|
|
|
|
ফের কি বোর্ড ত্রিশঙ্কু, জল্পনা |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
রাত পোহালেই ভোট। শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্ট-ডাউন। কোন ওয়ার্ডে কে জিতবে, কার দখলে থাকবে পুরবোর্ড, বিতর্ক-জল্পনার অন্ত নেই। প্রশ্ন একটাই, আদৌ কি কোনও একটি দলের পক্ষে পুরবোর্ড দখল করা সম্ভব হবে? নাকি বিগত তিন বারের মতোই পুরবোর্ড ফের ত্রিশঙ্কু হবে।
কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার কথা বললেও, বেশির ভাগেরই দাবি কোনও দলই একক গরিষ্ঠতা পাবে না। অর্থাৎ, ফের ত্রিশঙ্কু হবে পুরবোর্ড। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, এ বার তাঁরাই একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবেন। দলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতির আত্মবিশ্বাসী জবাব, “একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে আমরাই পুরবোর্ড দখল করব।” সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা এ বারের পুরভোটের প্রার্থী কীর্তি দে বক্সীর বক্তব্য, “যদি কেউ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় তা হলে আমরাই পাব।” কংগ্রেসের জেলা-সহ সভাপতি তথা পুরভোটের প্রার্থী শম্ভু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও দলই একক গরিষ্ঠতা পাবে না।” বিকাশ পরিষদ নেতা তথা দীর্ঘ দিন পুরভোটের ময়দানে থাকা নাজিম আহমেদের বক্তব্য, “এ বার ত্রিশঙ্কুই হবে পুরবোর্ড। যদি কেউ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় তো বাম-বিকাশ পরিষদ মিলিয়েই পাবে।”
প্রত্যেকের দাবির পিছনে একটা করে যুক্তি রয়েছে। তৃণমূলের সহজ যুক্তি, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মানুষ তাঁদেরই সমর্থন করবেন। আর বাকিদের যুক্তি মোটের উপর এক। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছিল, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মানুষ। লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, দীর্ঘ দিন পুরবোর্ডে থেকেও শহরের উন্নয়নে ব্যর্থতা। এর বাইরে রয়েছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দলের বিক্ষুব্ধরা টিকিট না পেয়ে, একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তার উপর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নেই। এমনকি তলে তলে জোটের কোনও জায়গা নেই এ বার। তার উপর বিজেপি সর্বত্রই প্রার্থী দিয়েছে। বামফ্রন্টের ভোট সাধারণত ভাগাভাগি হয় না। বাকি ভোট যদি একাধিক প্রার্থীর বাক্সে পড়ে তা হলে বামপন্থীদের অনেকটাই সুবিধে হয়ে যাওয়ার কথা। ধরা যাক শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কথা। সেখানে দলের দীর্ঘ দিনের ওয়ার্ড সভাপতি অসীম ধর প্রার্থী হয়েছেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর গণেশপ্রসাদ ভকতও এ বার নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল নেতা শিবু পাণিগ্রাহী (বর্তমানে বহিষ্কৃত) তাঁর স্ত্রী সীমা পাণিগ্রাহীকে ওই ওয়ার্ডেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে খাড়া করেছেন। ফলে এই সব জায়গায় সিপিএমের বা ফরওয়ার্ড ব্লকের লড়াইটা অনেকটাই সহজ হবে বলেই অনেকের অভিমত।
গত নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বোর্ড গড়ায় বামফ্রন্ট অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে দু’জনকেই দুষছে, আবার কংগ্রেস ও তৃণমূল একে অপরকে দুষছে। অনেক ক্ষেত্রেও বিজেপিও এ বার বেশ কিছু ভোট কাটার আশঙ্কা রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়ের কথায়, “অনেক ওয়ার্ডে কে জিতবে বা হারবে, তা নির্ধারণ হবে আমাদের প্রাপ্য ভোটের উপরেই। পাশাপাশি আমরা ভাল ভোট পাব বলেই আশাবাদী।”
গত বিধানসভা নির্বাচনেও বামপন্থারী মেদিনীপুর পুরসভা এলাকায় ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। পুরসভা ভোটে আবার স্থানীয় সমস্যাও বড় করে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট অন্য দিকে যাবেই। তার উপর ৬২ শতাংশ ভোট কয়েক’টি ভাগে ভাগাভাগি হলে যে তার সুফল তুলবে বামফ্রন্ট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফলে যতই তৃণমূল ঝড় তুলুক না কেন, মেদিনীপুর শহরে অবাম ভোট বেশি হোক না কেন, একক গরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়। |
শেষ বেলায় জমাটি প্রচার
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কাল, শুক্রবার মেদিনীপুর পুরসভা নির্বাচন। বুধবার শেষদিনের প্রচার ছিল জমজমাট। শেষবেলার প্রচারে সবাই সামিল হলেও এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। প্রচারে সামিল হন তৃণমূলের সর্বভারতী সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মুকুল রায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিভিন্ন এলাকায় বামেদের পথসভা-মিছিল হয়। কংগ্রেসও সভা-মিছিল করেছে। বিজেপির সভায় ছিলেন রাজ্য সহ-সভাপতি প্রভাকর তেওয়ারি। |
|
|
প্রচারের শেষ লগ্নে। শহরে মুকুল রায়ের রোড-শো।
সভার পথে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র। |
|
বুধবার তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় জিপে বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন। কয়েকটি কর্মিসভা করেন। মুকুলবাবু বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে এই নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটা ঠিক করবে বাংলাই। আর নেতৃত্ব দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” তাঁর কথায়, “আমরা কাজের নিরিখে আপনাদের কাছে ভোট চাইছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়-জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন।” এ বার মেদিনীপুরে তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলেও দাবি করেন মুকুলবাবু।
পথসভায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজ মেদিনীপুরে কোনও হার্মাদ নেই। মাওবাদী নেই। কেউ কেউ ভোটপাখি হয়ে চলে এসেছে। কোথাও নির্দল। কোথাও হাত। কোথাও পদ্মফুল। ভোটের পর এরা সব চলে যাবে।” তাঁর কথায়, “অনেক কাজ হয়েছে। বড় মাস্টার প্ল্যান করে মেদিনীপুরের সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে। রাজ্য সরকার-পুরসভা একসূত্রে বাঁধা থাকলে কাজ এগোতে সুবিধে হবে।” |
পুরনো খবর: শেষবেলার প্রচারে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই |
|
|
|
|
|