গাছ কাটতে আপত্তি বন দফতরের
সীমানা নির্ধারণ না হলে গোলমালের
শঙ্কা, চিঠি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে
জাতীয় সড়কের পাশের জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া না হলে প্রস্তাবিত ইস্ট ওয়েস্ট করিডরের জন্য গাছ কাটা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল বন দফতর। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বন উন্নয়ন নিগমের কার্শিয়াং ডিভিশনের তরফে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষকে (এনএইচ) চিঠি দিয়ে তা জানানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় রাজ্য সরকারের সচিব পর্যায়ে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ, বন দফতর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে বন দফতরকে প্রস্তাবিত ফোর লেনের রাস্তার পাশে ৬০ ফুট অবধি গাছ ধীরে ধীরে কেটে দেওয়ার অনুরোধ করে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার শিলিগুড়ির ঘোষপুকুর থেকে কোচবিহারের সলসলাবাড়ি বাড়ি পর্যন্ত ১৫৫ কিলোমিটার চার লেনের রাস্তা তৈরির জন্য দুই পাশের গাছ কাটার দায়িত্ব দেয় রাজ্য বন উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষকে। গত সোমবার ঘোষপুকুর থেকে জলপাইগুড়ি অবধি রাস্তা ধারে কত গাছ রয়েছে তার সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সমীক্ষক দলে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ছাড়াও বন দফতরের কর্মীরাও রয়েছেন।
প্রস্তাবিত ইস্ট ওয়েস্ট করিডরের আওতাভুক্ত ৩১-ডি জাতীয়
সড়কের পাশের এই সব গাছই কাটা হবে। —নিজস্ব চিত্র।
তাতে বন দফতরের অফিসারেরা জানতে পারেন, বহু জায়গায় এখনও জমি অধিগ্রহণই হয়নি। অনেক জায়গাতেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে বন দফতর মহাসড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, গাছ কাটতে গেলে তা সরকারি না বেসরকারি মালিকাধীন জমিতে রয়েছে তা জানা প্রয়োজন। পাশাপাশি, আঁকাবাকা রাস্তার দুই ধারে ঠিক কতটা অবধি গাছ কাটা হবে তা সীমানা নির্ধারণ না থাকলে সম্ভব নয়। এতে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে বন কর্মীদের। প্রথম দফায় শুধুমাত্র ঘোষপুকুর থেকে দশদরগা অবধি প্রায় ৫ হাজার ছোট বড় গাছ কাটতে হবে নিগমের কার্শিয়াং ডিভিশনকে। এর পরে নিগমের জলপাইগুড়ি এবং বক্সা ডিভিশন ধাপে ধাপে রাস্তার ধারের গাছ কাটবে।
বন উন্নয়ন নিগমের জেনারেল ম্যানেজার (নর্থ) এলজি লেপচা বলেন, “আমরা কেবলমাত্র গাছ কাটব। নতুন গাছ লাগাব। তবে যতক্ষণ ওঁরা আমাদের নির্ধারিত জমি বা সীমানার কথা জানাচ্ছেন না ততক্ষণ গাছ কাটা সম্ভব নয়। ওঁদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও তা জানিয়ে দিয়েছি।”
মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের শিলিগুড়ির প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আরকে চৌধুরী অবশ্য বলেন, “সব জায়গায় এখনও অধিগ্রহণ হয়নি। অনেক জায়গা রাজ্য সরকার আমাদের হাতে জমি তুলে দেয়নি। গোটাটাই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। রাস্তার জন্য গাছ কাটতেই হবে। বন দফতরের সঙ্গে সে কথাই হয়েছে।” তিনি জানান, আপাতত ঠিক করা হয়েছে, যেখানে যেখানে অধিগ্রহণ করা তার সীমানা এবার বন দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ে যেখানে গাছ কাটা হবে সেটি রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির আওতাধীন। সমিতির সিপিএমের সভাপতি সত্যেন মণ্ডল বলেন, “সীমানা ঠিক না করে বন দফতর গাছ কাটতে পারবে না। এতে এলাকায় আইন শৃঙ্খলার সমস্যায় হতে পারে। কারণ পুরো জমি এখনও মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ হাতে পায়নি।” সমিতির সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাশিস প্রামাণিক বলেন, “ফুলবাড়ি থেকে মহানন্দা ব্যারেজ অবধি পরিস্থিতি খুব খারাপ। রোজ যানজট হচ্ছে। ফোর লেন দ্রুত দরকার। তবে এখনও পুরোপুরি জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তাই সব এলাকায় গাছ কাটা এখন সম্ভব নয়।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে ১২-এ রাজ্য সড়ককে ৩১-ডি জাতীয় সড়কে পরিবর্তন করা হয়। গুজরাতের পোরবন্দর থেকে অসমের শিলচর অবধি প্রস্তাবিত ইস্ট ওয়েস্ট করিডরে এই জাতীয় সড়টি রয়েছে। বাম সরকারের আমলে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর-সহ নানা সমস্যার কারণে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। ফোরলেনের জন্য ৩১-ডি জাতীয় সড়কের দুই পাশে প্রায় ১৪০০ একর জমি প্রয়োজন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী হয়। দফায় দফায় বৈঠকের পর সরকার অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। সম্প্রতি ধূপগুড়ি-ফালাকাটা এলাকা ছাড়া বাকি জায়গায় সমস্যা মিটতে শুরু করেছে। বিঘা প্রতি ১০-১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই এখনও জমি হস্তান্তর হয়ে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি। হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ২০-২৫ শতাংশের মত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.