জেতালেই সমাধান সব সমস্যার, আশ্বাস ঢালাও |
দিতে হয় পুরকর। আবার রাস্তাও সাফ করতে হয় গ্যাঁটের কড়ি খরচ করেই।
গত প্রায় আড়াই বছর ধরে এমনটাই করে আসছেন আসানসোলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমায় দু’বছর ধরে সমস্যায় ভুগছেন কুলটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকেরাও। ২৫ নভেম্বরের পরে এই সমস্যার হাত থেকে অন্তত মুক্তি মিলবে, আশায় দু’এলাকার মানুষজনই। জিতে এলে সব সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার দেদার আশ্বাস দিচ্ছে সব দলও।
আসানসোল পুরসভায় অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত এই ৬ নম্বর ওয়ার্ড। প্রায় আড়াই বছর আগে মৃত্যু হয় এখানকার তৃণমূল কাউন্সিলর বিনয় সরকারের। বাসিন্দারা জানান, এলাকার মূল সমস্যা নিকাশি। এলাকাবাসীাই নিজেদেরে পকেট থেকে টাকা দিয়ে এলাকা সাফ রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশ কিছু অঞ্চলে এখনও সাফাইয়ের সমস্যা আছে। যেমন হুচুক পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, এসবি গড়াই রোডের থানা এলাকা, বাউড়িপাড়া, ডোমপাড়া ইত্যাদি। হুচুকপাড়ায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, নর্দমা সাফাই হচ্ছে না। নিকাশি ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। নর্দমার জল উপচে রাস্তা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। খানিকটা একই অবস্থা খ্রিস্টান পাড়ার। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ টোপু অভিযোগ করেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে তাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু কোনও নজর দেননি পুর কর্তৃপক্ষ। এই ওয়ার্ডের আর এক বাসিন্দা রাজজি দুবে অভিযোগ করেন, তাঁরা বহু বার পুর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে সুস্থ নাগরিক পরিষেবার দাবিতে লিখিত আবেদন করেছেন। পুর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। |
|
|
দুর্গন্ধ ছড়ায় নর্দমায় জমা জঞ্জাল। রাস্তাঘাটেও পড়ে থাকে আবর্জনার
স্তূপ। আসানসোলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছবি দু’টি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |
|
পুরসভার তৃণমূল মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটকের দাবি, “কাউন্সিলর না থাকায় সাময়িক কিছু সমস্যা ছিল। এ বার আমরাই এখান থেকে জিতব। আর কোনও সমস্যা থাকবে না।” সিপিএমের আসানসোল জোনাল সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় আবার দাবি করেন, ভোটারেরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে তাঁদের প্রার্থীই জিতবেন। তাঁরা ভোটে জিতলে এই ওয়ার্ডের উন্নয়ন নিয়ে জোরদার আন্দোলন শুরু হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
কুলটি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আবার জানান, বহুবার স্মারকলিপি দিয়েছেন, লাগাতার দরবার করেছেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। গত দু’বছর ধরে তাঁদের সমস্যা নিয়ে পুরসভার বোর্ড অধিবেশনে বলারও কেউ ছিলেন না। কারণ, বছর দু’আগেই মৃত্যু হয়েছে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁদের মূল সমস্যা পানীয় জল। ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। যশাইডি, রক্তা, হাতিনল, চুনগাড়িসব অঞ্চলেই পানীয় জলের সমস্যা লাগামছাড়া। জলের পাইপ আছে, কল আছে প্রচুর। কিন্তু জল পড়ে না।
স্থানীয় বাসিন্দা কিংশুক মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তাঁদের বহু দূর থেকে পানীয় জল জোগাড় করে আনতে হয়। হাতিনলের বাসিন্দারা আবার জানান, দামোদরের বালি খুঁড়ে পানীয় জল জোগাড় করেন তাঁরা। প্রায় গোটা বছরই তাঁদের জলের সমস্যায় দিন কাটাতে হয়। বরাকর লাগোয়া চুনগাড়ির বাসিন্দারাও জলসঙ্কটে জেরবার। সেখানকার বাসিন্দা রবিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, এ জন্য দায়ী পুর কর্তৃপক্ষই। একই অবস্থা রক্তা, যশাইডি গ্রামেও।
শুধু জল নয়, ক্ষোভ রয়েছে আবর্জনা সাফাই নিয়েও। যেখানে সেখানে পড়ে থাকে আবর্জনার স্তূপ, পুরসভার তরফে কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। গত নির্বাচনে এখানে জিতেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। বছর দেড়েক পরেই তিনি মারা যান। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতা ভবানী আচার্য অভিযোগ করেন, এলাকায় পুর পরিষেবার আবেদন জানিয়ে তাঁরা অনেক বার পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এই ওয়ার্ডে উন্নয়নের অভাবের কথা স্বীকার করেছেন কুলটির উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়। তিনি বলেন, “রক্তা, হাতিনল এলাকাগুলির আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। আমরা এ বার গুরুত্ব দিয়ে নজর দেব।”
রাত পোহালেই ভোট। ফল বেরোবে ২৫ নভেম্বর। তার পরে তাঁদের সমস্যা সত্যিই কতটা গুরুত্ব পায়, দেখার অপেক্ষায় পুরবাসী। |