|
|
|
|
‘বাংলার পোশাকটা চাপালেই মনে সাহস চলে আসে’
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কোনও ব্যাটসম্যান মাইলস্টোনে পৌঁছনোর পর তাঁকে এমন হাত ঘোরাতে দেখেছেন কি?
লং অন দিয়ে বলটা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে যখন দেড়শোর গণ্ডি ছুঁলেন, তখন হাত ঘুরিয়ে হঠাৎ বোলিং অ্যাকশন দেখালেন কেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল? খেলা শেষে তা জানতে চাইলে লক্ষ্মী বললেন, “ড্রেসিংরুমে টিমমেটদের বোঝালাম এ বার ভাল বোলিং করে দেখাতে হবে আমাদের।” ব্যাখ্যাটা শুনে কোচ অশোক মলহোত্র বললেন, “সাবাস, ক্যাপ্টেন হো তো অ্যায়সা”।
বাংলার স্কোরবোর্ডে তখন ৭৫-৪। কয়েক টন চাপ মাথায় নিয়ে মাঠে নামলেন লক্ষ্মী। শেষ তিন ইনিংসে সব মিলিয়ে মাত্র ৪৫ (১, ১৬, ২৮) রান তাঁর ব্যাটে। সেই চাপ তো আছেই, তার উপর যা পরিস্থিতি। “বিশ্বাস করুন, প্রচন্ড টেনশনে ছিলাম”, ইডেনের বাইশ গজে ব্যাট হাতে ছ’ঘন্টার উপর কাটিয়ে বাড়ি ফিরে বলছিলেন দিনের নায়ক। যে উইকেটে অনামী পেসাররা আগুন ঝরাচ্ছেন, সেই উইকেটে এমন এক দুঃসাহসিক ইনিংস খেলার প্রেরণা পেলেন কোথা থেকে? লক্ষ্মী বললেন, “এই ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞ আমাদের কোচের কাছে। পাজি সাহস না জোগালে বোধহয় এই টেনশনের জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। ওঁর মতো মোটিভেটর পেয়ে আমরা সবাই উপকৃত। আমি তো বটেই। পাজি সমানে আমাকে বলেন, ‘তুমি তোমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলো। আমার আর কিচ্ছু চাই না।’ আমার টিমমেটরাও ব্যাট করতে নামার আগে সমানে আমাকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছে। এর পর আর ভাল ব্যাট না করি কী করে বলুন?” তবে রঞ্জিতে একশো তম ম্যাচ ইডেনে খেলা হবে না বলে আক্ষেপ যাচ্ছে না লক্ষ্মীর। |
হঠাৎ দেখা। ইডেনে সৌরভের সঙ্গে দেবু মিত্র। —নিজস্ব চিত্র। |
বিকেলে ইডেনে দাঁড়িয়ে সৌরাষ্ট্র কোচ দেবু মিত্র বললেন, “লক্ষ্মী তো স্বপ্নের ইনিংস খেলল। অসাধারণ ব্যাটিং। ও একাই বাংলাকে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে চলে এল। এ বার আমাদেরও লড়তে হবে।” আউট হয়ে যখন বেরিয়ে এলেন, তখন বাউন্ডারির ধারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। লক্ষ্মীকে অভিনন্দন জানানোর পর, “লক্ষ্মীর ইনিংসটা দেখতে পেলাম না। ও-ই তো টিমের অর্ধেক রান তুলে দিল। দারুণ ব্যাটিং।” দেড় বছর আগে ফিরোজ শাহ কোটলায় বাংলার ড্রেসিংরুমে বসে এই লক্ষ্মীকেই ১০৬-এর অপরাজিত ইনিংস খেলে বিজয় হাজারে ট্রফি জেতাতে দেখেছিলেন সৌরভ। এ দিনের ইনিংসের সঙ্গে কি সেই ইনিংসের কোনও মিল খুঁজে পেলেন? সৌরভের জবাব, “স্টাইলটা একই। কিন্তু সে দিনের ম্যাচের গুরুত্বটা ছিল আরও বেশি। লক্ষ্মী এ রকমই।” লক্ষ্মী নিজেও এই নিয়ে একমত। বললেন, “সে দিনের ইনিংসটার জন্য তো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আমরা। সেটার গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে এটা আমার সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে অবশ্যই জায়গা পাবে।” অশোক মলহোত্র ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে বললেন, “এমন ‘মাইন্ড ব্লোয়িং’ ইনিংস খেললে আর কী বলার থাকতে পারে? তাই বেশি কিছু বলার নেই আমার।”
একাধিকবার বাংলাকে এ ভাবে টেনে তুলেছেন। রহস্যটা কী? লক্ষ্মীর বক্তব্য, “এই হৃদয়টাতে বাংলা দলের লোগো লাগানো আছে, বুঝলেন? তাই বাংলার পোশাকটা গায়ে চাপালেই কোথা থেকে যেন একগাদা সাহস মনের মধ্যে চলে আসে। মনে হয়, বাংলার জন্য যখন খেলছি, তখন তো ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে। আজও সেটাই মনে হচ্ছিল বারবার। দরকার হলে উইকেটে দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকব। কিন্তু লড়াই ছাড়ব না।” |
|
|
|
|
|