হৃদযন্ত্র বন্ধের আভাস
মেলে আগেই: সমীক্ষা

কাল বেলা বাজারে গেলেন। দিব্যি সুস্থ মানুষ। হঠাৎই বুকে ব্যথা। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। এ রকম ঘটনা হামেশাই শোনা যায়। চিকিৎসকের ভাষায় আকস্মিক হৃদযন্ত্র বন্ধ (সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা এসসিএ) হয়ে গিয়েই এই দুর্ঘটনা। এ রকম পরিস্থিতি কি কোনও ভাবেই এড়ানো যায় না?
বহু বছর ধরে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার পোর্টল্যান্ডে প্রায় ১১ বছর ধরে ৫৬৭ জনের উপর পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীদের দাবি, পুরোপুরি আকস্মিক নয় এসসিএ। বরং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার ঠিক এক মাস আগে থেকে এক ঘণ্টা এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আর সেই লক্ষণগুলো দেখে রোগী সতর্ক হলে এড়ানো যেতে পারে মৃত্যুকে।
কিন্তু সমস্যাটা সেখানেই। গবেষক দলের অন্যতম, লস অ্যাঞ্জেলেসের সেডার্স-সিনাই হার্ট ইনস্টিটিউটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুমিত চুঘ জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা এই লক্ষণগুলোকে পাত্তা দেন না। ফলে মৃত্যু অনিবার্য। মঙ্গলবার ডালাসে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে সুমিতদের এই গবেষণাপত্র পেশ হয়েছে। আর তার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে হইচই।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, এসসিএ হয়েছে, এমন রোগীদের ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, রোগের পূর্বাভাস ছিল। লক্ষণ বলতে, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কখনও বা প্রবল অস্বস্তি, সঙ্গে ঘাম। কিন্তু দেখা গিয়েছে, সমস্যা সত্ত্বেও এঁদের মধ্যে মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। বাকিরা সাময়িক উপসর্গ ভেবে কোনও ব্যবস্থা নেননি। অথচ সুমিতের কথায়, “সমস্যাগুলো দেখে একটু সতর্ক হলেই এড়ানো যায় ভয়াবহ পরিণতি।”
তবে সুমিত এ-ও জানিয়ে রেখেছেন, এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলেই যে এসসিএ হবে, এমন কোনও কথা নেই। তা হলে তাঁদের গবেষণার তাৎপর্য কোথায়? সুমিত বলছেন, “এত দিন এসসিএ-র কোনও আগাম লক্ষণ দেখা যেত না বলেই জানত সবাই। এই গবেষণা আমাদের অন্যদের চিন্তা ভাবাবে।”
অর্থাৎ, ওই উপসর্গগুলি দেখা দিলে তা যে এসসিএ-র পূর্বাভাস হলেও হতে পারে, এটাই এত দিন তেমন ভাবে বোঝা যায়নি। সুমিতদের দাবি, তাঁদের গবেষণা সেই কাজটাই করেছে।
সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন সত্যজিৎ বসু অবশ্য এতটা আশাবাদী নন। তাঁর কথায়, “আমেরিকা আর ভারতের মানুষের শারীরিক গঠনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভারতীয়ের উপর গবেষণা না করলে ফল বোঝা যাবে না।” তার উপর ভারতীয়রা অনেক বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। “ডায়াবেটিস হলে স্বাভাবিক ভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিক রোগীরা এসসিএ-র কোনও আগাম আভাস পান না।” তাই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, রক্তে বেশি মাত্রায় লিপিড থাকলে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ধূমপায়ী হলে তাঁর মাঝে মাঝেই ডাক্তারি পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করেন সত্যজিৎবাবু।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবার এই গবেষণা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, “আগে তো এসসিএ-র লক্ষণ থাকে, এটাই জানা ছিল না। এ বার থেকে অন্তত চিকিৎসকেরা সাবধান হতে পারবেন।” তবে সমাজে এই সতর্কতার ভাল-খারাপ দু’ধরনের প্রভাবই রয়েছে বলে মনে করেন শুভ্রবাবু। তিনি বলেন, “অনেক সময়ে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা নিয়ে রোগীরা এলেও চিকিৎসকেরা সাময়িক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো সাময়িক ভাবে দেখা যায় বলে রোগীরাও খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না। এই গবেষণা তাঁদের সতর্ক হতে বাধ্য করবে।” তবে তাঁর আশঙ্কা, এর ফলে অল্প সমস্যাতেও চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বাধ্য হবেন। পকেটে চাপ পড়বে রোগীদের। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্তও হতে পারেন তাঁরা।
তা হলে উপায়?
সত্যজিৎবাবু আর শুভ্রবাবু, দু’জনের মত, আগাম সতর্কতা নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
সুমিতের কথামতো, “আরও গবেষণা দরকার। এখনও পর্যন্ত শুধু পুরুষদের উপরেই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। মহিলাদেরও একই লক্ষণ দেখা যায় কি না, সেটা দেখার।”
তবে সতর্কতাই যে একমাত্র, ওষুধ সেটা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন সবাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.