হাসপাতালে রাতে কেন,
আইনজীবীর প্রশ্ন প্রত্যক্ষদর্শীকেই
হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে দেখা করার কথা সকালে ও বিকেলে। তা সত্ত্বেও কেন রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সজল ঘোষ হত্যা মামলার শুনানিতে অভিযোগকারী তথা অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করলেন প্রধান অভিযুক্ত প্রদীপ সাহার আইনজীবী।
ছাত্র, অভিভাবক বা পরিচালন সমিতির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ঘটনার দিন দুপুরে কলেজে গিয়েছিলেন কেন, মঙ্গলবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজের আদালতে প্রদীপবাবুর আইনজীবী প্রতিম সিংহরায় পঙ্কজবাবুকে এই প্রশ্ন করার পরে শেষ হয়েছিল মামলার দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের। এক দিন বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে ঠিক যেন সেখান থেকেই জেরা শুরু করলেন প্রতিমবাবু। আগের দিনের মতো এ দিনও নীল-সাদা ফুলহাতা টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে আদালতে হাজির ছিলেন প্রধান অভিযুক্ত প্রদীপবাবু। এ দিন জেরার শুরুতেই অভিযুক্তদের কৌঁসুলি প্রতিমবাবু পঙ্কজবাবুর কাছে জানতে চান, ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি দুপুরে পারুলিয়া কলেজে ঠিক কী ঘটেছিল। নানা প্রশ্নের উত্তরে পঙ্কজবাবু জানান, ওই কলেজে গোলমালের সময়ে তিনি বাইরে রাস্তা থেকে দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখেছিলেন। আহতদের ভর্তির ব্যাপারে তিনি কিছু করেননি। অন্যদের কাছ থেকে সব শুনেছিলেন। নিজে তখন হাসপাতালেও যাননি বলে দাবি করেন তিনি।
এর পরেই প্রতিমবাবু প্রশ্ন করেন, সাক্ষী নিশ্চয়ই জানেন যে সরকারি হাসপাতাল একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলে। পঙ্কজবাবু বলেন, “চলা উচিত।” নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ম মেনে চলে না, এ নিয়ে উপর মহলে কোনও দিন কোনও লিখিত অভিযোগ করেছেন কি না, সে প্রশ্নে পঙ্কজবাবু বলেন, “তেমন পরিস্থিতি এখনও আসেনি।” তার মানে সাক্ষীর মতে নবদ্বীপের ওই হাসপাতাল নিয়ম মেনেই চলে, এই মন্তব্য করে কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, “হাসপাতালের দেওয়ালে লেখা রয়েছে রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সকাল ১০টা থেকে ১১টা ও বিকেল ৪টে থেকে ৬টা। অথচ, ৯ জানুয়ারি, ২০১২ রাতে আপনি হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। ওই সময়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকার অনুমতি আপনার কাছে দিল?” পঙ্কজবাবু বলেন, “আমি বিধায়কদের সঙ্গে ছিলাম। তিনি হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মীকে বলে ভিতরে ঢোকেন। তাঁর সঙ্গে আমিও ঢুকি।” বিধায়ক কাকে বলেছিলেন এবং যিনি অনুমতি দেন, তাঁর নাম কী, সে প্রশ্নে সাক্ষী বলেন, “জানি না।” সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে বিধায়ক তাঁদের নিয়ে ঢোকার সময়ে অনুমতি নিয়েছিলেন কি না বা যে ডাক্তারের অধীনে আহতেরা ভর্তি ছিলেন, তাঁর অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্নে সাক্ষীর জবাব, “বলতে পারব না।”
