লাগছে। দু’এক দিনের মধ্যেই সব তৈরি হয়ে যাবে।” |