খুনের ঘটনা ঘটে রাত ১১টা নাগাদ, অথচ এফআইআর-এ লেখা সকাল ১১টা। এমনকী মৃতের নামেও রয়েছে ভুল। মঙ্গলবার থমকে যাওয়া তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ হত্যা মামলার শুনানি শুরু হতেই উঠে এল এমন তথ্য। মঙ্গলবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজ শুভব্রত চৌধুরীর আদালতে ওই মামলার দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
গত সেপ্টেম্বরে মামলাটির প্রথম পর্বের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগকারী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ ছয় সাক্ষী আদালতে এজাহার দেওয়ায় শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সাক্ষীদের জেরা। ২০১২ সালে জানুয়ারিতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে গুলিতে খুন হন পূর্বস্থলীর তৃণমূল অঞ্চল সহ-সভাপতি সজল ঘোষ। ওই রাতেই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় পূর্বস্থলীর বাসিন্দা প্রদীপ সাহাকে। প্রদীপবাবু পারুলিয়া কুলকামিনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সিপিএমের পূর্বস্থলী লোকাল কমিটির সম্পাদক। মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার মধ্যে লোকনাথ দেবনাথকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। বাকি চার জন জল জামিনে আছেন। একমাত্র প্রদীপ সাহাই ধরা পড়ার পর থেকে জেলে রয়েছেন। ৮ অগস্ট ওই মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ দিন দুপুর ২টোয় পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়কে জেরা শুরু করেন প্রদীপ সাহার আইনজীবী প্রতিম সিংহরায়। জানতে চান, সেই রাতে সুরতহাল রিপোর্টে কে কে স্বাক্ষর করেছিলেন। পঙ্কজবাবু বলেন, “তিনি, চিকিৎসক শৌভিক আইচ-সহ কয়েকজন করেছিলেন। তবে অন্যদের সই করতে দেখেননি তিনি।” প্রতিমবাবু এরপর এফআইআর-এর সময় জিজ্ঞেস করলে পঙ্কজবাবু বলেন, “রাত ১২টা ৪০ নাগাদ।” প্রতিমবাবু এফআইআর-এর একটি কপি দেখিয়ে বলেন, “এফআইআর-এ লেখা রয়েছে সকাল ১১টার সময় সজল ঘোষ গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় সজল দেবনাথের। পঙ্কজবাবু এটা দেখেই সই করেছিলেন?” পঙ্কজবাবুর জবাব, “এফআইআর আমরা লিখিনি।” পরের প্রশ্ন, “আপনারা শিক্ষিত লোক, প্রত্যক্ষদর্শী থাকা সত্ত্বেও অন্য লোককে দিয়ে এফআইআর লেখালেন? কেন এমন লোককে দিয়ে লেখালেন যিনি ঘটনাস্থলে ছিলেনই না?” পঙ্কজবাবুর উত্তর, “তদন্তকারী অফিসার লিখেছেন। তিনি হয়তো নাম ভুল করেছেন।” এখানে আবার আপত্তি জানান সরকারি কৌঁসুলি। তিনি বলেন, “এফআইআর তদন্তকারী অফিসারের লেখা। সেখানে কিছু গোলমাল থাকলে তার জন্য পঙ্কজবাবু কী করবেন।”
বুধবার আবার সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। |