ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় পণ্য বোঝাই লরির রাখা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। মঙ্গলবার কুলটির নিয়ামতপুর এলাকায় লরির ধাক্কায় এক তরুণের মৃত্যুর পরে সেই ক্ষোভেই ফেটে পড়লেন বাসিন্দারা। বিক্ষোভ-অবরোধ হল রাস্তায়। যান চলাচল ব্যাহত হল জি টি রোডে। শেষে পুলিশ গিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ নিয়ামতপুরে সীতারামপুর স্টেশন রোডে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রাস্তার পাশে লরি থেকে পণ্য তোলানামার কাজ চলছিল তখন। নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি লরি জাভেদ খান (১৯) নামে এক তরুণকে ধাক্কা মারে। লরিটির ধাক্কায় অন্য একটি লরির উপরে গিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মৃত্যু হয় তাঁর। চালক ও খালাসিকে আটক করেন এলাকার লোকজন।
ঘটনার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। সীতারামপুর রোড ও জিটি রোডের সংযোগস্থলে পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের দাবি, যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় পুলিশ। প্রায় আধ ঘণ্টা জি টি রোডে যান চলাচল ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এলাকার বাসিন্দারাই লরিটির চালক, খালাসিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে। |
তখন চলছে অবরোধ-বিক্ষোভ। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র। |
নিয়ামতপুর-সীতারামপুর রোডে ব্যস্ত সময়ে পণ্য বোঝাই লরির যাতায়াত নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ অনেক দিনের। সে কারণে পুরসভা নির্দেশ জারি করেছিল, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনও পণ্য বোঝাই লরি এই রাস্তায় ঢুকবে না। কিন্তু পুরসভার সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পুরসভার এই নির্দেশ কার্যকরের ক্ষেত্রেও পুলিশ কোনও ভূমিকা নেয়নি বলে তাঁদের দাবি। এলাকার বাসিন্দারা এমনও অভিযোগ করেন, পুলিশ শুধু নিষ্ক্রিয়ই থাকছে না, যে সব ব্যবসায়ী ও লরি এই বেনিয়ম করছেন পুলিশ তাঁদের মদত দিচ্ছে।
এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ব্যস্ত এই রাস্তা দিয়ে সকাল ৯টা থেকে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কাছেই সীতারামপুর স্টেশন। রাস্তার পাশে একাধিক সরকারি অফিস রয়েছে। আছে একাধিক স্কুলও। দিনে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করেন। অথচ এই ভিড়ের মাঝেই একাধিক পণ্য বোঝাই লরি ঢুকে পড়ে। কার্যত রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েই পণ্য ওঠানামা হয়। ফলে, প্রতি দিন ব্যস্ত সময়ে যানজট হয়। ট্রেন ধরতে, স্কুলে সময়ে পৌঁছতে সমস্যায় পড়েন অনেকে। এ ছাড়া ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।
কুলটির উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায় বলেন, “আমরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই রাস্তায় পণ্য বোঝাই লরি ঢোকা নিষিদ্ধ করে অনেক আগেই নির্দেশ জারি করেছি। ব্যবসায়ীদেরও লরি ঢোকাতে নিষেধ করেছি।” তাঁরও অভিযোগ, “এর পরেও কেউ নির্দেশ মানতে চাইছেন না। পুলিশও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না।” বাচ্চুবাবু জানান, মঙ্গলবার পুরসভা থেকে ফের চিঠি দিয়ে পুলিশকে এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। নিয়ম যারা ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করেছেন। পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (ট্রাফিক) তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, পুলিশ ওই এলাকায় যথেষ্ট সক্রিয়। মঙ্গলবারের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তদন্ত চলছে। ওই এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তাঁর আশ্বাস। |