জল জোগাড় করতে রাত কাবার।
নর্দমার জল উপচে পণ্ড উৎসব।
উপ-নির্বাচনের আগে দীর্ঘ দিন কাউন্সিলরের পদ খালি পড়ে থাকা আসানসোলের ১ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড সরগরম এ রকমই নানা সমস্যার অভিযোগ নিয়ে। আর উন্নয়ন নিয়ে এলাকাবাসীর এই ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে ময়দানে নেমে পড়েছে শাসক থেকে বিরোধী, সব পক্ষই। সকাল-সন্ধ্যা বাড়ি বাড়ি প্রচার, ছোট ছোট পথসভা করে সকলেই বোঝাচ্ছেন, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী অপর পক্ষই।
ওই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানীয় জল থেকে নিকাশি, রাস্তাঘাটা, ক্ষোভ সব কিছু নিয়েই। দু’টি ওয়ার্ডেই গত বার জিতেছিলেন আরএসপি-র প্রার্থীরা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই মাস আটেক। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড খালি প্রায় ২২ মাস। ফলে, দীর্ঘ সময় কার্যত অভিভাবকহীন এই দুই ওয়ার্ডে সমস্যার কথা জানানোর জন্য কাউকে সে ভাবে হাতের কাছে পাননি বাসিন্দারা। |
দূরের এলাকা থেকে জল বয়ে আনতে হয় ১ নম্বর ওয়ার্ডে। |
১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা পানীয় জল। এলাকার নিচুপাড়া, মুড়ি কারখানার আশপাশের এলাকা, মিলন সঙ্ঘ মাঠ লাগোয়া এলাকা ও ছিন্নমস্তা মন্দির লাগোয়া জায়গায় এই সমস্যা চরমে। প্রচণ্ড গরমে পানীয় জলের হাহাকার লেগে যায়। পুরসভার তরফে কিছু জলের পাইপলাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এলাকার বাসিন্দা বাবু শর্মা জানান, দিনে চার বালতি জল জোগাড় করতে তাঁদের হিমসিম খেতে হয়। তিনি বলেন, “ভোর রাত থেকে কলের তলায় বালতি পেতে রাখি। সারারাত জেগে কাটাতে হয় শুধু একটু জল জোগাড় করার জন্য।” বাসিন্দারা জানান, জলের জন্য পড়শিদের সঙ্গে ঝগড়াও বেধে যায়। এলাকার অপর বাসিন্দা গোপাল নামাত জানালেন, জল জোগাড় করে আনার জন্য সাইকেলে বালতি ঝুলিয়ে দু’কিমি দূরে যেতে হয়। শুধু জল নয়, জঞ্জাল সাফাই নিয়েও বাসিন্দাদের অভিযোগের শেষ নেই। ওয়ার্ডে যেখানে-সেখানে আবর্জনার স্তূপ। তা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে দুর্গন্ধ, মশামাছির উপদ্রবে টেকা দায়।
৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবার মূল সমস্যা নিকাশি। সেখানে নিমতলা এলাকার একটি কাঁচা নালা নিয়ে সমস্যার শেষ নেই এলাকাবাসীর। এই নালার জন্য এ বার শারোদৎসবের আনন্দও পণ্ড হয়ে গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের। এই অঞ্চলে প্রায় ৬০টি পরিবারের বাস। দুর্গাপুজোর অষ্টমীর রাত থেকে টানা তিন দিন প্রবল বৃষ্টির জেরে আশপাশের প্রায় সব ক’টি বাড়িতেই কাঁচানালার নোংরা জল ঢুকে গিয়েছিল। তা নামতে সময় লেগেছিল প্রায় ২৪ ঘণ্টা।
উৎসব ভুলে তখন দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়াই ছিল বাসিন্দাদের একমাত্র লক্ষ্য। এলাকার বাসিন্দা কমলাদেবী জানান, বর্ষায় নালার জল ঘরে ঢুকে যায়। এলাকায় টেকা যায় না। আখতার আলম নামে আর এক জন জানান, নানা কারখানা-সহ আশপাশের অঞ্চলের আবর্জনা যুক্ত জল এই নালা দিয়ে বয়ে যায়। অথচ পাকা করে নিয়মিত নিকাশির কোনও ব্যবস্থাই করছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সমস্যার কথা তাঁরা বহু বার পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। পুরসভার তরফে নানা মেয়র পারিষদ ও আধিকারিক এলাকা ঘুরে গেলেও কাজের কাজ হয়নি। |
নর্দমা পরিষ্কার হয় না ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে। |
এই দুই ওয়ার্ডে এ বারও বামফ্রন্টের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আরএসপি। দলের জেলা কমিটির নেতা অসিত বাগ অভিযোগ করেন, বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণের জন্যই এই দু’টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ভুগতে হচ্ছে। অসিতবাবু বলেন, “আমরা এই সমস্যার বিষয়গুলি নিয়ে এ বার সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি।” কংগ্রেসের প্রদেশ সম্পাদক আকাশ মুখোপাধ্যায় আবার দাবি করেন, তাঁরা গত সপ্তাহ পর্যন্ত পুরসভায় ক্ষমতাসীন জোটে থাকলেও তৃণমূল তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি। ফলে, নাগরিক সমস্যা মেটানোর কথা তাঁরা বারবার বললেও ফল হয়নি। আকাশবাবু বলেন, “আমরা অনুন্নয়নের এই ধারাবাহিক সমস্যা নিয়ে ভোটে প্রচার করছি। ভোটারদের সমর্থন পেলে সমাধান করিয়েই ছাড়ব।”
তবে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের এই বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের নেতা তথা পুরসভার বরো কমিটির চেয়ারম্যান প্রবাল বসু বলেন, “ওখানে কাউন্সিলররা কাজ করতে পারেননি। নাগরিকদের কথা ভেবে আমরাই সে সব কাজ করেছি। এ বার জিতে এসে সব সমস্যার সমাধান করব।” |