প্রশ্ন: ইতিহাসের পাঠ্যসূচিতে কোচবিহারের ইতিহাসকে আবশ্যক করা হল কেন?
উপাচার্য: এখনকার ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ের উপরে গবেষণায় জোর দিয়েছেন। এটা আমরা সর্বত্র লক্ষ করছি। তা থেকেই কোচবিহারের ইতিহাস পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত। তাতে ছাত্রছাত্রীরা সমৃদ্ধ হবেন। গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকবেন।
প্রশ্ন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে কলকাতার ইতিহাস নেই, কিংবা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও দিল্লির ইতিহাস আবশ্যক নয়। তা হলে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোচবিহারের ইতিহাস কেন?
উপাচার্য: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো করে চলছে। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তা নয়। কোচবিহার এক সময় আলাদা রাজ্য ছিল। এখানে রাজা ছিলেন। তাঁদের একটা ইতিহাস রয়েছে। এতদিন ধরে তা উপেক্ষিত ও অবহেলিত ছিল। সে কারণেই কোচবিহারের ইতিহাস পড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে কোচবিহার সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারে।
প্রশ্ন: কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে তো নানা বিতর্ক রয়েছে। পাঠ্যবই লিখছেন কে?
উপাচার্য: কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে অনেকেই লেখালিখি করেছেন। তার মধ্যে ইতিহাসের তথ্য ও উপাদানের আকর হিসেবে চারটি বইকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে যে সব মতামত রয়েছে, তার সবই ছাত্রছাত্রীদের জানানো হবে। যাতে তারপরে ছাত্রছাত্রীরাই নিজেদের মতো করে তাদের মত গঠন করতে পারে।
প্রশ্ন: এই বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে জেলায় কোনও পরিবর্তন আনবে বলে মনে হয়?
উপাচার্য: আমি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি ২৭ বছর ধরে যুক্ত রয়েছি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ওই অঞ্চলের পরিবর্তন দেখেছি। এটা সকলেই জানেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে একটা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে সে রকমই স্বপ্ন দেখি। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। উচ্চশিক্ষা পেতে কোচবিহারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হবে। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৮০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক ও অশিকক্ষক কর্মচারী মিলিয়ে রয়েছেন প্রায় ১৫০০ জন। একটা বাজার গড়ে উঠেছে শিবমন্দিরে। তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা জিনিস সরবরাহ করার কাজ করেন অনেকে। কোচবিহার বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে এমনই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি, এই জেলায় অনেকে ভাল ছাত্র হওয়ার পরেও বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এবারে তা বন্ধ হবে। একটা ছোট ঘটনা বলি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চায়ের দোকান রয়েছে বলা যেতে পারে নিরক্ষর এমন দু’জনের ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এক রিকশা চালকের ছেলে নেট দিয়ে চাকরি করছে কোচবিহারে। কোচবিহারেও তাই হবে। কোচবিহারের সংস্কৃতিও আরও সমৃদ্ধ হবে।
প্রশ্ন: ফরেস্ট ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা চালুর কথা ভেবেছেন? কেন? তাতে কী উপকার হবে কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের ছেলেমেয়েদের? কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ রয়েছে?
উপাচার্য: উত্তরবঙ্গে প্রচুর বন রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গেও বন রয়েছে। সেখানে কাজের সুযোগ আছে। আমরা দেখি সরকার চাকরিতে নেওয়ার পরে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়। তার বদলে আমরা চাইব ডিপ্লোমা করা ছাত্রছাত্রীদের সরকার নিয়োগ করুক। সে ব্যাপারে বনমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যায় টি ম্যানেজমেন্ট পড়িয়ে সফল হয়েছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের ১০০ শতাংশ প্লেসমেন্ট হচ্ছে। এখানেও সেরকম হবে বলে আশা করছি।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় কতদিনের মধ্যে পুরুমাত্রায় কাজ করা শুরু করবে?
উপাচার্য: আশা করা যায় দেড় বছরের মধ্যে একটা পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। ২০ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। ১০টি বিভাগের জন্য ২০টি ক্লাসরুম, ৪টি পরীক্ষার হল, ৫টি ল্যাবরেটরি, ১টি লাইব্রেরি, ২টি রিডিং রুম, প্রশাসনিক ব্লক, উপাচার্যের অফিস, ২টি কমন রুম, শৌচাগার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হবে।
প্রশ্ন: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি প্রথম উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?
উপাচার্য: অস্থায়ী পরিকাঠামোতে অন্তত দেড় বছর থাকতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবনকে সাজা হচ্ছে। এখানে অফিস ভবন ছাড়া প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য আলাদা ক্লাস রুম, লাইব্রেরি, রিডিং রুম করা হয়েছে। উচ্চমানের শিক্ষার জন্য কো-অর্ডিনেটর হিসেবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় জন অধ্যাপককে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, স্থায়ী ভবনের কাজের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষা দফতর দ্রুততার সঙ্গে সব কাজ করেছে। স্থায়ী ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী দু’দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় দুর্বল। উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার ছাড়া কোনও পদ এখনও পায়নি। তা হলে কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এগোবে? আর ছ’মাস পরে পরীক্ষা কী ভাবে হবে?
উপাচার্য: ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সেদিকটা ভেবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। পরীক্ষার কথা ভেবে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি হিসেবে অস্থায়ী ভাবে একজনকে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক পদে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে অস্থায়ী ভাবে কয়েকজনকে নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই দুই পদের জন্য স্থায়ী কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর ক্লাসের জন্য আনন্দগোপাল ঘোষ, গিরীন্দ্রনাথ রায়ের মতো ছয় জন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করবেন। তাঁরা বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষকদের নিয়ে এসে ক্লাস করাবেন। সব অনুমতি সাপেক্ষে পারিশ্রমিক দিয়ে করানো হবে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয় পড়ানো হচ্ছে? আর কোনও বিষয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ভাবছেন? আপনি যে বিষয়ের অধ্যাপক, সেই অর্থনীতি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কেন?
উপাচার্য: আপাতত ছয়টি বিষয়—বাংলা, ইংরেজি, ভুগোল, ইতিহাস, দর্শন, হিন্দি পড়ানো হচ্ছে। পরে রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, অর্থনীতি সহ বেশ কয়েকটি বিষয় চালুর পরিকল্পনা আছে। ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট সহ দু’টি বিষয়ে ডিপ্লোমা চালু করা হবে।
প্রশ্ন: কোচবিহারে উচ্চশিক্ষার বই মিলবে এমন ভাল লাইব্রেরি নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা বই পাবে কোথা থেকে?
উপাচার্য: এটা একটা সমস্যা। সমাধানের জন্য উচ্চ মানের লাইব্রেরি করা হচ্ছে। |