ওঁদের তিন জনের কাছে লড়াইটা তিন রকম। নিজের খাসতালুকে সম্মান ধরে রাখার লড়াই ওঁর। দলের জয় নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নন তিনি। কপালে ভাঁজ ফেলছে একটাই প্রশ্ন, ‘গত দু’বারের মতো বিরোধী শূন্য হবে তো!’ সম্মানটা জড়িয়ে রয়েছে
সে প্রশ্নেই। তিনি দেশের রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
আগে ছিল মত্স্য। এখন দফতর বদলেছে তাঁর। উদ্যান পালনের সঙ্গে বাড়তি দায়িত্ব খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরেরও। তিনি সুব্রত সাহা।
পুরনো কংগ্রেস কর্মী সুব্রতর হাত থেকে দলের ক্ষমতার অনেকটাই ‘কেড়ে’ নেওয়া হয়েছে। মুখ বুজে সয়েছেন তা। একদা তাঁর চরম বিরোধী কংগ্রেস-ত্যাগী হুমায়ুন কবীরকে মাথার উপরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও মুখে রা কাটেননি তিনি। বহরমপুরের পুর নির্বাচনেও নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্বও নেই। তবু ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত এই সব ‘অপমানেরই’ একটা জবাব দিতে ‘কিছু করে দেখাতে’ চান। নিজের এলাকায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে তিনি বলছেন, “পুরসভার প্রয়োজন হবে না। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীকে নির্বাচিত করুন। মন্ত্রী হিসাবে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেব ওয়ার্ডে।”
তৃতীয় জন, হুমায়ুন কবীর। একদা তাঁর ‘বড়দা’ অধীরের ঘোর ন্যাওটা। প্রায় ডান হাত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মতানৈক্যের জেরে বড়দার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতেই শাসক দলের টোপ গিলে মন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন।
উপনির্বাচনে নিজেকে প্রমাণ করতে না পেরে মাথা নিচু করা দলে থেকে গেলেও তৃণমূলের জেলা নেতাদের অনেকেরই মত, হুমায়ুনের এটাই শেষ রাজনৈতিক লড়াই। পুর নির্বাচনে তৃণমূলকে কিছুটা ‘সম্মান’ ফিরিয়ে দিতে না পারলে দলনেত্রী যে তাঁকে আর ‘ভরসা’ করবেন না, বিলক্ষণ জানেন হুমায়ুন।
১৯৯৮ সালে ১ জানুয়ারি তৃণমূলের জন্ম হওয়ার পরে, ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে বহরমপুর পুরভোটের প্রচারে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন বারই খাতা খুলতে পারেনি তারা। এমনকি দ্বিতীয় স্থানেও ছিল না। অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছিল। অন্য দিকে, অধীরের নেতৃত্বে কংগ্রেস তিন বারই বিরোধী শূন্য বোর্ড গড়ে।
২০০৬ সালে এবং ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য জুড়ে জোট হলেও মুর্শিদাবাদে অধীর তা ভেঙে দেন। হাইকমান্ডের নির্দেশ তোয়াক্কা না করেই নির্দল প্রার্থী দিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের ঝুলি এ জেলায় শূন্যই থেকে যায়। ২০১১ সালে জোড়া ফুলের ভরা জোয়ারে সান্ত্বনা কেবল সাগরদিঘি কেন্দ্র।
এ অবস্থায় ওঁরা তিন জনেই চান ‘স্বপ্ন’ সফল করতে। ভোট প্রচারে ময়দানে তাই রাজ্য রাজনীতির তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা। মুকুল রায়-সহ চার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুব্রত সাহা। কংগ্রেস মাঠে নামিয়েছিল প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক নির্বেদ রায়কে। খোদ অধীর গত তিন সপ্তাহ ধরে মাটি কামড়ে বহরমপুরে।
নিজের ‘সম্মান’গুলো ধরে রাখতে পারবেন তো ওঁরা? আঠাশটা ওয়ার্ডের মানুষ আজ তারই উত্তর দেবেন। অপেক্ষার তারই। |