|
|
|
|
অসমাপ্ত উড়ালপুল নিয়েই শেষ প্রচারে তরজা ঝাড়গ্রামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
ভোট-প্রচারের শেষ লগ্নে অসমাপ্ত উড়ালপুলকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠল অরণ্যশহর। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেদের প্রচারসভায় ঘুরে-ফিরে এল অসম্পূর্ণ এই উড়ালপুল।
এ দিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরে প্রথম প্রচারসভাটি করে কংগ্রেস। শহরের জুবিলি বাজার সংলগ্ন মূল রাস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের কাছে সভাটির আয়োজন করা হয়েছিল। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ খান, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। প্রদীপবাবু বলেন, “গত সাড়ে তিন দশক আপনারা বামেদের দেখেছেন। গত আড়াই বছরে তৃণমূলের সরকারকেও দেখলেন। ঝাড়গ্রাম পুরসভা আমাদের হাতে তুলে দিন, আপনাদের বহু প্রতীক্ষিত উড়ালপুলের কাজ শেষ করার জন্য আমরা ইতিবাচক পদক্ষেপ করব। উড়ালপুলের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অনুরোধ করব।” |
|
অসম্পূর্ণ সেই উড়ালপুল। —ফাইল চিত্র। |
২০১১ সালের অগস্টে ঝাড়গ্রামে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। এখনও তা শেষ না হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন বিধায়ক মানস ভূঁইয়া। মানসবাবু বলেন, “রাজ্য পূর্ত দফতরের তৈরি করা নকশাতেই গণ্ডগোল রয়েছে। এর মাশুল গুণছেন ঝাড়গ্রাম পুরবাসী।” মানসবাবুর বক্তব্য, “রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে দশ মিনিটের একটা বৈঠক করলেই তো সমস্যাটা মিটে যেত। কিন্তু তা করা হয়নি।” তিনি জানিয়ে দেন, উড়ালপুলের কাজ শেষ করার জন্য রেলমন্ত্রক সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। প্রদীপবাবু ও মানসবাবু দু’জনেই স্মরণ করিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন ও শান্তি ফেরানোর যে কৃতিত্ব দাবি করছেন, তা কেন্দ্রেরই দান। জঙ্গলমহলে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর যাবতীয় প্রকল্প ও বরাদ্দকৃত পুরো টাকাটাই কেন্দ্রের।
সন্ধ্যায় শহরের বেনাগেড়িয়া শীতলা মন্দির এলাকায় এবং কদমকাননে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে দু’টি প্রচার সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। উড়ালপুলের প্রসঙ্গ তুলে মুকুলবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ঝাড়গ্রামে উড়ালপুল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পরে (২০১১ সালের ১ অগস্ট) উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু আমরা কেন্দ্র সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরে কাজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য চিন্তার কিছু নেই। কেন্দ্র সরকারের মেয়াদ আর বড়জোর তিন মাস।” উড়ালপুলের কাজ শেষ করার ব্যাপারে অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস দেননি মুকুলবাবু। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিন মাস পরে কেন্দ্রের নতুন যে সরকার হবে, তার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম পুরসভাকে একটি বারের জন্য তৃণমূলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য করজোড়ে অনুরোধ করে মুকুলবাবু বলেন, “পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আমরা এলে দু’বছরের মধ্যে কাজ করে দেখিয়ে দেব। অরণ্যশহরের উন্নয়ন করতে আমরা ব্যর্থ হলে তখন আমাদের প্রত্যাখ্যান করবেন। কিন্তু একটি বার আমাদের সুযোগ দিন।” |
শেষবেলা প্রচারে কংগ্রেস। |
তৃণমূল নেতারা। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
এদিনই সন্ধ্যায় আবার পূর্বাশা মোড়ে প্রচারসভা করে বামেরা। সেখানে সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক তথা পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অভিযোগ করেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আভ্যন্তরীণ গোলমালের জন্যই উড়ালপুলের কাজ বন্ধ রয়েছে। রেলমন্ত্রক তৃণমূলের হাতে থাকার সময় ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা উড়ালপুলের কাজ পর্যবেক্ষণ করতেন। রেলমন্ত্রকটি তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে সুকুমারবাবু উড়ালপুলের বিষয়ে আর কোনও খোঁজখবরই করেন না।” প্রদীপবাবু বলেন, “উড়ালপুল তৈরির জন্য দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের প্রধান রাস্তাটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। এর ফলে বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের জন্য শহরের যে পরিমাণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলি সংস্কারের জন্য ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তা সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করেনি রাজ্য। গত দু’বছর ধরে চরম দুর্ভোগ সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন শহরবাসী।” |
|
|
|
|
|