সুন্দরবনে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সৌরশক্তির উদ্বোধন
তিন দশক আগের দিনটা এখনও ভুলতে পারেন না নন্দকুমারপুর গ্রামের অংশুমান দাস। আসন্নপ্রসবা মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে ১০ কিলোমিটার দূরে রায়দিঘিতে গিয়েছিলেন তিনি। ঘণ্টা তিনেক বাদে পড়ি-কি-মরি করে ফিরে কিশোর-পুত্র শুনলেন, মা আর নেই। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় জীবনদায়ী ওষুধ বা রক্তের সংরক্ষণের তাগিদটা তখনই হাতে-কলমে টের পেয়েছিলেন তিনি।
বছর পাঁচ-ছয় আগে নন্দকুমারপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে একটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে ঠিকই। কিন্তু কিছু সমস্যা থেকেই গিয়েছে। এখন সেই হাসপাতালের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অংশুমান বলছিলেন, “এই তল্লাটে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ইয়ত্তা নেই। জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে কিছু করাও যায় না। রায়দিঘি বা ডায়মন্ড হারবার পাঠানো ছাড়া গতি নেই। প্রসব হতে গিয়ে রক্তক্ষরণে মৃত্যুতেও কিছু করার থাকে না।”
এ বার ছবিটা বদলানোর আশা দেখছে সুন্দরবন। জার্মানির হামবুর্গ শহরের অনাবাসী ভারতীয় ও সেখানকার প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় সুন্দরবনে সৌরশক্তিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার মথুরাপুর-২ ব্লকের নন্দকুমারপুরে সৌরশক্তিচালিত ইউনিটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। ৫০ লিটারের সৌরশক্তিচালিত রেফ্রিজারেটরে সেখানে জীবনদায়ী ওষুধ ও রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। দরকারে রেফ্রিজারেটরটি কোনও প্রত্যন্ত এলাকাতেও নিয়ে যাওয়া যাবে।
সুন্দরবনে নন্দকুমারপুর অঞ্চলে সৌরশক্তিচালিত স্বাস্থ্য পরিষেবা ইউনিট চালুর তোড়জোড়। —নিজস্ব চিত্র।
আরও দূরে পাথরপ্রতিমা ব্লকের হেরম্বগোপালপুর ও অচিন্ত্যনগর অঞ্চলেও সৌরশক্তির সাহায্যেই ছবিটা পাল্টাচ্ছে। এমনিতে বিদ্যুতের খুঁটি ভাল ভাবে পৌঁছয়নি ওই তল্লাটে। সেখানেও দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামবুর্গের সংস্থাটি সৌরশক্তির প্রয়োগে রক্ত ও ওষুুধ মজুত রাখার পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। ভারতের অন্যতম প্রান্তিক ভূখণ্ড ‘কে প্লট’ দ্বীপে পশ্চিম শ্রীপতিনগর ও পূর্ব শ্রীপতিনগর গ্রামের বাসিন্দারাও তাকিয়ে আছেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দিকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা, রাত-বিরেতে সাপে কাটলে আর কাউকে ভুটভুটি ভাড়া করে ঘণ্টা আড়াই দূরের রায়দিঘি কি ব্লক সদরে (পাথরপ্রতিমা) নিয়ে যাওয়ার অসাধ্য সাধন করতে হবে না। প্রসব হতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের বিপদেও সুরাহা মিলবে হাতের কাছেই।
জার্মানির ওয়েডেল শহরের একটি সংস্থার তৈরি ‘সোলার মেডিকাস’ মডিউল অনুযায়ী আগেই মেক্সিকো, নিকারাগুয়ার মতো লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রত্যন্ত জায়গায় চিকিৎসার ইউনিট গড়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, পাঁচ-ছ’বছর ধরে কোনও বিপত্তি ছাড়াই চলছে ইউনিটগুলি। এই সাফল্যের পথ ধরেই সুন্দরবনে একটা চেষ্টা করতে উদ্যোগী হামবুর্গবাসী বায়োটেকনোলজিস্ট অমল মুখোপাধ্যায়। হামবুর্গ শহরের প্রশাসনও চায় এ দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে। হামবুর্গের জার্মানির ক্রিশ্চান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন দলের হামবুর্গের নেতা ডিটার গ্রুট্জম্যাখারও তাই প্রকল্পটি চালু করতে সুন্দরবনে এসেছেন।
কিন্তু জার্মানি থেকে পাঠানো সরঞ্জামে সৌরশক্তি প্রয়োগ এখানে কত দূর সফল হবে? অমলবাবুর কথায়, “জার্মানিতে তো প্রায়ই সূর্যের দেখাই মেলে না। সেখানেও স্রেফ চার-পাঁচ ঘণ্টা দিনের আলোটুকু পেলেই রেফ্রিজারেটর দিব্যি চলে।” কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত উন্নয়ন মন্ত্রকের উপদেষ্টা তথা সৌরশক্তি বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরী এই চেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে তাঁর প্রশ্ন, যন্ত্রটি বিগড়োলে তার কলকব্জা এখানে কত দূর মিলবে? অমলবাবু অবশ্য দাবি করছেন, মডিউলটি যে ভাবে তৈরি, তাতে রক্ষণাবেক্ষণের ঝক্কি প্রায় শূন্য। এ যাত্রা এক-একটি ইউনিটের জন্য খরচ হচ্ছে, ১০-১১ লক্ষ টাকা। তবে অমলবাবুর দাবি, এখানকার কিছু সরঞ্জামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘অ্যাসেম্বল’ করেও প্রযুক্তিটি চালু করা সম্ভব। তাতে খরচ কমে আসবে। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে বিদ্যুৎবিহীন দুর্গম এলাকায় আরও ব্যাপক ভাবে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যাবে।
কী বলছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী? তাঁর কথায়, সৌরপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজ্য সরকারও স্বাস্থ্য পরিষেবায় কিছু করার চেষ্টা করেছিল। “প্রযুক্তির সমস্যাতেই আমরা সফল হইনি। জার্মানির প্রযুক্তির সাহায্যে সুন্দরবনে এই চেষ্টা সফল হলে, আমরাও তার থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.