এ যেন প্রদীপের নীচে অন্ধকার! রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা ঘিরে কোচবিহার আলোয় সেজেছে। মদনমোহন বাড়িতে বসেছে বাহারি আলোর কমলালেবু গাছ। অথচ সন্ধ্যায় অন্ধকারে মুখ ঢাকছে রাজবাড়ি। ফলে রাজবাড়িকে সামনে রেখে জেলায় পর্যটক টানার সদিচ্ছা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। গ্রাম-গঞ্জ থেকে রাসমেলা দেখতে আসা বাসিন্দারাও সিংহদুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে একঝলক রাতের রাজবাড়ি দেখতে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। তার পরেও রাজবাড়ির অন্ধকার ঘোচাতে পুরাতত্ত্ব বিভাগ কিংবা জেলা প্রশাসন কারও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “আগে এমন ঘটনার কথা কেউ জানাননি। খোঁজ নিয়ে আমাদের তরফে আলো ফের জ্বালানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।”
১৮১২-এ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে রাসমেলা শুরু করেন। ১৮৮৯-৯০ নাগাদ শহরে বৈরাগীদিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠার পর লাগোয়া এলাকাতেই বসছে রাসমেলা। তারও বছর তিনেক আগে ১৮৮৭ সালে কোচবিহার শহরের বর্তমান রাজবাড়ি তৈরি হয়েছিল। ষাটের দশক পর্যন্ত মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ওই রাজবাড়ি থেকেই মদনমোহন মন্দিরে গিয়ে রাস উত্সবের উদ্বোধন করতেন। অথচ দুশো বছরের প্রাচীন রাসমেলা নিয়ে জাঁকজমকের মধ্যেও অন্ধকারে রয়েছে রাজাদের বাড়ি।
অথচ দু’সপ্তাহ আগেও আলোয় ঝলমল করত রাজবাড়ি। উজ্জ্বল সাদা আলো ঠিকরে পড়ত প্রাসাদের গম্বুজে। দিন পনেরো হল সে সব বন্ধ। যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ায় সাদা আলো আর ঠিকরে পড়ছে না। দেওয়ালের শৈল্পিক কারুকাজের চোখ জুড়নো নির্দশনগুলি তাই অন্ধকারে দেখা মুশকিল।
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, “এ সময়ে রাজবাড়িকে তুলে ধরে, রাসমেলার ভিড়কে কাজে লাগিয়ে পর্যটনের প্রচার করার দরকার ছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজবাড়িই অন্ধকার হয়ে থাকছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ থেকে প্রশাসন কেউ রাজবাড়ি নিয়ে যে ভাবছে না, তাও স্পষ্ট হয়েছে।”
পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে রাজবাড়িকে সাদা আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়ে। যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় মাঝে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫ সাল নাগাদ পর্যটন দফতর রঙিন আলোয় রাজবাড়িকে সাজিয়ে তুললেও প্রায় দেড় বছর ধরে তাও বিকল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে তাই ফের পুরানো সাদা আলো মেরামত করে রাজবাড়িকে আলোকিত করা হচ্ছিল। দু’সপ্তাহ আগে ওই সাদা আলোক স্তম্ভের চারটি ইউনিটের একটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে যায়। অন্য তিনটি স্তম্ভের আলোয় অন্ধকার কাটছে না। বিকল ইউনিট মেরামত না করা পর্যন্ত তাই আলো বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজবাড়ির কর্মীদের একাংশ জানান, স্থানীয় ভাবে আলোর যন্ত্রাংশ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছিল। বেলজিয়ামে তৈরি ওই যন্ত্রাংশ জেলার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরাতত্ত্ব বিভাগের রাজবাড়ি শাখার আধিকারিক ধীরেন্দ্র সিংহ বলেন, “যন্ত্রাংশ মেরামত করে আলো জ্বালানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
|