শৌচাগার দিবস
প্রচারই সার, অর্ধেক বাড়িতে নেই শৌচাগার
নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটা করে শৌচাগার দিবস পালিত হয়, আয়োজন করা হয় নির্মল সপ্তাহের। খাতায়কলমে উঠে আসা পরিসংখ্যান থেকে নির্মল বিদ্যালয়, নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরস্কারও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তব ছবিটা কি আদৌ এতটা ইতিবাচক? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে অন্তত নয়।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক শৌচাগার দিবসে জেলা জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই উপলক্ষে চারটি মহকুমায় চারটি ট্যাবলো বেরিয়েছে। পোস্টারে-স্লোগানে-গানে চলছে শৌচাগার ব্যবহারের সুফল নিয়ে প্রচার। এ ধরনের প্রচার আগেও হয়েছে। কিন্তু তারপরেও দেখা যাচ্ছে, জেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি। এর মধ্যে ৯৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতি (মোহনপুর) নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ চলতি আর্থিক বছরের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ‘নির্মল’ পঞ্চায়েত সমিতি মোহনপুরেই ৬৬৮১টি বাড়িতে শৌচাগার নেই! আর সামগ্রিক হিসেবে জেলার অর্ধেক বাড়ি এখনও শৌচাগারহীন। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় মোট পরিবারের সংখ্যা ১১,৪৬,৬২২টি। এর মধ্যে ৫,৬১,৮০৫টি পরিবারেই শৌচাগার নেই। ওই সব পরিবারে প্রাতঃকৃত্য সারতে মাঠঘাট, রেললাইনের ধার বা ঝোপ-জঙ্গলই ভরসা।
শৌচাগার দিবসে জেলা পরিষদের ট্যাবলো। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সচেতনতা প্রচারে। তারই অঙ্গ শৌচাগার দিবসে ট্যাবলো। এ দিন ট্যাবলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা সভাধিপতি উত্তর সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী। ট্যাবলোয় প্রচার করা হচ্ছে শৌচাগার ব্যবহারের সুফল। বাজানো হচ্ছে এই সংক্রান্ত গান। পোস্টারে জানানো হচ্ছে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা হওয়ার শর্ত। জেলা সভাধিপতি উত্তরাদেবী বলেন, ‘‘আশা করি, এই প্রচারে মানুষ ইতিবাচক ভাবে সাড়া দেবেন।” আর অতিরিক্ত জেলাশাসকের আশ্বাস, “চলতি আর্থিক বছরেই শৌচাগারহীন ২৫ শতাংশ বাড়িতে আমরা শৌচাগার নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি।”
শুধু পরিবার নয়, জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শৌচাগার নেই। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ১৬৪৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৩৩টি প্রতিষ্ঠান শৌচাগারহীন! অনেক জায়গায় শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না। তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। চাবি থাকে শিক্ষকদের কাছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহার থেকে বঞ্চিতই থাকে।
এই পরিস্থিতি বদলাতে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির পাশাপাশি শৌচাগার ব্যবহার হচ্ছে কিনা, নজরদারি চালাবে প্রশাসন। যদি কোনও স্কুলে শৌচাগার তালাবন্ধ রাখার প্রমাণ মেলে, তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে প্রশাসন। আর শৌচাগারহীন বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে ‘স্বচ্ছতা দূত’। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেবেন। কী ভাবে সরকারি সাহায্যে শৌচাগার তৈরি করা যাবে, তার হদিস দেবেন। এ জন্য কেউ চাইলে সরাসরি বিডিও-র কাছেও আবেদন করতে পারেন।
প্রতিটি শৌচাগারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫০০ টাকা। এর মধ্যে ৪৬০০ টাকা দেবে সরকার। ৯০০ টাকা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। এই প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মধ্যে জেলার প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে।
প্রচারেই পরিকল্পনা আটকে থাকবে না তো? সময়ে মিলবে জবাব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.