নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে গ্রেফতার বাবা
প্রতিবেশীরা বারণ করেছিলেন। কিন্তু সে কথা কান না দিয়ে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মোর্তাজুল। মঙ্গলবার সেই বিয়ের আসরেই হাজির হয় পুলিশ। বিয়ে ভেস্তে গিয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রেফতারও করা হয়েছে মোর্তাজুলকে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের নাবালিকা বিবাহ রোধ আইনের ৯, ১০ ও ১১ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বুধবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে তাঁর ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোর্তাজুলের তিন মেয়ে। তিন জনেই নাবালিকা। এর মধ্যে বড় মেয়ে বছর পনেরোর ওই নাবালিকা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। তারই বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশের গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক রবিউল শেখের সঙ্গে। রবিউলও দিনমজুরের কাজ করেন। মঙ্গলবার ছিল বিয়ের দিন। হরিহরপাড়া থানার ওসি অরূপ রায় বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি বিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আমাদের দেখেই পাত্রপক্ষ পালায়। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। মেয়ের বাবাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে।” মোর্তাজুল জানান, তাঁরা খুবই গরিব। তাই ভাল পাত্রের সন্ধান পেয়ে প্রতিবেশীদের কথা শুনে বিয়ে থেকে পিছিয়ে আসতে রাজি হননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি অনুতপ্ত। তিনি বলেন, “আমি ভুল করেছিলাম। আর ভুল করব না।” ওই নাবালিকা এখন তার বাড়িতেই রয়েছে।
বহরমপুর-হরিহরপাড়া রাজ্য সড়কের নিশ্চিন্তপুর মোড় থেকে ভাঙাচোরা রাস্তায় প্রায় ১২ কিলোমিটার গেলে জগন্নাথপুর গ্রাম। গ্রাম থেকে কাউকে বাস ধরতে গেলে ওই ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারই পেরিয়ে আসতে হবে। গ্রামের বাসিন্দাদের বেশিরভাগেরই জীবিকা দিনমজুরি। স্থানীয় লালনগর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সারওয়ার্দি বিশ্বাস বলেন, “জেলার অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা আমাদের অঞ্চলটি। স্বাক্ষরতার হার ৪০ শতাংশেরও নীচে।” বর্ষাকালে আশপাশের রাস্তা ডুবে যায়। যেন একটা দ্বীপের মতো ভেসে থাকে এই গ্রাম। সারওয়ার্দি বলেন, “শিক্ষার অভাবেই সচেতনতার অভাবও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুঃসহ দারিদ্র। যে কারণে এই এলাকায় নাবালিকা বিবাহের প্রথা এখনও বন্ধ হয়নি।”
বহরমপুরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কথায়, “হরিহরপাড়ার বেশ কিছু এলাকাতেই নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। আমরা ওখানে সচেতনতার শিবির করেছি। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে তাতে যথেষ্ট কাজ হয়নি। তাই আরও এরকম শিবির করতে হবে।” এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, অঞ্চলের উন্নয়ন না হলে এই ধরনের প্রথা পুরোপুরি উঠে যাবে না। বিশেষ করে, যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি করতে হবে। বিডিও রাজর্ষি নাথের বক্তব্য, “যে সব নাবালিকা বিবাহের বিরোধিতা করেছে, তাদের আমরা সম্প্রতি পুরস্কৃত করেছি। যাতে তাদের দেখে অন্যেরা উৎসাহিত হয়। এলাকার উন্নয়নের জন্যও সরকার সচেষ্ট।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.