এর পরেই কৌঁসুলি জানতে চান, ওই রাতে তাঁরা বিধায়কের সঙ্গে কোথা থেকে, কী ভাবে, কোন পথে, কত জন হাসপাতালে যান। সাক্ষী জানান, বিধায়কের সঙ্গে এক জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তবে তাঁর নাম তিনি জানাতে পারেননি। কৌঁসুলি একের পর এক প্রশ্ন করে জেনে নে, হাসপাতালের এক তলার বিভিন্ন ঘরে কে কোথায় ডিউটি করছিলেন। প্রতিমবাবু জানান, হাসপাতালে ঢোকার প্রথম গেটটি বা জরুরি গেটটি দিয়ে ভিতরে ঢোকার পরে ভিতরে আরও একটি গেট থাকে ওয়ার্ডে ঢোকার জন্য। রোগীদের নিরাপত্তার জন্য সেই গেট রাতে বন্ধ থাকে ও কর্মী থাকেন। এই সময়ে পঙ্কজবাবু বলে ওঠেন, “গেটটি খোলা ছিল ও কোনও লোক ছিলেন না।” গেট খোলা দেখে ভিতরে ঢুকে পড়লেও পরে জন প্রতিনিধি হিসেবে হাসপাতাল সুপারের কাছে কোনও অভিযোগ করেছিলেন কি না, সে প্রশ্নে সাক্ষী বলেন, “সম্ভব হয়নি।” সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় আপত্তি তোলেন, একই প্রশ্ন বারবার করা হচ্ছে।
এর পরে পঙ্কজবাবুর কাছে কৌঁসুলি জানতে চান, অত রাতে হাসপাতালে যাওয়ার ব্যাপারে ভর্তি থাকা রোগীদের বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে কিছু জানানো হয়েছিল কি না। সাক্ষী জানান, তা হয়নি। সাক্ষী কাদের সঙ্গে দেখা করেন, ভর্তি থাকা এসএফআই নেতা সন্তু ভৌমিকের সঙ্গে কোনও কথা বলেছিলেন কি না, এ সব জানতে চান কৌঁসুলি। তার পরেই তিনি জানান, সাক্ষী এফআইআরে লিখেছেন, সন্তু ভৌমিকের সঙ্গে এক অপরিচিত ছেলে দেখা করতে আসেন। সেই ছেলেটির কোনও নির্দিষ্ট বিবরণ কোথাও জানিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্ন করেন প্রতিমবাবু। পঙ্কজবাবুর জবাব, “পরে আমাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, জানিয়েছি।” প্রতিমবাবু এর পরে সাক্ষীর বিরুদ্ধে চলা দু’টি মামলার কথা উল্লেখ করে সেগুলি এখনও চলছে কি না জানতে চান। সাক্ষী জানান, তা চলছে। এই দু’টি মামলায় তিনি কত দিন জেলে ছিলেন, তা জানতে চাইলে পঙ্কজবাবু বলেন, “২৮ বা ৩০ দিন।” এই পর্বে দশ মিনিটের বিরতি হয়।
বিরতির পরে আদালত কক্ষে হাজির পূর্বস্থলীর (উত্তর) তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে দেখিয়ে কৌঁসুলি জানতে চান, “ইনিই কি বিধায়ক?” ইতিবাচক উত্তর দেওয়ার পরে সাক্ষীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সেই রাতে যাঁরা বিধায়কের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের কার কোথায় বাড়ি, নবদ্বীপ হাসপাতালে যাওয়ার পরিকল্পনা কী ভাবে হয়েছিল, কখন কোথা থেকে তাঁরা রওনা দেন ইত্যাদি। সাক্ষী বলেন, “রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বিধায়কের অফিস থেকে।” সিপিএম পার্টি অফিস বা প্রদীপ সাহাকে তাঁরা এই হাসপাতালে যাওয়ার কথা ফোনে জানিয়েছিলেন কি না, তা জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন, “জানাইনি।” হাসপাতালের বাইরের গেট, রাস্তা, সীমানা পাঁচিল, দোকান ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন কৌঁসুলি।
জেরার শেষ পর্বে প্রতিমবাবু সাক্ষীর কাছে প্রদীপ সাহা ও পারুলিয়া কলেজ প্রসঙ্গে নানা প্রশ্ন করেন। প্রদীপবাবুর চেষ্টায় পারুলিয়া কলেজ স্থাপিত হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নে পঙ্কজবাবু বলেন, “কারও একার প্রচেষ্টায় নয়, অনেকের চেষ্টায় কলেজ হয়েছে।” গত বিধানসভা ভোটে তপনবাবু ও প্রদীপবাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কি না, ভোটের ফলাফল, প্রচার নিয়েও প্রশ্ন করা হয় সাক্ষীকে।
এর পরেই প্রতিমবাবু সাক্ষীর উদ্দেশ্যে বলেন, “ওই রাতে হাসপাতালে কোনও ঘটনা ঘটেনি। যা যা অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা। ওই রাতে পঙ্কজবাবু বা প্রদীপ সাহা, কেউ যাননি। সব মিথ্যা বলা হচ্ছে।” পঙ্কজবাবু পাল্টা বলেন, “যা বলা হয়েছে, সব সত্য।” কৌঁসুলি শেষ প্রশ্ন করেন, “যে স্ট্রেচারে করে সজল ঘোষকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই স্ট্রেচারে সে দিন কত জন রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা জানেন?” সাক্ষী জানান, তা তাঁর জানা নেই। ফের শুনানি ২৫ নভেম্বর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.