ডেম্পোর সাফল্যের ফর্মুলা লাল-হলুদেও চালু করে দিলেন আর্মান্দো কোলাসো। অভিষেকের দিনেই।
বছরের পর বছর ডেম্পোকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করার পথে আর্মান্দোর প্রধান রেসিপি ছিল, পুরো টিমকে চাপমুক্ত করে মাঠে নামানো। তেরো বছর ধরে যে-কোনও ম্যাচের আগেই মহেশ-ক্লিফোর্ডদের তিনি বলতেন “কোনও চাপ নিও না। মনের ফুর্তিতে অনুশীলন কর। ম্যাচ খেলো আনন্দ করে। স্ট্র্যাটেজি মেনে। দেখবে সাফল্য আসবেই।” বৃহস্পতিবার সকালে চিডি-মোগারা মাঠে নামার আগে যে টিম মিটিং হল তাতে বাজল সেই ‘সিডি’-ই। ডার্বি ম্যাচের আগে যা দারুণ কাজে দেবে বলে মনে করছেন পাঁচ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ।
যে দিন থেকে লাল-হলুদে কোচিং করানোর জন্য কর্তাদের সবুজ-সঙ্কেত পেয়েছেন, সে দিন থেকেই নানা স্বপ্নের কথা বেরোচ্ছে তাঁর ঝুলি থেকে। প্রথম গোয়ান কোচ হিসাবে কলকাতার ক্লাবে কোচিং করানোর বাসনা, কলকাতার ক্লাবকে আই লিগ জেতানোর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন আগে। বৃহস্পতিবার সেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে এল আরও একটি ইচ্ছাপুরণের কথা। মেহতাব-সুয়োকাদের অনুশীলন করিয়ে ফিরে বলে দিলেন, “ডার্বিতে কোচিং করানোর স্বপ্ন দেখতাম। শুনতাম কলকাতা ডার্বি মানেই নাকি অন্য অভিজ্ঞতা। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হতে চলেছে। আমার স্বপ্ন আরও মধুর হবে যদি প্রথম ডার্বি আমি জিততে পারি।”
মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে এসেছিলেন গোয়া থেকেই। চিডিদের হাতে পাওয়ার পর আর্মান্দো শুরু করে দিয়েছেন অঙ্ক কষাও। এ দিন সকালে ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে গিয়ে দেখা গেল, বল নিয়ে ফুটবলারদের বিভিন্ন ধরনের ফিটনেস ট্রেনিং করাচ্ছেন তিনি। আসলে প্রথম দিন ওপারা-খাবরাদের ফিটনেস দেখে নেওয়াই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়াও দেখা গেল আলাদা করে ফরোয়ার্ড, রক্ষণ আর মাঝ-মাঠের ফুটবলারদের অনুশীলন করাতে। উইং দিয়ে কী ভাবে আক্রমণে উঠে গোলের বল তৈরি করতে হবে, সেটাও হাতে-কলমে করে দেখালেন আর্মান্দো। সহকারী রঞ্জন চৌধুরির সঙ্গে টিম নিয়ে কথা বললেন। জানতে চাইলেন কার কোথায় খামতি।
|
ফালোপা জামানায় যে ফুটবলারদের দেখে মনে হত মনমরা, বিষণ্ণ, ক্ষুব্ধ—অন্তত কোলাসোর প্রথম দিন তাদের দেখেই মনে হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত, ইচ্ছাশক্তিতে ভরপুর। অনুশীলন চলাকালীন চিডি, মোগা, মেহতাবদের ঠাট্টা-তামাশাও চালু হয়ে গেল মর্গ্যান জমানার মতোই।
ডেম্পোতে খেলে এসেছেন চিডি। খুব সামনে থেকেই আর্মান্দোকে দেখেছেন। এ দিন অনুশীলনের পর চিডি বললেন, “কোলাসোর কোচিংয়ে এর আগেও খেলেছি। ওঁর সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক খুব ভাল। কখনও টেনশনে ভোগেন না। চাপ তৈরি করেন না। ওর কথা শুনে চললে সাফল্য আসবেই।”
আর্মান্দো জাতীয় দলের কোচ থাকার সময় শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা আর মেহতাব হোসেন। মেহেতাব বলছিলেন, “আর্মান্দো স্যার জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি চার বছর বাদে দেশের জার্সি পরার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে কথা ভুলিনি। বহু দিন বাদে ওঁর কোচিং-এ অনুশীলন করলাম। আর্মান্দো অ্যাটাকিং ফুটবল পছন্দ করেন। ডার্বিতে হয়তো সেটা আমাদের কাজে লাগবে।” খাবরা যোগ করেন, “মিঃ ফালোপার সঙ্গে আমি কোনও তুলনায় যাব না। তবে আর্মান্দো পাসিং ফুটবল পছন্দ করেন। ওঁর মূল স্ট্র্যাটেজি, উইং দিয়ে আক্রমণ করা। এই জায়গাগুলো আগের কোচের স্ট্র্যাটেজির থেকে আলাদা।”
আর্মান্দোর প্রথম দিনের অনুশীলনে ভাল দিকের সঙ্গে কিছু খারাপও আছে। ডার্বির তিন দিন আগেও মোগার পিঠে ব্যথা, ওপারার কুঁচকিতে টান আর সুয়োকার পায়ের নখ-সমস্যা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। সুয়োকা তো এ দিন অনেকটা সময় কাটালেন জিমেই। লাল-হলুদের নতুন কোচ অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। বললেন, “ওদের চোট কোনওটাই খুব বড় নয়। এখনও হাতে সময় আছে। ডার্বির আগে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ডার্বির আর বাহাত্তর ঘণ্টা বাকি। তবু কোলাসোর প্রথম দিনের অনুশীলনে দেখা যায়নি কোনও সদস্য-সমর্থককে। চমকে দেওয়ার মতোই ঘটনা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল শিবির এখন এ সব নিয়ে মোটেও ভাবছে না। তাঁদের পাখির চোখ যে এখন শুধুই মোহনবাগানে।
|
শুক্রবারে আই লিগ ফুটবল
সালগাওকর: পুণে (দুলের), শিলং লাজং: রাংদাজিদ (শিলং)। |