ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের দুটি ভবন খোলার জন্য অনুমোদন দিয়ে দিল দমকল। মঙ্গলবার দমকলের ওই ছাড়পত্র পেয়ে আমরি-কতৃর্পক্ষ ওই দিনই স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করেছেন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ওই ছাড়পত্র পেতে আমরির কোনও সমস্যা হবে না। আর তা হলেই ঢাকুরিয়ার আামরির মূল ভবন এবং অ্যানেক্স-২ ভবন দোতলা পর্যন্ত খুলে যাবে। সেখানে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা এবং আউটডোর পরিষেবা মিলবে। তবে রোগী ভর্তির অনুমতি এখনও মিলবে না। যে ভবনটি পুড়ে গিয়েছিল সেই অ্যানেক্স-১ বন্ধই থাকবে।
দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল দুর্গাপদ তারানিয়া বুধবার বলেন, “আমরি ঢাকুরিয়ার ‘পি-ফোর সিআইটি স্কিম’ ভবন এবং ‘১৭ নম্বর পঞ্চাননতলা লেন’-এর ভবনটির লাইসেন্স আমরা দিয়ে দিয়েছি। ওই দু’টি বাড়িতে আমরা ওদের যা-যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম, সব-ই ওরা করেছে। ফায়ার অ্যালার্ম-সহ সব কিছু পরীক্ষা করে আমরা সন্তুষ্ট।” তবে হাসপাতালের ইন্ডোর বিভাগ চালু করার সরকারি অনুমোদন কবে মিলবে সে ব্যাপারে দমকল কর্তারা বলেন, ভবনের বাইরে থেকে বিশেষ ভাবে দু’টি সিঁড়ি তৈরি হলে তবেই সেই ছাড়পত্র মিলবে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমরি কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারই আমাদের কাছে ফায়ার লাইসেন্স জমা দিয়েছে। আমাদের পরিদর্শকেরা এর আগে হাসপাতাল খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দিয়েছিল। এখন দমকলের লাইসেন্স পাওয়ার পর আমরা আরও এক বার ওই ভবন দু’টির ভিতরের অবস্থা, জায়গার ব্যবহার, যন্ত্রপাতির অবস্থা এবং মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখব। এর পর ছাড়পত্র দিতে আর কোনও বাধা থাকার কথা নয়।” স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “আমরি খোলার বিষয়টা অনেকটাই এগিয়েছে। এখন শুধু সময়ের প্রতীক্ষা।”
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অ্যানেক্স-১ ভবনে আগুন লেগে ৯১ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী ওই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন। ঢাকুরিয়ায় আমরির দুটি হাসপাতালের ছাড়পত্রই সাময়িক ভাবে বাতিল করে সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুড়ে যাওয়া ভবনের লাইসেন্স স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনার দুই বছর পরে বন্ধ থাকা ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের দুটি ভবনের কাজকর্ম ফের শুরু হতে চলেছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আমরির ঘটনায় পর দীর্ঘদিন ওই গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ না করে আটকে রাখায় শিল্পমহলে বিরূপ বার্তা পৌঁছেছিল। যে দুটি শিল্প সংস্থা আমরির পরিচালন কমিটিতে রয়েছে, তারাও এ রাজ্যে ব্যবসা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ দিকে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের রাস্তা পরিষ্কার করতে ‘শিল্পবন্ধু’ ভাবমূর্তি আনতে চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই কারণেই তাঁর দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেত আসা শুরু হয়। তাতেই হাসপাতাল খোলার পথ পরিষ্কার হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
গত দু’বছরে আমরির প্রধান ভবন ও অ্যানেক্স-২ খুলতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরে মোট ১১টি চিঠি লেখেন আমরি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, প্রত্যেকটি চিঠিতেই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ওই তিনটি ভবন পরিদর্শনের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। সেই স্বাস্থ্য দফতরই হঠাৎ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই তিনটি ভবনে পরিদর্শক দল পাঠিয়েছিল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সরেজমিনে সব দেখার পর বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরি হাসপাতালের ওই তিনটি ভবন খোলার ব্যাপারে আপত্তির কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না। সেগুলি চালু হতেই পারে।’ তার পরে মঙ্গলবার মিলে গেল দমকলের ছাড়পত্র।
|