শ্মশানে দেহ এলেই স্কুলে ছুটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
স্কুলের গায়েই খোলা শ্মশান। দেহ এলেই আতঙ্ক। কেননা, জানলা-দরজা দিয়ে ঢুকে পড়বে ধোঁয়া, ছাই, দুর্গন্ধ। তাই দাহকাজ শুরু হলেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় স্কুল।
বছরে পর বছর এ ভাবেই চলছে উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। অবশ্য খোলা শ্মশানের জন্য দুর্ভোগ শুধু এই স্কুলেই নয়, উলুবেড়িয়া পুর এলাকার নানা জায়গাতেই সমস্যাটা একই রকম। কেননা, এখনও এই পুরসভায় তৈরি হয়নি কোনও বৈদ্যুতিক চুল্লি।
এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির জন্য পাঁচ বছর আগে অবশ্য পুরসভা উদ্যোগী হয়েছিল। স্থান নির্বাচন হয়েছিল। টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, এখনও এই পুর এলাকায় খোলা শ্মশানেই চলছে দাহকাজ। এর ফলে, পরিবেশ দূষণ হলেও পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ তুলছেন বহু গ্রামবাসী। তাঁরা অবিলম্বে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লিরও দাবি তুলেছেন। তা হলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মত গ্রামের মানুষের। |
এখানেই হয় সৎকার। পিছনে চলে স্কুল। ছবি: সুব্রত জানা। |
উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের নাজিমা খান সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আগের পুরবোর্ডের ওই প্রকল্পে কোনও তহবিল ছিল না। আমরা চেঙ্গাইলের চককাশীতে নতুন জায়গা দেখেছি। নতুন তহবিল পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উলুবেড়িয়া পুরসভার মোট ওয়ার্ড ২৯টি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে অনেকগুলি গ্রাম। প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে খোলা শ্মশান। শ্মশানগুলির কোনওটি খালের কাছে, কোথাও গঙ্গার পাড়ে, কোনওটা জনবসতির মধ্যে, আবার কোথাও স্কুলের পাশেই। যখন মৃতদেহ দাহ করা হয়, তখন নানা ভাবে পরিবেশ দূষিত হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
যদুরবেড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে শ্মশান। স্কুলের সভাপতি সুফল সিংহরায় বলেন, “স্কুল চলাকালীন শ্মশানে দাহকাজ হলে ধোঁয়া, ছাই স্কুলে ঢোকে। তখন স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে আমরা বাধ্য হই। পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকলে এই সমস্যা হত না।” বাহিরতফা শ্মশানটির উল্টো দিকেই মাঝেরআটি এলাকা।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, শ্মশানে দাহকাজ হলেই তাঁরা ধোঁয়া এবং দুর্গন্ধের জন্য দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ দেহগুলি দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় জগদীশপুরের শতমুখী শ্মশানে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেহগুলি অর্ধদগ্ধ অবস্থাতেই নদীর চরে পুঁতে ফেলা হয়। জোয়ারের সময়ে মাটি ধুয়ে যাওয়ায় দেহগুলি বেরিয়ে আসে। এর ফলে গঙ্গা দূষিত হচ্ছে। দৃশ্যদূষণও ঘটছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে সিপিএম পরিচালিত পুরবোর্ড একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি বসাতে উদ্যোগী হয়।
কথা ছিল, জায়গা নির্বাচন করবে পুরসভা, কাজটি করবে কেএমডিএ। এর জন্য মোট ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করে কেএমডিএ। পুরসভার পক্ষ থেকে পুরনো হাসপাতালের কাছে স্থান নির্বাচন করা হয়। কাজটি করার জন্য কেএমডিএ টেন্ডারও করে। কিন্তু, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বাধায় কাজটি ভেস্তে যায়। ২০১০ সালে কিছু দিনের জন্য পুরসভার ক্ষমতা পায় কংগ্রেস। তখনও ওই বৈদ্যুতিক চুল্লির প্রকল্পটির আর বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।
পুরসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নাসিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, “আমাদের সময়ে ওই চুল্লির ব্যাপারে অনেকটাই এগোনো গিয়েছিল। কিন্তু পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সময়ের অভাবে কাজ শেষ করা যায়নি।”
বামফ্রন্টের পরে কংগ্রেসের দখলে যখন পুরসভা ছিল, তখন পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “আমিই প্রথম উলুূবেড়িয়া পুরনো হাসপাতালের মাঠে সরকারি জায়গায় বৈদ্যুতিক চুল্লি করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।” তাঁর আক্ষেপ, কিছু লোকজনের বাধায় ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।”
বস্তুত, কংগ্রেসের নেতৃত্বেই পুরনো হাসপাতালের কাছে বৈদ্যুতিক চুল্লির বিরোধিতা করেছিলেন কিছু মানুষ। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা রিভু সান্যালের দাবি, “স্থানীয় বাসিন্দারা বৈদ্যুতিক চুল্লির বিরুদ্ধে নন। কিন্তু যে এলাকায় তা করতে চাওয়া হয়েছিল তা ঘনবসতিপূর্ণ। দূষণের আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারাই এর প্রতিরোধ করেন।”
এ বার নতুন ভাবে শ্মশানের জায়গা নির্বাচন করার পরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড কবে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করতে পারে, সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা শুরু করেছেন পুর এলাকার বাসিন্দারা। |