লক্ষ্মীর দেড়শোয় লক্ষ্মীবারে বাংলার তিনশো লাভ
ক্ষ্মীবারের সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই ইডেনে জ্বলে উঠলেন বাংলার ক্রিকেটের লক্ষ্মী।
চেতেশ্বর পূজারার সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দিনের শেষে বাংলার প্রথম ইনিংসের পাশে রানসংখ্যাটা ৩০৩ যে, তার অর্ধেকটাই বহু ঘরোয়া যুদ্ধের এই নায়কের। পরের ম্যাচেই কেরিয়ারের শততম রঞ্জিতে নামার ঠিক আগের লড়াইয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লর ১৫৫-ই এ দিন বাংলার ত্রাতার ভূমিকায়। বৃহস্পতিবার লাঞ্চের আগেই দল ৭৭-৫ হয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক সেই দুরাবস্থা থেকে বাংলাকে টেনে তুললেন কার্যত একার ব্যাটে। সাহায্য বলতে শুধু শুভময় দাসের ৪২।
দিনের শেষ ওভারে উইকেকিপারের পাশে স্লিপ-গালিতে সাত-সাত জন ফিল্ডার নিয়ে অশোক দিন্দা বোলিং করার যে বিলাসিতা দেখাতে পারলেন, সেই উইকেট সাতসকালে কেমন ছিল তা আন্দাজ করা খুব কঠিন নয় নিশ্চয়ই। সেই উইকেটেই যখন শুয়ে পড়ল বাংলার টপঅর্ডার, তখন আগের দিন বলা সৌরাষ্ট্রের বাঙালি কোচ দেবু মিত্রের কথাগুলোই ফের মনে পড়ল—“ওদের জন্য তৈরি উইকেটে ওরাই না ডুবে যায়।” এ দিন বিকেলে দেবুর মুখে তির্যক হাসি। “আমি তো ভেবেছিলাম আড়াই দিনেই ম্যাচটা শেষ হয়ে যাবে।” তবে লক্ষ্মীর প্রসঙ্গ তুলতেই সেই হাসিটা মিলিয়ে গেল। ম্যাচটা যে আপাতত তাঁদের কাছেও আর সহজ নেই এবং সেটা লক্ষ্মীর জন্যই।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুর দেড় ঘন্টার মধ্যেই রোহন বন্ধ্যোপাধ্যায় (২৫), অরিন্দম দাস (০), সন্দীপন দাস (১৫) ও ঋ দ্ধিমান সাহা (২৮) ফিরে এলেন বাংলার ড্রেসিংরুমে প্যাভিলিয়নে। ভাগ্যিস জয়দেব উনাদকট কোচিতে ভারতীয় দলের হয়ে নেমেছিলেন। সৌরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পেসার ইডেনের এই উইকেটে নামলে যে কী হত, কে জানে।

হাসিতেও দেড়শো ওয়াট! ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বেলা এগারোটা বাজতে না বাজতেই ক্রিজে ছ’নম্বর ব্যাটসম্যান লক্ষ্মী। অনুষ্টুপ মজুমদার, যাঁকে বাংলা অধিনায়ক করার প্রস্তাবের কথা শোনা গিয়েছে কিছু দিন আগেও, তিনিও স্কোরবোর্ডে মাত্র এক রান দিয়ে ফিরে গেলেন। চিরাগ জানি, সন্দীপ মানিয়াররাই বাংলার ব্যাটিংয়ের বেহাল অবস্থাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। এখান থেকেই শুভময়কে নিয়ে পাল্টা লড়াই শুরু অধিনায়কের।
বাংলার ‘নির্ভরযোগ্য’ ব্যাটসম্যানরা অবশ্য লক্ষ্মীর কাছ থেকেও শিখলেন, এই বোলারদেরই কী ভাবে শাসন করতে হয়। খেলার শেষ দিকে ইডেনে আসা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “যে ভাবে গত বছর কোটলায় বিজয় হাজারের ফাইনালে মুম্বইয়ের বোলারদের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েছিলেন, আজও সেই একই ‘স্টাইল’ লক্ষ্মীর ব্যাটিংয়ে।” জানি-কে কভার ড্রাইভে দু’রান নিয়ে যখন প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সাত নম্বর সেঞ্চুরিতে পৌঁছলেন, তত ক্ষণে লক্ষ্মীর ১৯টা বাউন্ডারি হাঁকানো হয়ে গিয়েছে। তার আগেই শুভময়ের (৪২) সঙ্গে লক্ষ্মীর ১৩৮ রানের পার্টনারশিপ শেষ। স্পিনার বাসবদার একই ওভারে দু’টি ও জানিকে একটি ওভার বাউন্ডারি মেরে বুঝিয়ে দিলেন রানের খিদে তাতে একটুও কমেনি। পরের পঞ্চাশটা তুলে ফেললেন ৪২ বলে। যেখানে আরও দশটা বাউন্ডারি। লং অন পার করিয়ে যখন দেড়শোয় পৌঁছলেন, তখন বাউন্ডারির ধারে দাঁড়িয়ে সবার সঙ্গে হাততালি দিচ্ছেন সৌরভও।
সেঞ্চুরি বা দেড়শো পূর্ণ হওয়ার সময়েও যা করেননি চেতেশ্বর পূজারা, মানিয়ারকে পুল করতে গিয়ে যখন স্কোয়ার লেগে অভিষেক ভট্টর হাতে ধরা পড়ে গেলেন লক্ষ্মী, তখন হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেল তাঁকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন। শুক্রবার তাঁকেও যে এমনই এক ইনিংস খেলতে দেখা যাবে না, কে বলতে পারে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলা ৩০৩ (লক্ষ্মী ১৫৫, মানিয়ার ৩-৬৮, জানি ৩-৬২), সৌরাষ্ট্র ০-০।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.