অনেক জায়গায় সচল থাকে না ক্যামেরা। যেখানে যেখানে রয়েছে, তার মধ্যেও অনেক জায়গায় ছবি ওঠে অস্পষ্ট। অনেক জায়গায় কার্ড পাঞ্চ করে ঢোকার ব্যবস্থা থাকলেও তা না করেই ঢুকে পড়া যায়। বহু এটিএমেই রক্ষীর দেখা মেলে না বলেও অভিযোগ আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের গ্রাহকদের। বেঙ্গালুরুর একটি রক্ষিবিহীন এটিএমে এক মহিলার উপরে দুষ্কৃতী হামলার পরে এটিএম কাউন্টারগুলিতে নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ কমিশনারেট। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বেঙ্গালুরুর মতো এটিএমের ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা আসানসোল-দুর্গাপুরে এখনও ঘটেনি। তবে টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটেছে বহু বার। দুর্গাপুর স্টেশনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম এ ব্যাপারে বারবার শিরোনামে এসেছে। ২০১০ সালে সেখান থেকে অন্তত ১০টি টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটে। শহরের সিটি সেন্টারের এডিডিএ ভবনের নীচে আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেও একাধিক বার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
পিছিয়ে নেই আসানসোলও। বছর তিনেক আগে আসানসোল স্টেডিয়াম লাগোয়া একটি এটিএম কাউন্টার থেকে লুঠ হয় ৩৯ লক্ষ টাকা। কিছু দিন পরে আসানসোল হাসপাতালের সামনে এক এটিএমেও লুঠ হয়। সেখানে দুষ্কৃতীরা গুলিও চালায়। মাস তিনেক আগে কুলটির নিউ রোড এলাকায় জি টি রোডের কাছে গ্রাহকদের টাকা হাতানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। শেষে পুলিশের উদ্যোগে সেখানে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়। তার কিছু দিন আগে রাধানগর-চিনাকুড়ি এলাকাতেও একই রকম ঘটনা ঘটে। |
গ্রাহকদের অভিযোগ, এটিএম থেকে টাকা খোয়া যাওয়ার দায় সচরাচর নিতে চান না কোনও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কগুলির দাবি, এটিএমের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকে। কোনও অমনিয়ম হলে তা ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে। কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা অবশ্য দাবি করেন, অধিকাংশ এটিএমেই ক্যামেরা ঠিক থাকে না। সিসিটিভি ফুটেজে ঘোলাটে ছবি ওঠে। তাতে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটে। একটি রাস্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তার অবশ্য দাবি, ব্যাঙ্ক সরাসরি যে সমস্ত এটিএম পরিচালনা করে সেগুলির পরিস্থিতি ভাল। তুলনায় বাইরের সংস্থা পরিচালিত এটিএমগুলির হাল তত ভাল নয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এমন দাবির সঙ্গে সহমত নন। তিনি বলেন, “এটিএমের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি একেবারে ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরই এ দিকটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। গ্রাহকদের সম্পত্তি রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব তাঁদেরই।”
বৃহস্পতিবার দুই শহরে ঘুরে নজরে পড়ে, বেঙ্গালুরুর ঘটনার পরেও শহরের নানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বহু এটিএমেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। দেখা গিয়েছে, আসানসোল স্টেডিয়াম লাগোয়া এলাকায় একাধিক এটিএমে কোনও রক্ষী নেই। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কুলটি টাউন ব্রাঞ্চে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সীমানা এলাকা বরাকর, রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একাধিক এটিএমে নিরাপত্তাকর্মী নেই। সেখান থেকে খানিক দূরেই ভিন্ রাজ্য। অপকর্ম ঘটিয়ে সেখানে পালিয়ে গেলে তদন্তে বেশ অসুবিধা হয়, দাবি পুলিশের।
দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে আদালতের পাশের একটি এটিএমে দিন কয়েক আগেও রক্ষীর বালাই ছিল না। এখন অবশ্য সেখানে ২৪ ঘণ্টার রক্ষী দেওয়া হয়েছে। তবে সিটি সেন্টারে এডিডিএ ভবনের নীচে দু’টি এটিএমের একটিতে রক্ষী নজরে পড়েনি এ দিন। একই পরিস্থিতি বেনাচিতির গুরুদ্বার রোডের একটি এটিএমেও। পুরসভার শপিংমল সুহট্টের সামনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না এ দিন। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক স্বীকার করেন, ব্যাঙ্কের শাখায় গ্রাহকদের ভিড় কমাতে এটিএম খোলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেগুলির সম্পূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও করা যায়নি। বেসরকারি ব্যাঙ্কের সব এটিএমেই অবশ্য নিরাপত্তারক্ষী দেখা মিলেছে এই দুই শহরে।
বেঙ্গালুরুর ঘটনার পরে এটিএমে নিরাপত্তা নিয়ে ঢিলেমি মানা হবে না বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ কমিশনার বলেন, “এটিএমে নিরাপত্তাকর্মী রাখার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের কী আইন আছে, জানা নেই। তবে পরিস্থিতি বিচার করে সিভিক পুলিশকর্মীদের আমরা এটিএমের কাছাকাছি মোতায়েন রাখছি।” এক পুলিশকর্তার দাবি, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, রক্ষী থাকলেও তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই। শহরে নতুন কোনও এটিএম কাউন্টার বসানো হলে তা পুলিশকে অনেক সময়েই জানানো হয় না। এ সব নিয়েই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। |