কাজে গতি আর আধুনিক শহরই চাহিদা
বিধানসভা ভোটের পর ফের ভোটের লাইনে দাঁড়াতে চলেছেন মেদিনীপুরবাসী। গত পাঁচ বছরে কেমন কাজ করল বিদায়ী পুরবোর্ড? ক্ষমতায় আসার আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তারই বা কতটা পূরণ হল? এ সবের হিসেব-নিকেশ করেই শহরবাসী ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, পুরভোটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শহরবাসীর দৈনন্দিন চাহিদা, রোজকার পরিষেবা।
দিন বদলের সঙ্গে প্রত্যাশাও বাড়ছে। শহরবাসী চাইছেন, ক্ষমতায় যেই আসুক, নতুন পুরবোর্ড যেন আরও একটু গতিশীল হয়। চেহারা পাল্টে মেদিনীপুর শহরকে আধুনিক করে গড়ে তোলে। সেই সঙ্গে যেন রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জলের মতো রোজকার পরিষেবার মানোন্নয়ন হয়।
পুরসভার ট্যাপকলে মুখ না থাকায় কোতয়ালি বাজারে জলের অপচয়।
মেদিনীপুর শহরে পানীয় জলের সমস্যা নতুন নয়। সব এলাকায় পর্যাপ্ত জল পৌঁছয় না। গ্রীষ্মে সমস্যা আরও বাড়ে। কয়েকটি গভীর নলকূপও বসানো হলেও সঙ্কট পুরোপুরি কাটেনি। শহরে এখন জলের চাহিদা দিনে ২৫ থেকে ২৮ হাজার গ্যালন। পুরসভা সরবরাহ করে ৩০ থেকে ৩২ হাজার গ্যালন। অর্থাৎ, চাহিদার থেকে বেশি। তা-ও কেন জল-সঙ্কট? আসলে, বহু ট্যাপকলের মুখ না থাকায় বহ পরিমাণ জল অপচয় হয়। শহরের বিদায়ী পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য দাবি, “গত পাঁচ বছরে জলের সমস্যা অনেকটা দূর হয়েছে। পুরসভা থেকে সরবরাহ করা জলের ৩০ শতাংশই অপচয় হয়। সামান্য কিছু এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে।” পুরসভা সূত্রে খবর, নজরগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্প হবে। এ জন্য ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছে।
আর এক সমস্যা নিকাশি। শহরের প্রধান নিকাশি মহানালা দ্বারিবাঁধ খাল সময়মতো পরিষ্কার হয় না। বেশ কয়েকটি নালার মুখ আবার আবর্জনায় বন্ধ। নিকাশির হাল ফেরাতে বছর তিনেক আগে শহরে উন্নয়নের একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, রাস্তা সংস্কার থেকে নতুন মহানালা তৈরি, সবই রয়েছে সেই খসড়াতে। তবে, বছর ঘুরলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ঠিক ছিল, নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে আবাস থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে নতুন একটি মহানালা তৈরি করা হবে। ফলে, ধর্মার আশপাশে গড়ে ওঠা নতুন বসতি এলাকার নিকাশি সমস্যারও হাল ফিরবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ যকিছু নিকাশি নালা নতুন করে সংস্কার হবে। কিন্তু অর্থাভাবে এ সব কাজ শুরুই হয়নি। বিদায়ী পুরপ্রধান মানছেন, “শহরে নতুন একটি মহানালা তৈরি করা দরকার। এ জন্য রাজ্যের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়। তবে কেন্দ্রীয় সাহায্য না মিললে এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা কঠিন।” পুরসভা সূত্রে খবর, প্রস্তাব রাজ্যের কাছেই পড়ে রয়েছে। তা আর কেন্দ্রের কাছে পৌঁছয়নি।
সংস্কার হয়নি, আগাছায় অবরুদ্ধ দ্বারিবাঁধ খাল।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারে ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে ছোট বড় রাস্তার পাশে মাঝেমধ্যেই আবর্জনার স্তুপ চোখে পড়ে। দুর্গন্ধ থেকে দূষণ ছড়ায়। ধর্মায় পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে শহরের সমস্ত আবর্জনা গাড়িতে নিয়ে এসে ফেলা হয়। এক সময় শহরে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু, তাও পুরোপুরি চালু হয়নি। শহরের স্কুলবাজার, বটতলাচক, কর্ণেলগোলা সহ কয়েকটি এলাকায় যানজট সমস্যা রয়েছে। জনসংখ্যা এবং যানবাহনের নিরিখে মেদিনীপুরের রাস্তাঘাট এমনিতেই অপরিসর। বহু এলাকা ঘিঞ্জি। অপরিসর রাস্তায় একটি লরি কোনও ভাবে আটকে গেলেই আর কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এই পরিস্থিতি এড়াতে দিনের বেলায় শহরের মধ্যে বড় লরি ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু, সর্বত্র তা মানা হয় না। ধর্মা থেকে কর্নেলগোলা পর্যন্ত রাস্তা ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলেই পরিচিত। এই সংকীণর্র্ রাস্তার ধারেও অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে নজরদারি বাড়ানো হয়নি। শহরের সব অলিগলিতে পর্যাপ্ত পথবাতি না থাকলেও বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবশ্য পর্যাপ্ত পথবাতি রয়েছে।
বিদায়ী পুরপ্রধান প্রণববাবু বলছেন, “গত পাঁচ বছরে পুর-এলাকার সার্বিক উন্নয়নই হয়েছে।” যদিও এই দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা। শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদ বলেন, “আগের পুরভোটের সময় তৃণমূল একটি ইস্তেহার প্রকাশ করেছিল। জানিয়ে ছিল, ক্ষমতায় এলে কী কী কাজ করবে। তৃণমূল বরং সেই ইস্তেহারটা পড়ে দেখুক। প্রতিশ্রুতিগুলোর কী হল?” তাঁর কথায়, “দুর্নীতি-স্বজনপোষণ মুক্ত পুরবোর্ডের প্রতিশ্রুতি ছিল তৃণমূলের। বাস্তবে গত পুরবোর্ডের সবথেকে বড় কাজই ছিল দুর্নীতি-স্বজনপোষণ। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দ্বারিবাঁধ খালের সংস্কারের বাস্তবতা শুধু কথাতেই রয়ে গিয়েছে। বাসস্ট্যান্ডের দোকানঘর বিলি নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। ন্যূনতম পুর-পরিষেবারও ক্রমে অবনতি হয়েছে। বস্তিবাসীদের জমির মালিকানা লিজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। তার কিছুই হয়নি।” পাঁচ বছরে কী হয়েছে, কী হয়নি, তা নিয়ে চাপানউতোর চলবেই। তার মধ্যেই কাল, শুক্রবার শেষ কথা বলবেন মেদিনীপুরের মানুষই।

—নিজস্ব চিত্র।
পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.