রাজ্যের ডি এ বকেয়া নেই, বিবৃতি অর্থমন্ত্রীর
রাজ্য সরকারি কর্মীদের কোনও মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বকেয়া নেই বলে বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের থেকে ৩৮ শতাংশ কম ডিএ পাচ্ছেন। অমিতবাবুর এই বক্তব্যের পরে কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ-র ফারাককে ‘বকেয়া’ বলে গণ্য করা হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সিপিএম বিধায়ক বাসুদেব খাঁ অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের কত শতাংশ ডিএ বকেয়া রয়েছে? বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এর কোনও জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। পরে প্রশ্নকর্তা বিধায়কের কাছে অর্থমন্ত্রীর যে লিখিত উত্তর পৌঁছয়, তাতে বলা হয়েছে: ‘রাজ্য সরকারি কর্মীদের কোনও মহার্ঘ ভাতা বকেয়া নেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মচারীদের যে মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে, তা রাজ্যের তুলনায় ৩৮% অধিক’। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় কর্মীরা এখন ৯০% হারে ডি এ পান। রাজ্যের কর্মীরা পান ৫২%।
অর্থমন্ত্রীর জবাব দুপুরের মধ্যেই বিধানসভা ভবন, নবান্ন, মহাকরণ হয়ে জেলা সদরগুলিতে ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিতর্কের কারণ: কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ডিএ-র ব্যবধানকে এত কাল বকেয়া হিসেবেই ধরা হতো। এবং তা ধরে নিয়েই বকেয়া ডিএ-র দাবিতে সরব হতো রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি। এত দিন সেই বকেয়া ধারণার বিরোধিতাও করেননি কোনও মন্ত্রী বা আমলা।
কোন যুক্তিতে এই ফারাককে বকেয়া বলে গণ্য করছেন না অর্থমন্ত্রী?
সরকারি কর্তাদের ব্যাখ্যা, কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেবে, রাজ্যকে সেই হারই মেনে নিতে হবে এমন কোনও বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা নেই। এমনকী, এটা প্রথাও নয়। কেন্দ্র চলে কেন্দ্রের নিয়মে। রাজ্য চলে রাজ্যের নিয়মে। সেই জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের আলাদা বেতন কমিশন তৈরি হয়। রাজ্যের বেতন কমিশনও কখনও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার কথা বলে না। কেন্দ্র বছরে দু’টি নির্দিষ্ট সময়ে, জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে, ডিএ দেয়। দু’একটি রাজ্য সেই প্রথা অনুসরণের চেষ্টা করলেও অধিকাংশ রাজ্য কিন্তু যখন যেমন পারে, সেই মতো ভাতার ব্যবস্থা করে। সেই কারণেই এ ক্ষেত্রে বকেয়া বলে কিছু হয় না।
অর্থ দফতরের আধিকারিকদের একটা অংশ অবশ্য বলছেন, দ্বিতীয় বামফ্রন্ট আমলেই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যথাসম্ভব সঙ্গতি রেখে ডিএ দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার পর থেকে সেই প্রথাই চলে আসছিল। এ দিন অর্থমন্ত্রীর বিবৃতির ফলে গোটা বিষয়টি ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
আর কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া রাজ্যের দায় নয়, এই সরকারি ব্যাখার সঙ্গেও সহমত নন বাম জমানার মন্ত্রীরা। এক বর্ষীয়ান প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, “এই ব্যাখ্যার একেবারে গোড়ায় গলদ! মূল্যবৃদ্ধির সূচককে ধরে সরকারি কর্মীদের ক্ষতিপূরণের যে ব্যবস্থা হয়, তারই নাম ডিএ। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কোনও ডিএ বকেয়া নেই মানে প্রকারান্তরে এটাই বলা যে, এই সময়ের মধ্যে রাজ্যে মূল্যবৃ্দ্ধি হয়নি!”
সরকারের একটি মহলেরও মতে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো ঠিক করতে প্রতি ১০ বছর অন্তর বেতন কমিশন বসে। তারা যে সুপারিশ করে, সাধারণ ভাবে তা মেনে নেয় দুই সরকার। এর ভিত্তিতে রাজ্যগুলিতে তৈরি হয় ‘রোপা রুল’। কিন্তু দু’টি বেতন কমিশন গঠনের মধ্যবর্তী সময়ে যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়, তাতে অবশ্যম্ভাবী রূপে টাকার দাম কমে। টাকার দাম কত কমল, তা বোঝা যায় ‘অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স’-এর মাধ্যমে। এর ভিত্তিতেই বাড়তি খরচ মোকাবিলায় ডিএ দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য। এ রাজ্যে গঠিত পঞ্চম বেতন কমিশন ডিএ-র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিখেছে, এটা সরকারি কর্মীদের কোনও অতিরিক্ত পাইয়ে দেওয়া নয়। বরং, এটা তাঁদের ক্ষতি সামলাতে সাহায্য করা।
ওই মহলের মতে, প্রশ্ন হল এই ‘অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স’ অনুযায়ী কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ পাচ্ছেন কি না। দেখা যাচ্ছে, যে সূচকের ভিত্তিতে কেন্দ্র ও একাধিক রাজ্য ৯০% বা তার কাছাকাছি ডিএ দিচ্ছে, তার চেয়ে ৩৮% কম দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অর্থাৎ এই পরিমাণ ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের পাওনা। সাধারণ ভাবে যা বকেয়া বলেই পরিচিত।
তত্ত্বগত ভাবে সেই ধারণা খারিজ করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে না-পারার কারণ হিসেবে আর্থিক অসচ্ছলতাকেই তুলে ধরছেন অর্থ দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার সময়ে বামফ্রন্ট ২৩% ডিএ বকেয়া রেখে গিয়েছিল। নতুন সরকার দু’বছরে তার ১৭% মিটিয়েছে। বাকি ৬% দু-এক মাসের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, এই ১৭% ডিএ দিতেই বছরে ৫১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এখন কেন্দ্রের সঙ্গে সমতা রাখতে এর পরে যদি ৩৮% ডিএ দিতে হয়, তা হলে বছরে আরও ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এই টাকা খরচের মতো অবস্থা রাজ্য সরকারের নেই। তাই ডিএ বাড়লে সেই বাড়তি টাকার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে অর্থ কমিশনের কাছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.